জাসদ ছেড়ে আ. লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনলেন ড. আনোয়ার হোসেন
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলটির দলীয় আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন।
সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নেত্রকোনা-৫ আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
মনোনয়ন ফরম নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আনোয়ার হোসেন নিজেই। একই সঙ্গে তিনি জানান জাসদ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন।
জাসদের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হলেন আনোয়ার হোসেন বড়ভাই মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের। ভাইয়ের সঙ্গে জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন ড. আনোয়ার হোসেন। এরপর শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হলেও সংগঠনটির সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ গত ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাসদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. আনোয়ার হোসেন। সেখানে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসাবে রাখা হয় আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। বিষয়টি আমি স্থায়ী কমিটির সভায় জানিয়েছি। আমাদের পূর্বধলায় (নেত্রকোনা-৫ আসন) আমার ছোট ভাই বেলাল (ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল) তিনবারের সংসদ সদস্য। সে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় এখন নির্বাচন করতে পারছে না।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ, সেটা রাজনীতিবিদ ছাড়াও অনেকেই যোগাযোগ করছে। কারণ বেলালের অনুপস্থিতি প্রায় এক বছরের মত। সেখানে আওয়ামী লীগের যে অন্যান্য অংশ রয়েছে তাদের প্রতি মানুষের তেমন আস্থাও নেই। এতে মানুষ নেতা শূন্য হয়ে পড়েছে।’
তাঁর পরিবারে প্রতি পূর্বধলার মানুষের চাওয়া পাওয়া রয়েছে বলে জানান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এলাকায় আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল না। কিন্তু ভাইতো আছে। মানুষজন আমাকে চিনেন। বিশেষ করে ১ / ১১ সময়ে আমার ভূমিকা, জাবির উপাচার্য, মুক্তিযোদ্ধা, সাহসী লোক হিসাবে সংকটে এগিয়ে আসে সেসব কারণে।’
নির্বাচন করার চিন্তা ছিল না বলে উল্লেখ করে ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশে একটা বিরাট সংকট তৈরি হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্হিশক্তি যুক্ত হয়ে গেছে এবং আছে। সেখানে ষড়যন্ত্র হচ্ছে নানা রকম। আমি শেখ হাসিনাকে দেশের কান্ডারি মনে করি, কোনো বিকল্প দেখি না। আমি অবসরের পরে জাসদে যোগ দিলেও সব সময় আমার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এখন আমার দেশ বিশাল সংকটে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য চেষ্টা হচ্ছে নানাভাবে, সে সময় তাঁর পাশে আমার থাকা দরকার। খুব চিন্তাভাবনা করেই এটা করেছি।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে অবস্থা। আমরা জাসদ কিংবা ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছি, কিন্তু জনগণের মধ্যে সেভাবে আস্থাটা তৈরি হয়নি। বরং দলগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের জোটে আছে। এ ক্ষেত্রে জাসদ থেকে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন নেওয়া যেত না এমন এক প্রশ্নে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওইটা নেওয়াটা কঠিন ছিল। কারণ ওখানে (পূর্বধলা) জাসদের সাংগঠনিক কাঠামো সেরকম নেই। ওখানেতো জাসদের রাজনীতি কেউ করত না। আমার ভাই আওয়ামী লীগ করে। আমিও রাজনীতিতে তেমন ছিলাম না। এলাকায় দেখলাম সেখানে জাসদের পুরোনো কিছু কর্মী থাকলেও তারা জাসদে (আওয়ামী লীগ হবে) যোগ দিয়ে দিয়েছে।’
গত আড়াই মাসে ভাইয়ের অবর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজ করে মুগ্ধ বলে জানান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ওখানে জাসদের কাঠামো থাকলে তারা মনোনয়ন দিতে পারত। কিন্তু ওখানেতো জাসদ নেই।’
আপনি কি তাহলে জাসদ থেকে পদত্যাগ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি অবশ্যই পদত্যাগ করবো। তাদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ থেকে যেহেতু মনোনয়ন নিয়েছি, তাদের সঙ্গে যুক্ত হবো। আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ যোগ দেব।’
এ বিষয়ে জানতে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারকে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।
তবে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, ‘উনি এখনো আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। আমাদের এখানে থাকলে জোট থেকে ওনার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। আমরা আসনটা নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের দেনদরবার-আলোচনা করতাম। কিন্তু সেখানে যাওয়া সে সম্ভাবনাও কমে গেছে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)