গৌরবের ৮৪ বছর
আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আশরাফুন্নাহার নার্গিস’র অবসরপ্রাপ্তি
জিএম আল ফারুক আশাশুনি ঃ কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যের আঁধার এ প্রতিষ্ঠানের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধশালী ও গতিশীল করে ঐতিহ্যবাহী আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যুগ যুগ ধরে আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাতা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
পারিবারিক শিক্ষার পর যদি কোন জায়গা বা কোন প্রতিষ্ঠান থাকে তা হচ্ছে স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা অর্জন করে মানুষ নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পাশাপাশি দেশে, সমাজ ও পরিবারকে আলোকিত করে। আর এই আলোকিত করার পেছনে রয়েছে স্কুল শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ, অবকাঠামো ও নিয়ম-শৃংখলা ইত্যাদি। এমনই এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
আশাশুনি উপজেলা সদরের সুনামধন্য ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ “আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়”। যা প্রায় ৮৪ বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ঘরে ঘরে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ “আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়” যা স্থাপিত হয়েছে ১৯৪০ সালে।
এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে মাত্র ১০০/১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে শুরু করলেও সরকারি হওয়ার আগে স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রী ছিল ৯০০ থেকে ১০০০ জনের মত। কিন্তু বর্তমানে সরকারি হওয়ার পর প্রতি বিভাগে ১২০ জন করে ৬০০ এর অধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত রয়েছে। প্রতি বছর এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস সহ ২৫/৩০ জন করে গোল্ডেন এ+ সহ জিপিএ ৫ প্রাপ্ত হয়। এই স্কুল থেকে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, ঢাকা বুয়েট এর শিক্ষক রুহুল আমিন মন্টু, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন সাকি, ঢাকা মেডিকেলের ডাঃ সুশংকর মন্ডল, জজ হুমায়রা তাসনিম ইলোরা, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনিম মুরাদ, ফিরোজ আহম্মেদ, ডাঃ তাসনিম ফাতেমা ও এএসপি জিকু সহ অসংখ ছাত্র-ছাত্রী পাস করে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দেশ পরিচালনা করছেন।
২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর স্কুলটি সরকারি করন হয়। এ স্কুলে মোট ২১ জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার নার্গিস ২০০৩ সালের ৭ মে সহকারী প্রধান শিক্ষক ২০০৮ সালের ২৩ জানুয়ারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে স্কুলে যোগদান করেন। যোগদানের পর হতে তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি সহ উপজেলা পর্যায়ে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বিজ্ঞান মেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলায় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার গৌরব অর্জন করেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার নার্গিসের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মাল্টি-মিডিয়া শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, বিদ্যালয়ের মূল ফটকে ডিজিটাল নোটিশ ডিসপ্লে স্থাপন, মানসম্পন্ন স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং ফিল্টার ব্যবহারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিত করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে একাডেমির নিরাপত্তা ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। স্কাউটের উপজেলা কমিশনার ও শিক্ষার মানোন্নয়নে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে একাধিক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার নার্গিস। তার অবসরে যাওয়ার কয়েকদিন আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ চারিতায় তিনি জানান, সুদীর্ঘ চাকুরী জীবনে আমার বিরুদ্ধে কেউ কোন দিন অভিযোগ করেনি। চাকরীর শেষ সময় এসে একজন অবসরপ্রাপ্ত নৈশ প্রহরী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।
যে জন্ম তারিখ নিয়ে স্কুলে যোগদান করে ৬০ বছর পূর্ন হলে অবসরে যান। সরকারিকরণ হতে না পেরে হয়রানি করে আসছে। তিনি আরও জানান সরকারি বিধি মোতাবেক ঘর ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে যাচ্ছি। ওই নৈশ প্রহরী বদর উদ্দীন ২৭/২৮ বছর ধরে ওই জন্ম তারিখ নিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। সৎ, যোগ্য, স্বদালাপী, হাস্যজ¦ল মহিয়সী প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার নার্গিস অবসরে যাচ্ছেন আজ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)