পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়ে যে তথ্য দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাচ্ছে, বাংলাদেশ পুলিশ সেভাবেই কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, সেগুলো দেখে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে তাদের বদলি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পুলিশের প্রতি আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাচ্ছে, আমাদের পুলিশ সেভাবেই কাজ করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিবে নির্বাচন কমিশন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে চিঠি আগে আসুক। নির্বাচন কমিশন এগুলো স্টাডি করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই একটা সিদ্ধান্ত আমাদের দিচ্ছে। সে সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে না আসলে তো আমরা অ্যাডভান্স কিছু বলতে পারি না।
হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, যেকোনো দল যদি সমাবেশ করতে চায়, নির্বাচন কমিশনের যদি আপত্তি থাকে, তবে তারা করতে পারবে না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যদি মনে করে পরিবেশ নষ্ট হবে, সেখানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীরও দেখার বিষয় রয়েছে।
বিএনপির মানববন্ধনেও বাধা দেয়া হয়েছে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, পুলিশ অন্য জায়গায় গিয়ে মানববন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছিল। যানজট সৃষ্টি হতে পারে, সেজন্যই তারা অন্য জায়গায় করতে বলেছিল। সেই জায়গায় তারা যায়নি। করতে দেয়নি ঘটনা সত্যি নয়।
গুম-খুন বন্ধ করে দেশে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের আমলে ব্যাপক খুন-গুম ছিল। সেই খুন-গুমের কথা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। আমি আবারো তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। খুন-গুমের শুরুই করেছিলেন তারা (বিএনপি)।
আজকে বিএনপির মানববন্ধনে বক্তারা জানিয়েছেন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে খুন ও গুমের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মৃদু হেসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু খোঁজখবর রাখেন সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ।
তিনি বলেন, এখানে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চরমপন্থী, বনদস্যু, জলদস্যু ক্রমান্বয়ে সারেন্ডার করেছে। এগুলো বিদায় নিয়েছে। খুন-গুমের কথা যদি বলতে হয়, ২০০৪-এ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি ছিল, সেখানে ৪৭০ জনের কাছাকাছি গুম হয়েছিল এক বছরে। প্রতিবছর প্রতিনিয়ত তাদের খুন-গুম হত। এখন এসে যদি বলে এতগুলো খুন, এতগুলো গুম হয়েছে। সেগুলো তো বলতেই পারে।
তিনি বলেন, এখন খুন-গুম আমরা সচরাচর দেখছি না, এগুলো আমরা ব্যাপক হারে দেখেছিলাম ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাসের উত্থান দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার দৃশ্যটা আপনারা দেখেছেন, খোদা তাকে রক্ষা করেছেন। ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা করেছিল। এসবগুলো কিন্তু সেই আমলেই হয়েছে। এগুলো একটা ইতিহাস হয়ে রয়েছে।
অবৈধভাবে বিরোধী দলকে গ্রেফতার করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে সরকার- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত দুই বছর ধরে বিএনপি-জামায়াত কিংবা অন্য দল, যত ধরনের প্রোগ্রাম করতে চেয়েছে, আমরা কোনোটাতেই বাধা দেইনি। তারা মানববন্ধন, মিছিল, লংমার্চ, অবরোধ, ধর্মঘট করেছে। আমরা কোনটিতেই বাধা দেয়নি। গত ২৮ অক্টোবরও আমরা বাধা দেইনি।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো যারা করে তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলেন। তারা আবার নানা ধরনের কথা বলেন। তাদেরকে রাজনীতি করতে দেয়া হয় না- এ সমস্ত কথা বলেন। এগুলো শুনলে আমাদের কাছে মনে- হয় আমরা কোন যুগে বসবাস করছি।
কাউকে অন্যায়ভাবে কিংবা বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হচ্ছে না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশে উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ক্যামেরা উড়ানো হয়েছিল। ড্রোনের সাহায্য নেয়াতে সেখানে কখন কতজন লোক উপস্থিত ছিল, আমরা মাথাগুনে সেটা বের করেছি। সেখানে কারা কাকে পিটিয়েছে তারা কোথা থেকে আসছে, সবকিছু আমাদের ক্যামেরায় রয়ে গেছে। ক্যামেরা থেকে খুঁজে কারা কারা জড়িত ছিল তা বের করা হয়েছে। যে যেখানেই থাকুক… সে যদি সাতক্ষীরা থেকে এসে থাকে আমরা সাতক্ষীরা তাদের চেহারা পাঠিয়ে দিয়েছি। তাকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখানে প্রায় ২ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিল, মাথা গুণে আমরা দেখেছি। আরো ছোট ছোট দল এখানে সমাবেশ করেছিল। ড্রোনের মাধ্যমে সবার চেহারা আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)