তালার ইসলামকাটির নায়েব আব্দুল মুকিতের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ
ওমর ফারুক বিপ্লব, তালা: সাতক্ষীরার তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুল মুকিতের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভূমি বা জমির বর্তমান মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নামে সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হলে নামজারি করতে হয়।
জমি বিক্রি, দান, ওয়াকফ, হেবা, অধিগ্রহণ, নিলাম ক্রম, বন্দোবস্ত ইত্যাদি সূত্রে হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি বা জমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হলে নামজারি করতে হয়। কোর্টের রায়ে জমির মালিকানা লাভ করলে সে রায় মোতাবেক নামজারি করতে হয়।
এসব বিষয়ে ভূমি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ফি ছাড়াই অতিরিক্ত টাকা ঘুষ আদায় করছে নায়েব আব্দুল মুকিত। যা রীতিমতো বিস্ময়কর। গোপন সূত্রে জানা যায়, ইসলামকাটি ভূমি অফিসে যোগদান করার পর থেকেই তহসিলদার আব্দুল মুকিতের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেছেন।
নায়েব আব্দুল মুকিত যোগদানের পর ৩ মাসের মধ্যে শুধু জমির নামজারিতে ঘুষ বাণিজ্য করেছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। তার মাসিক ঘুষ বাণিজ্যের টাকার পরিমাণ প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশ সরকার ভূমির নামজারির ফি ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও তিনি সর্বনিম্ন ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। আর অশিক্ষিত মানুষের কাগজপত্রে ত্রুটি না থাকলেও তিনি ভুল বুঝিয়ে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করছেন বলে এমন অভিযোগ অনেকের।
সামান্য ভুল থাকলেও জমির মালিকদের কাছ থেকে নিজে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। কেউ টাকা না দিলে তিনি কোনও কাজই করেন না এবং কাগজপত্র তালাবদ্ধ করে রেখে দেন। ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণে তিনি কয়েকগুণ টাকা নিয়ে থাকেন।
এই ভূমি অফিসের চৌকাঠ পেরুলেই ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল মুকিতের নিজের করা আইন মানতে হয় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ভূমি মালিকেরা বলেন, তার দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার করলে নানা টালবাহানা করে জমির মালিকদের হয়রানি করেন তিনি। সরেজমিনে জানা গেছে, ভূমি অফিসে নামজারি, জমিভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তোলা সহ সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে।
চুক্তির টাকা ছাড়া কোনো ফাইলই নড়ে না। তার দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুমি মালিকেরা। ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল মুকিতের দিনের পর দিন তিনি দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ জনগণ ও নিরীহ মানুষের নিকট থেকে । ঘুষখোর এই ভূমি কর্মকর্তা তার ইচ্ছামত দুর্নীতি করে চলেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, তার চাহিদা মত ঘুষের টাকা না দিলে কোনো কাজ হবেনা দিনের পর দিন ঘুরতে হবে। পরবর্তী সময়ে দালালদের মাধ্যমে গেলে কাজ করেন এই ভূমি কর্মকর্তারা। ভুক্তভোগীরা জানান , নিজের ক্ষতির কথা চিন্তা করে কোথাও ভয়ে অভিযোগ করি না। নায়েব আব্দুল মুকিত ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা নেয় শুধু নামজারি করতে। কাগজ পত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে টাকার পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, তিনি সরাসরি জমির নামজারি করতে গিয়ে তিনি বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছেন। সকল কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও তাকে অনেক আগের মালিকদের ওয়ারিশ সনদ এনে দিতে বলা হয়, যার কারণে আর নামজারি করা হয়নি। দালাল ছাড়া গেলে সবার সাথে এমনই করা হয়। জানা যায় নায়েবের আব্দুল মুকিতের স্থায়ী বাড়ি আশাশুনি উপজেলায় শ্রীউলা ইউনিয়ানের লাঙ্গলদাড়িঁয়া গ্রামে। বর্তমানের তিনি সাতক্ষীরা সদর রসুলপুর সার্কিট হাউজের পিছনে মেহেদীবাগ এলাকায় বসবাস করেন।
নায়েব আব্দুল মুকিত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটুক্তি করে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেনা। এলাকার সচেতন মহল নায়েবের আব্দুল মুকিতের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সেবা নিতে আসা জমির মালিকদের তহসিলদার আব্দুল মুকিত বলেন, সাংবাদিকরা আমার নিউজ করলে কি হবে যেখানে প্রধান মন্ত্রী আমার চাকরি খাওয়ার ক্ষমতা রাখেনা।
তাছাড়া তালা উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত ঘুষের টাকার ভাগ দিতে হয়। অফিসে বসে সে প্রতিনিয়ত ঘুষ লেনদেন করতে দ্বিধাবোধ করেন না। গোপন সূত্রে জানাযায় , নায়েব আব্দুল মুকিত অবৈধ সীমানা পিলিয়ার সিন্ডিকেটের একজন সক্রিয় সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের মেহেদীবাগ এলাকার বাসিন্দা জানান, আব্দুল মুকিত নায়েব একাধিক মানুষের থেকে চেক দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে সময় মতো টাকা ফেরত না দিয়ে চেকের মামলা চলছে কোর্টে।
এ বিষয়ে নায়েব আব্দুল মুকিতের মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ যদি পেয়ে থাকেন তাহলে নিউজ করতে পারেন। আমি ম্যানেজ করে চলি।
এ বিষয়ে তালা উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা আফিয়া শারমিন জানান, নায়েব আব্দুল মুকিতের বিরুদ্ধে যাদি এমন কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আইনের আওতায় এনে তাকে শাস্তি ব্যবস্থা করা হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)