ফিরোজায় ফিরলেন খালেদা জিয়া
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। হাসপাতালের ছাড়পত্র পাওয়ার পর মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় পৌঁছান তিনি। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে বাসায় নেওয়া হয়।
চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত সংকটাবস্থায় ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।পেসমেকার বসানোর পর এখন তার শারীরিক অবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল।সে কারণে তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়।বাসায় রেখেই তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেবেন চিকিৎসকেরা।
খালেদা জিয়া যখন বাসায় পৌঁছান, তখন সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২১ জুন দিবাগত রাতে গুলশানের বাসা ফিরোজায় খালেদা জিয়া হঠাৎ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৩টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কয়েক দফা বৈঠকে বসে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেন। মেডিকেল বোর্ডের এসব সভায় লন্ডন থেকে ডা. জোবায়েদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
২২ জুন রাতে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন বিকালে খালেদা জিয়ার হার্টে (হৃদযন্ত্র) পেসমেকার (হৃদস্পন্দন তৈরির যন্ত্র) স্থাপন করা হয়। হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ক্যাথল্যাবে এই যন্ত্র বসানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লক ছিল, একটা স্টেন্টও (রিং) লাগানো ছিল। সব কিছু পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ড ম্যাডামের হার্টে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে বিশেষায়িত কক্ষে (ক্যাথল্যাবে) নিয়ে পেসমেকার স্থাপন করা হয়।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও বিদেশে তার চিকিৎসা করা যাচ্ছে না। বিদেশে যাবেন না, এমন শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি নেত্রী। এরপর থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে যাচ্ছে সরকার।
খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সপ্তমবার বর্ধিত মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অষ্টমবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শর্ত দুটি হলো- খালেদা জিয়া আগের মতোই ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
এরমধ্যেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছে তার পরিবার। কিন্তু সেটি নাকচ করা হয়েছে। সরকার বলছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী এখন বিদেশে যেতে চাইলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হন। গত বছর ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাগার থেকে অসুস্থতা নিয়ে মুক্তির পর এ পর্যন্ত ছয় দফা এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া।
৭৮ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী আথ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)