মনিরামপুরে বন্ধ সেচপাম্পে ৮৪৯ ইউনিট খরচ দেখিয়ে ৩৭১০ টাকার বিদ্যুৎ বিল
হেলাল উদ্দিন, মনিরামপুর (যশোর): যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম। স্থানীয় মাঠে তার একটি বৈদ্যুতিক সেচপাম্প আছে। এই পাম্পে তিনি নিজেরসহ অন্য কৃষকের ১৬ বিঘা জমিতে সেচ দেন। বোরো মৌসুমের পর সেচ কাজ বন্ধ রেখেছেন দুই মাস।
এরপরও গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জুন মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ শাহ আলমকে দেওয়া হয়েছে। তার বন্ধ থাকা সেচপাম্পে ৮৪৯ ইউনিট খরচ দেখিয়ে ৩ হাজার ৭১০ টাকা বিল করেছে যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় রাজগঞ্জ সাব জোনাল অফিস।
শাহ আলমের পাশের সেচযন্ত্রের মালিক সুলতান পাটোয়ারি। তিনি বোরো ও আমন মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে সেচ দেন। তার বন্ধ সেচযন্ত্রে জুন মাসের ৭৪০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে বিল করা হয়েছে ৩ হাজার ২৫২ টাকা।
দুই মাস আগে বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে বলে জানান শাহ আলম। তিনি বলেন- এরপর একদিনও পাম্পের সুইচ টিপে দেখিনি। মে মাসে ৫০ ইউনিট ব্যবহার দেখিয়ে ৩৫৫ টাকা বিল করেছে। সর্বনিম্ন চার্জ ভেবে সেই বিল শোধ করেছি। শুক্রবার বিকেলে জুন মাসের বিলের কাগজ দিয়ে গেছে। এবারের বিল করেছে ৩ হাজার ৭১০ টাকা।
শাহ আলম বলেন- যখন ধানে পুরোদমে পানি দেওয়ার চাপ ছিল তখন ৩ হাজারের বেশি বিল আসেনি। বোরো ধান ওঠার পর একদিনও মোটরের সুইচ দিয়ে দেখিনি। এবার ৩ হাজার ৭১০ টাকা বিল করেছে। যিনি বিলের কাগজ দিতে এসেছিলেন তার কাছে কারণ জানতে চাইলাম। তিনি হিসাব মিলাতে না পেরে চলে গেছেন।
যশোর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর রাজগঞ্জ সাব জোনাল দপ্তরের জুন মাসের এমন ভুতুড়ে বিলের কাগজ হাতে পেয়েছেন রঘুনাথপুর গ্রামের প্রভাষ মণ্ডল, বিনোদ রায়, মামুদকাটি গ্রামের নূর ইসলাম, কামরুল হাসান ও নাজিম উদ্দিন।
প্রভাষ মণ্ডলকে জুন মাসের বিল দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৭ টাকা, বিনোদ রায়কে ১ হাজার ১৫২ টাকা, নুর ইসলামকে ১ হাজার ৬১৫ টাকা, কামরুজ্জামানকে ৯৮৪ টাকা ও নাজিম উদ্দিনকে ৫৬৪ টাকা।
নাজিম উদ্দিন বলেন- এবারের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে অনেক সেচ মালিকের ১০০ ইউনিট খরচ দেখিয়ে বিল করেছে। আমার মোটর বন্ধ রয়েছে। আমার জুনের বিলে ১০০ ইউনিট খরচ দেখিয়েছে।
কৃষক নুর ইসলাম বলেন- নিয়মিত যে লোক মিটারের রিডিং নিয়ে গেল মাসেরটা তিনি নেননি। আমার মিটারে জুনের রিডিং নিয়েছে ইমরান নামের একটি ছেলে। তিনি খেদাপাড়া অভিযোগ কেন্দ্রের আওতায় কাজ করেন। যত দূর জানি তার চাকরি স্থায়ী না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান বলেন- মামুদকাটি, কদমবাড়িয়া ও রঘুনাথপুর গ্রামের সেচের মিটারের বিল আমি তুলেছি। অফিস থেকে ১০০ ইউনিট করে বেশি তুলতে বলেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির এক মিটার রিডার বলেন- পল্লিবিদ্যুতের বিলের মোটা অঙ্কের টাকা ঘাটতি দেখা গেছে। জুন ক্লোজিং-এ সেই ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে আমাদের গ্রাহকের মাসিক ব্যবহারের ওপর বাড়তি বিল তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এমনটি হয়েছে। বাড়তি বিল তুলতে গিয়ে আমদের বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মিটার রিডার আরও বলেন- কর্মী সংকট থাকায় আমাদের কাজের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। এসব কারণে আমরা কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর রাজগঞ্জ সাব জোনাল দপ্তরের এ জি এম শাহজাহান বলেন- জুন ক্লোজিংয়ের কারণে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিলে কিছু সমস্যা হয়েছে। গ্রাহকেরা সমস্যা মনে করলে অফিসে এলে আমরা সমাধান করে দেব।
যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মহম্মদ আব্দুল লতীফ বলেন- পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন অনেক দিন ধরে। এ জন্য মিটারের বিল তোলায় সমস্যা হতে পারে। আমরা বিষয়টি দেখব।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)