হাসিনাকে অন্য দেশে পাঠানোর তোড়জোড় দিল্লির
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার রোববার (২৫ আগস্ট) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট হাসিনার গোটা পরিবার সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পরে ইন্দিরা গান্ধী তাদের দুই বোনকে আশ্রয় দেন। সময়ের ব্যবধানে ফের শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে একটি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ সরকারের হাতে ভারত কখনওই তাঁদের ছেড়ে দিতে পারে না। তাই তৃতীয় কোনও দেশে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে। এই সরকারে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নেই। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর মতো এত দিন সরকার-বিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলি বাংলাদেশের ইউনূস সরকারকে সমর্থন করছে। দেশত্যাগী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতে। প্রশ্ন উঠেছে— বাংলাদেশ সরকার প্রত্যর্পণের আর্জি জানালে ভারত কি শেখ হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য?
আন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের তরফে এখনও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে প্রত্যর্পণের কথা দিল্লিকে বলা হয়নি। কিন্তু আগের সরকারের সব কর্তাব্যক্তির কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করায় হাসিনাও সেই রক্ষাকবচ হারাচ্ছেন। সঙ্গে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে, যার অধিকাংশই হত্যা ও গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে করা। এই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার কথায়, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-য় প্রত্যর্পণ চুক্তি হওয়ার পরে হাসিনাকে ভারত ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য।’
ফখরুল জানিয়েছেন, প্রত্যর্পণের পরে খুনের আসামি হিসাবে হাসিনার বিচার করা হবে ঢাকার আদালতে।
তবে সরকারের কোনও পদে ফখরুল নেই। তাই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তার কথার জবাব ভারত সরকার দেয়নি। কিন্তু জবাব না-দিলেও দিল্লিতে হাসিনার অবস্থান যে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়াবে, বিদেশ মন্ত্রক বিলক্ষণ তা বোঝে।
সূত্রের খবর, এ জন্য তৃতীয় কোনও দেশে হাসিনাকে নিরাপদে রাখার একটা তোড়জোড়ও দিল্লির তরফে চলছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলেও বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে এই দাবির বিষয়ে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করেন, হাসিনার প্রত্যর্পণের মতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়ার কথাই নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ আইনশৃঙ্খলায় রাশ টেনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পরে হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে কাঠগড়ায় তুললে তবে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দাটি পাবে। হাসিনাকে ফেরানোর দাবি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসাবেও জনপ্রিয় করা যাবে। মির্জা ফখরুলের দাবি তাই খানিকটা ‘সময়ের আগে তোলা’ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতৃত্বের এই অংশ।
তবে হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২০১৩-র প্রত্যর্পণ চুক্তির তেমন কোনও গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে না বিদেশ মন্ত্রক। এই চুক্তি করা হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে জঙ্গি, পাচারকারী ও চোরাচালানিদের প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে। ২০১৬-য় এই চুক্তিতে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল।
কোনও দেশ যদি মনে করে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হচ্ছে, তবে তারা দাবি মানতে বাধ্য নয়। এখানে হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি ভারত যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করে, বলার কিছু থাকতে পারে না। আবার চুক্তির আর একটি ধারায় রয়েছে, প্রত্যর্পণের পরে দীর্ঘ কারাবাস ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যাবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)