রোহিঙ্গা ধরে নিয়ে সাগরে ফেলার বিষয়ে যা বলছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট


ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে আটক করে অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাগরে ফেলে দেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে দেশটির নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর শুরু হয় তোলপাড়। তবে এ অভিযোগ মানতে রাজি নয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
শুক্রবার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে তোলা হলে বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং আবেদনের শুনানি নাকচ করে দেন। বিচারপতিরা বলেন, আবেদনে শক্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। এটি ভাসা-ভাসা। আবেদনকারীর উদ্দেশে তারা বলেন, দেশ যখন এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখনই আপনারা এই ধরনের বিষয়ের অবতারণা করছেন।
সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা আবেদনকারীর উদ্দেশে বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া এ ক্ষেত্রে আগের বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এ আবেদন চমৎকার ভাষায় রচিত এক গল্পগাথা ছাড়া আর কিছু নয়। সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ রোহিঙ্গাসংক্রান্ত মামলা শুনছে, সেখানেই এর আবেদন করতে বলেন তারা এবং আগামী ৩১ জুলাই বেঞ্চের পরবর্তী শুনানি ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ দাবি করেছে, ভারত সরকার সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে। এরই অংশ হিসেবে দেশটির নৌবাহিনী ওই ৪০ রোহিঙ্গাকে আন্দামান সাগরে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনাটি তদন্তে জাতিসংঘ একজন বিশেষজ্ঞও নিযুক্ত করেছে।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ থেকে বিরত থাকতে ভারত সরকারকে সতর্ক করেছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (UNHCR) আইনজীবীরা জানান, আটক রোহিঙ্গাদের ভারতীয় সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতে হাজির করা হয়নি, যা একটি গুরুতর আইন লঙ্ঘন।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানের সময় অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সে সময় ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভারতে আশ্রয় নেয়, যাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। তবে ভারত সরকার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে বরং নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে।
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ৬ মে নয়াদিল্লি থেকে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৪০ জনকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় ১,৫০০ মাইল দূরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। সেখানে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তুলে নেওয়ার পর জাহাজটি মিয়ানমারের তানিনথারি উপকূলের দিকে রওনা দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, তানিনথারির কাছাকাছি পৌঁছানোর পর তাদের লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে সাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করা হয় এবং মিয়ানমারের একটি দ্বীপে সাঁতরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
ভুক্তভোগীদের একজনের ভাই জানান, ‘আমার ভাই বলেছে, হাত-পা ও চোখের বাঁধন খোলার পর সবাইকে লাইফ জ্যাকেট দিয়ে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। প্রায় ৩০ মিনিট সাঁতারের পর স্থানীয় এক জেলে তাদের উদ্ধার করে দ্বীপে নিয়ে যায়। ওই জেলের ফোনেই আমার ভাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।’
ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) জানিয়েছে, যাদের সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে কিশোর, বয়স্ক এমনকি একজন ক্যানসার রোগীও ছিলেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের মারধর ও মানসিক নির্যাতন করেছেন।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়া একটি ভয়ংকর ও অমানবিক কাজ। আমরা এই ঘটনায় বিস্তারিত তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এর পূর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারতের প্রতি মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
