আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত
জাতীয় নির্বাচনে দল ও প্রার্থীরা যা করতে পারবে, যা পারবে না


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’-এর আলোকে এ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেখানে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ কেমন হবে, তা নিয়ে বেশ কিছু নতুন বিষয় সংযোজন করেছে কমিশন।
এর মধ্যে খসড়া বিধিমালায় ভোটের প্রচারণায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ, আচরণবিধি লঙ্ঘনে জরিমানা, প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, শব্দদূষণ রোধে ব্যবস্থা, প্রার্থীদের এক প্ল্যাটফর্মে ইশতেহার ঘোষণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিদেশি অর্থায়নে বিধিনিষেধ এবং বিধি মানতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সপ্তম কমিশন সভায় আচরণবিধি-২০২৫ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। যেখানে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশও আমলে নিয়েছে ইসি।
এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বেলা সোয়া ১১টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী কমিশন সভা হয়। সভা শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, প্রার্থীর প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না, এবার যুক্ত করা হয়েছে। পোস্টার ব্যবহার বাতিল করার ব্যাপারে সংস্কার কমিশনেরও প্রস্তাব ছিল, আমরাও একমত হয়েছি। আমরা পোস্টার ব্যবহার বাদ দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যানার ও ফেস্টুন ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি জানান, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। প্রার্থীর পক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের কেউ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ব্যবহার যেমন সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলো, রেস্ট হাউজ ব্যবহারের ওপরে কিছু বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহারের বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে বলেও জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, ভোটার স্লিপ ইন্ট্রোডিউস করার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে যে বিধিনিষেধ ছিল, এবার একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ডিফাইন করা হয়েছে উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ভোটের প্রচারণার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী ধরনের কার্যক্রম করা যাবে, কী করা যাবে না, তা ডিফাইন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না।
তিনি জানান, মাইকে গণসংযোগের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রচারণার সময় তিন সপ্তাহ থাকছে। টিভিতে সংলাপের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ইসি কমিশনার আরও বলেন, যেসব প্রার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর সেখান থেকে তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনে যে নরমাল শাস্তি ছিল, ছয় মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, এবার জরিমানা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে।
আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেবে কমিশন।
এ প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, অঙ্গীকারনামা নেয়ার বিষয়টি বিধিমালায় নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। দল এবং প্রার্থী উভয়েরই এ বিধিমালা মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, আচরণবিধির গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিও-তে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিও অনুচ্ছেদটি ছিল না, এবার এটি সন্নিবেশিত হয়েছে।
সব প্রার্থীকে এক প্ল্যাটফর্মে ইশতেহার ঘোষণার বিষয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, কমন প্ল্যাটফর্ম বলতে একটি আসনে যে কয়জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন সংশ্লিষ্ট আসনের আমাদের রিটার্নিং অফিসার সেই প্রার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে একই দিনে ইশতেহার বা ঘোষণাপত্র পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
