বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে আসছে চীন
করোনাকালে চীনা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুটি সুখবর পেল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
প্রথমটি হলো, একটি চীনা প্রতিষ্ঠান ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ১০০ একর জমি নিচ্ছে। এ জন্য তারা টাকাও জমা দিয়েছে। অন্যটি হলো, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬০টি চীনা কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে উন্নয়নকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, এটা তারই সুফল হিসেবে দেখতে চাই। দেখা যায়, চীনের কোনো বড় প্রতিষ্ঠান একটি দেশে বিনিয়োগ করলে অন্যরাও উৎসাহিত হয়।’
আগ্রহে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর:
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৩০ কোটি ডলারের যে বিনিয়োগটি এসেছে, সেটি করছে চীনের ইয়াবাং ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিংস গ্রুপ, যারা চীনের ইয়াবাং গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। এই গ্রুপটি চীনের জিয়াংসু স্টক এক্সচেঞ্জের একটি তালিকাভুক্ত সংস্থা।
ইয়াবাং ১০০ একর জমিতে বস্ত্র খাতের রাসায়নিক, ওষুধের কাঁচামাল তথা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) ও অন্যান্য রাসায়নিক উৎপাদন করবে। এ জন্য তারা জমি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। দীর্ঘ আলোচনার পর গত রোববার তারা বিনিয়োগটি চূড়ান্ত করে।
‘চীনের বাজারে বাংলাদেশ যে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে, সেটার সুযোগ নিতে চীনা বিনিয়োগ আসবে।’
—এম মাশরুর রিয়াজ, চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ
বেজা জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহার পরে ইয়াবাংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিনিয়োগ চুক্তি হবে। বেজায় দেওয়া প্রস্তাবে ইয়াবাং বলেছে, তারা চীনের শীর্ষ ৫০০টি কোম্পানির একটি, যাদের পরিচালন আয় ৩ হাজার ২০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়েছে (৩৮ হাজার কোটি টাকা)। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, মানুষ ও পশুর চিকিৎসার ওষুধ, কীটনাশক, খনিজ, আর্থিক খাত, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে ইয়াবাং গ্রুপের।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে তারা ১৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে চায়। আর ১০ কোটি ডলারের পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে চায়। প্রস্তাব অনুযায়ী, ইয়াবাংয়ের বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হবে ২ হাজার ২০০ মানুষের।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর ৩০ হাজার একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা জমি নিচ্ছে। অন্যদিকে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদাভাবে চাইনিজ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সেখানে জমির পরিমাণ ৭৮৩ একর।
বিতর্ক থাকলেও চায়না হারবার আনতে চায় বিনিয়োগ
বাংলাদেশে জাপান, চীন ও ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদাভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকারী হিসেবে কাজ করছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
চায়না হারবার বেজাকে এক চিঠিতে গত সপ্তাহে বলেছে, তারা চীন সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তাদের মূল প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার রাজি থাকলে তারা চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের যৌথ অংশীদারত্ব চুক্তি করতে চায়।
সিসিসিসি বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফরচুন-এ বৈশ্বিকভাবে শীর্ষ ৫০০ কোম্পানির একটি। ২০১৯ সালের তালিকায় এটি ছিল ৯৩ তম। তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান চায়না হারবার বলছে, চুক্তি হলে তারা ১০ কোটি মার্কিন ডলারের মূলধন নিয়ে আসবে।
চিঠিতে চায়না হারবার দাবি করেছে, ইতিমধ্যে ৬০টি চীনা প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে যে জমি লাগবে, তা চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের মোট জমির ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে বিনিয়োগ আসবে ২৮ কোটি মার্কিন ডলার। তারা আশা করে, চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তারা ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে আসতে পারবে। এতে কাজ পাবে ৬০ থেকে ৯০ হাজার মানুষ।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে চীনা বিনিয়োগ বেশি আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৯ সালে দেশে ২৮৭ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আসে। যার মধ্যে চীন থেকে এসেছে সবচেয়ে বেশি ৬৩ কোটি ডলার, যা মোট বিনিয়োগের প্রায় ২২ শতাংশ।
জাপান, চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে অবকাঠামোর দিক দিয়ে কাজ বেশি এগিয়েছে চীন। কিন্তু বেজার সঙ্গে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যৌথ অংশীদারত্ব চুক্তি এখনো সই হয়নি। এর কারণ চায়না হারবারকে নিয়ে বিতর্ক।
২০১৭ সালের নভেম্বরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তখনকার সচিব নজরুল ইসলামকে এক লাখ ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয় চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং। যদিও সরকার তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেনি। তারা বাংলাদেশে কার্যরত রয়েছে।
চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের যৌথ অংশীদারত্ব চুক্তি চায়না হারবার বিতর্কেই থমকে থাকছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীর সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলছেন, এখন চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি দ্রুত করে ফেলা দরকার। এটা নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়। চায়না হারবারের বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক নজির আছে যে একটি কোম্পানি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কালো তালিকাভুক্ত থেকে আবার কাজ পায়। বাংলাদেশে তাদের কালো তালিকাভুক্তই করা হয়নি। এখন তাদের সঙ্গে কাজ করতে হলে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে।
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ছে কেন, তার একটা ব্যাখ্যাও দেন মাশরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে চীনা বিনিয়োগ বেশি ও দ্রুত আসে, কারণ তারা ঝুঁকি বেশি নিতে পারে। বাংলাদেশে নীতির ধারাবাহিকতার অভাব ও নিয়ন্ত্রণগত ঝুঁকি বেশি। তিনি মনে করেন, চীনের বাজারে বাংলাদেশ যে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে, সেটার সুযোগ নিতে চীনা বিনিয়োগ আসবে।
সুত্র প্রথম আলো
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)