চড়া কাঁচামালের দাম, বেশি বিপদে ছোট বেকারিগুলো
বাজারে এমনিতেই আটা-ময়দা, সয়াবিন তেল, চিনি ও ডালডার দাম বাড়তি। লাগামহীন দাম বাড়ার কারণে একদিকে যেমন সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস, অন্যদিকে ভুগছেন বেকারি মালিকরা। পণ্যের দাম বাড়িয়ে সেটা সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন ছোট-বড় বেকারি মালিকরা। তাতেও আবার বাড়তি চাপে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ফলে বিক্রি কমে যাচ্ছে বেকারি পণ্যের।
দেশে ছোট পরিসরে যারা বেকারি পণ্য (হ্যান্ডমেড) প্রস্তুত করে তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি। সারাদেশে হাতে পণ্য তৈরি করে এমন পাঁচ হাজারের বেশি বেকারি রয়েছে এই সংগঠনের অধীনে।
সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে বেকারি পণ্যের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর বেকারি পণ্যের বিক্রি খুবই কমে যায়। একদিকে করোনা, অন্যদিকে লাগামহীন পণ্যমূল্যের কারণে ছোট বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন সক্ষমতার শতভাগ পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না ছোট বেকারিগুলো। টিকে থাকার জন্য যা না করলেই নয়, ততটুকু উৎপাদন করে বেঁচে আছি। গত কয়েক মাস বেকারিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্য ৬৭ শতাংশ বেড়েছে।’
এদিকে, গত মাস থেকেই বেড়ে চলেছে বেকারিপণ্যের দাম। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ড্রাইকেকের মূল্য ছিল ২১০ টাকা, যা এখন ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ২০০ টাকার বিভিন্ন স্পেশাল বিস্কুট ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, ৬০ টাকার ৪০০ গ্রামের টোস্টের প্যাকেট ৮০ টাকা, ৮৫ টাকার কেক ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, ১৪০ টাকার চানাচুর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, ১০ টাকার পেটিস ১২ টাকা, পাঁচ টাকার ছোট বন ছয় টাকা এবং বিভিন্ন মাঝারি ও বড় পাউরুটি পাঁচ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে।
এ নিয়ে কয়েকজন বেকারি মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বেকারিতে ব্যবহৃত সবগুলো কাঁচামালের দাম বেশি। বাজারের তথ্যও একই কথা বলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খোলা পাম তেলের দাম ৪২ শতাংশ পর্যন্ত। সয়াবিন তেল ৩৫ শতাংশ, ডালডার দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ, আটা-ময়দা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং চিনি পাঁচ শতাংশ।
বেকারি মালিকদের দাবি, এসব দামবৃদ্ধি সমন্বয় করলে বেকারি পণ্যের দাম এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানো প্রয়োজন। তবে দফায় দফায় দাম সমন্বয় করা সম্ভব নয় বলে তাদের বিক্রি কমে গেছে। লোকসান গুণছেন অনেকে। ইতোমধ্যে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের কয়েকশ’ বেকারি।
এ বিষয়ে গাবতলী এলাকার আনন্দ বেকারির মালিক ওবাইদুল্লাহ বলেন, ‘আগে তেল ৯০ টাকায় কিনতাম, এখন কিনি ১২০ টাকায়। আটা ২৬ টাকা থেকে ৩৪ টাকা হয়েছে। সে হিসাবে পাঁচ টাকার রুটি সাত টাকা হওয়া দরকার। কিন্তু দাম বাড়ালে ছোট দোকানিরা রাখতে চান না। কারণ এসব পণ্য মূলত নিম্ন আয়ের মানুষেরা খান।’
এদিকে, দেশের বাকি বেকারি পণ্যের বাজার মাঝারি ও বড় বড় শিল্পগ্রুপের দখলে। শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ অটো-বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানের দাম সমন্বয়ের সুযোগ ছোটদের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে কাঁচামালের দাম বেশি হওয়াতে সকলেই কম-বেশি বিপাকে রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বিস্কুটের বাজারের আকার এখন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। যা প্রতিবছর গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। রফতানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এ শিল্পকে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত।’
বেকারির ছোট-বড় উভয় খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেকারির বাজারটি মোটা দাগে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। এগুলো হলো- সাধারণ ছোট রুটি-বিস্কুট তৈরির বেকারি, ছোট ছোট অঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক ব্র্যান্ডের বেকারি এবং প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানির কারখানায় উৎপাদিত বেকারিপণ্য। এর মধ্যে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাবিত হন প্রথম শ্রেণির বেকারিগুলো।
এরপরও ব্র্যান্ডের বেকারি পণ্যের দাম যে বাড়েনি তা নয়। বেশকিছু কোম্পানি আগের চেয়ে কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। তাদের পণ্যের দাম এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তবে চায়ের দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিস্কুট-কেক যেগুলো বেশ জনপ্রিয়, সেগুলো আগের দামেই রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় বেকারিপণ্যের বড় বাজার তৈরি হয়েছে। করোনাকালে বড় বেকারিগুলোর পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষও এখন বেকারিপণ্য খাচ্ছেন। তবে দাম বাড়লে বেকারির রুটি খেয়ে একবেলা পার করেন- এমন নিম্নবিত্তদের চাপ বাড়ে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)