হু হু করে বাড়ছে করোনা, লকডাউনের আগেই ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই
করোনায় বিপর্যস্ত ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। প্রতিদিনই হু হু করে দেশে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু। এরপর হঠাৎ করেই কঠিন লকডাউনের মুখোমুখি ঢাকাসহ সারাদেশ।
সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে লকডাউন। ইতিমধ্যে কঠোর এই লকডাউন এড়াতে ও কর্মহীন হয়ে আটকা পড়ার ভয়ে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই।
করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউনের সিদ্ধান্তের কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকেই নগরজীবনে একধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এ ছাড়া লকডাউনে জরুরি খাদ্যবাহী ট্রেন ছাড়া সব প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গত বছরের মতোই লকডাউনে শুধু পণ্যবাহী মালগাড়ি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনে ঠিক যত দিনের জন্য লকডাউন জারি হবে, তত দিনই যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে না।
গত বছর করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ২৫ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। ৬৮ দিন পর ১ জুন থেকে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হয়। বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের মতো এবারও লকডাউনে সব ধরনের যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে। পণ্যবাহী যানে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ থাকবে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে- এ শঙ্কায় শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলের পর রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী টার্মিনালের দিকে মানুষের ঢল নামে। মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায় টিকিটের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। রাত পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল। এরপর রোববার (৪ এপ্রিল) সকাল হতেই বিভিন্ন টার্মিনালে দেখা গেছে একই অবস্থা। ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়।
সারাদিন পর মধ্যরাতেও রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় ছিলো ঘরমুখী মানুষের। লকডাউন ঘোষণার পর ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি কোনটাই মানা হয়নি বাসের মধ্যে কিংবা কাউন্টারে। গ্রামে পাড়ি জমানো মানুষের চাপে সারারাতই যানজট ছিলো ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলোতে।
রাতেও রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের উচড়ে পড়া ছিলো গাবতলী বাস টার্মিনালে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে গাদাগাদি মানুষ, নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। মাস্ক নেই বেশিরভাগ মানুষের মুখে। কাউন্টারগুলোতেও ছিল না কোন জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা। লকডাউন যেন গ্রামে ফেরার উৎসবে পরিণত হয় মানুষের কাছে।
শত চেষ্টা করেও অনেকেই পাননি টিকিট। এক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী বসানোর কথা থাকলেও কোন নিয়মই মানা হয়নি বাসগুলোতে। কোন বাসেও ছিটাতে দেখা যায়নি জীবানুনাশক স্পে। পাশাপাশি আসনে যাত্রী বসানো ছাড়াও দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের।
রাজধানী ছাড়া বাসের চাপে গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ কল্যাণপুর এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে ভিড় ছিল সদরঘাটেও। সন্ধ্যার পর রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের ঢল নামে লঞ্চ টার্মিনালে। তবে ভিড় কম ছিল কমলাপুর স্টেশনে। আসনের অর্ধেক টিকিট দেওয়া হচ্ছে ট্রেনে। বন্ধ রয়েছে স্ট্যান্ডিং টিকিটও। সে কারণে কমলাপুরে যাত্রী বাড়লেও ভিড়ের চাপ তীব্র ছিল না।
বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে ভিড় আর গণপরিবহনের ঠাসা অবস্থা থেকে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ফাঁকা নেই কোনো আইসিইউ। প্রবল সংকটের মধ্যে সাধারণ শয্যা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন রোগীরা। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় বহু রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। হাসপাতালগুলোতে করোনা টেস্ট করাতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন।
এ ছাড়া মহামারি আকার ধারণ করা করোনায় দেশে হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫৮ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ২১৩ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৬৮৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৩৬৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৫ জন।
এর আগে শুক্রবার (২ এপ্রিল) দেশে আরও ৬ হাজার ৮৩০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আরও ৫০ জন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)