পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের ৩য় দফায়ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ
পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল।
৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) তৃতীয় দফায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির ৩১টি আসনে ভোট নেওয়া হয়।
এ নিয়ে রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৯১ আসনে ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হলো।
আগামী ১০ এপ্রিল কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার ৪৪ আসনে ভোট নেওয়া হবে।
কোভিড স্বাস্থ্যবিধি ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। তবে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনির মধ্যেও রক্তপাত থামানো যায়নি। দিনের শুরুটাই হয় মৃত্যুর খবর দিয়ে।
ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই সোমবার রাতে হুগলির গোঘাটের বদনগঞ্জ এলাকায় বিজেপি সমর্থকের মা মাধবী আদক-কে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল শাসিত দুর্বত্তদের বিরুদ্ধে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়েই মা’য়ের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পরই এদিন সকালেই তার বাড়িতে যান গোঘাটের বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক। তার অভিযোগ অন্য জেলা থেকে বহিরাগত দুর্বৃত্তদের নিয়ে এসে এই সন্ত্রাশ চালাচ্ছে তৃণমূল।
তবে অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের।
ভোটের আগের রাত রক্তাক্ত হয়ে ওঠে হাওড়ার বাগনান এলাকাও। সেখানকার হ্যালান অঞ্চলের তৃণমূলের বুথ সভাপতি যোগীবর বাগ’এর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। রক্তাক্ত অবস্থায় রাতেই ওই নেতাকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে সংঘর্ষ, সহিংসতার ঘটনা তত বেড়েছে।
হাওড়ার আমতা বিধানসভার দক্ষিণ ভাটোরার ৯০ নম্বর বুথে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুড়ের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ওই আমতাতেই চাটরা নিউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩টি বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বন্দুক ও ধারানো অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতে ওই এলাকাবায় বোমাবাজির অভিযোগ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে তারা হুমকির মুখে পড়ে। বাগনানে তৃণমূল ও বিজেপির দুই পক্ষের বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ। প্রাণের ভয়ে বহু ভোটারদের তাদের বাড়ির দরজার বন্ধ করেও বসে থাকতে দেখা গেছে।
হুগলির আরামবাগের সুভয়পুর হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃণমূলের বুথ এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই তৃণমূলের ওই এজেন্টকে মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির নারী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আরামবাগের গৌরহাটি এলাকায় তৃণমূল ব্লক সভাপতি পলাশ রায়কে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয় বলে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভাঙচুর করা হয় তার গাড়িতেও। আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁকে ঘিরে বিজেপির কর্মীদের বিক্ষোভ দেখানো হয়। রীতিমতো বাঁশ নিয়ে তাকে তাড়া করা হয়।
এমনকি বাঁশ দিয়ে তার মাথায় আঘাতও করা হয় বলে অভিযোগ। তখন চাষের খেত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন সুজাতা। এরপর রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান সুজাতা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে ভোট শুরুর পরই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুরের ১২৩ নম্বর বুথে এক নারী ভোটারকে বুথে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাস্তার ওপরেই ওই নারীর পথ আটকানো হয় যদিও তার প্রতিবাদ জানিয়ে ভোট দিতে যান তিনি। ইতোমধ্যেই ওই ভিডিও সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বুরানগর এলাকায় বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাস্তার ধারেই তাজা বোমা পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভোট শুরুর মুখেই এদিন সকালে হাওড়ার উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভায় তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট পাওয়ার পর চরম উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় গাঁতাইত গ্রামে তৃণমূল নেতা গৌতম ঘোষের বাড়িতে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্র পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। খবর জানাজানি হতেই ওই তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। ঘটনাস্থলে যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ। উত্তেজিত জনতাকে সরাতে পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়। পরে নিজের ভুল স্বীকার করে অভিযুক্ত ওই সেক্টর অফিসার। অভিযোগ ওঠার পরই তাকে সাসপেন্ড করে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তৃতীয় দফায় মোট ভোটার ছিলেন ৭৮,৫৬,৪৭৪ জন। ভোট গ্রহণের জন্য বুথের সংখ্যা ছিল ১০,৮৭১ টি। সব বুথেই মোতায়েন ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা। এ জন্য প্রায় ৬১৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল।
এ দফায় ২০৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য বাক্সবন্দি হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম রাজ্যের মন্ত্রী তৃণমূলের প্রার্থী নির্মল মাঝি, রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী সিপিআইএম প্রার্থী কান্তি গাঙ্গুলী, বিজেপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ পদ্মভূষণ সম্মাননা প্রাপ্ত স্বপন দাশগুপ্ত, রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল প্রার্থী অসীমা পাত্র, তৃণমূলের প্রার্থী সুজাতা মন্ডল খাঁ (যিনি বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ’র স্ত্রী), বিজেপির তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী প্রমুখ।
এদিন সকালে ভোট শুরুর কিছু পরেই টুইট করে মমতা ব্যনার্জি বলেন ‘বাংলার মা-মাটি-মানুষকে আমার আবেদনম নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুন, সবাই আসুন, ভোট দিন। সকাল সকাল ভোট দিন। ’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি এদিনই তৃতীয় ও শেষ দফায় আসামের ৪০ টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়। উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্যটির ১২৬ টি আসনের মধ্যে গত ২৭ মার্চ ও ১ এপ্রিল প্রথম দুই দফার ভোট গ্রহণ নেওয়া হয়।
এদিনই দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুর ২৩৪ টি বিধানসভার কেন্দ্র, কেরালার ১৪০ টি বিধানসভার কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য পডুচেরিতে ৩০টি আসনে একটি মাত্র দফায় ভোট গ্রহণ হয়। একইসাথে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী লোকসভা কেন্দ্র এবং কেরালার মালাপ্পুরম লোকসভা কেন্দ্রেও এদিন উপনির্বাচন হয়।
তামিলনাড়ুতে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯৯৮ জন। দক্ষিণের এই রাজ্যটিতে লড়াই হবে ক্ষমতাসীন দল ‘অল ইন্ডিয়া আন্না মুনেত্রা কাঝাগাম’ (এআইএডিএমকে) ও ‘দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাঝাগাম’ (ডিএমকে) এর মধ্যে।
কেরালায় মোট প্রার্থী ছিলেন ৯৫৭ জন। প্রধান লড়াই ক্ষমতাসীন জোট সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন ‘লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (এলডিএফ)-এর সাথে বিরোধী জোট কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)-এর মধ্যে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)