কেন বিয়ে করেননি কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর
শেষ হলো ৯২ বছরের পথচলা কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের কর্মময় জীবন। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চলে গেলেন উপমহাদেশের সংগীতের এই প্রবীণ মহাতারকা।
সাত দশক ধরে দর্শক ও সমালোচক হৃদয় তৃপ্ত করে চলা ভারতীয় সংগীতের এই জীবন্ত কিংবদন্তি ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার সংগীত ভারত ছাপিয়ে তাকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বসংগীতের দরবারে।
ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৪২ সালে, মারাঠি গান গেয়ে। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম হিন্দি সিনেমার জন্য গান করেন। বসন্ত জোগলেকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবিতে তিনি ‘পা লাগু কার জোরি’ গানটি গেয়েছিলেন। দুই বছর পর সুরকার গুলাম হায়দার তাকে প্রথম বড় সুযোগ দেন।
লতা মঙ্গেশকর শুধু সর্বকালের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী নন, তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সংগীতশিল্পের অন্যতম সেলিব্রিটিও ছিলেন। পেশাগত জীবনে অগণিত পুরস্কার, ট্রফি, প্রশংসায় ভেসেছেন। কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবন অবাক করার মতো ছিল। কারণ, তিনি সারা জীবন অবিবাহিত ছিলেন।
যদিও তিনি নিজে কখনো এ বিষয়ে মুখে তেমন কিছু বলেননি; কিন্তু বলিউড শাদিজ ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে লতা মঙ্গেশকরের জীবনের শেষ পর্যন্ত বিয়ে না করার সিদ্ধান্তের পেছনে দুটি প্রধান কারণের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিংবদন্তি গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের বিয়ে না করার সিদ্ধান্তের পেছনে দুটি প্রধান কারণ আছে। প্রথমটি একটি সুপরিচিত সত্য যে, ছোটবেলা থেকেই তিনি তার ভাই-বোন, মীনা, আশা, ঊষা এবং হৃদয়নাথের প্রতি খুবই স্নেহপ্রবণ ছিলেন। তাদের শিক্ষা থেকে শুরু করে নিজ নিজ ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করতে লতা প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। এভাবেই তার জীবনের বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়েছে, দশকের পর দশক কেটে গেছে। কিন্তু তিনি বিয়ে করেননি। তিনি যখন বিবাহকে আলিঙ্গন করার কথা ভাবলেন, তখন ভাগ্যদেবী তার সহায় হলেন না।
একই প্রতিবেদন অনুযায়ী, লতার ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন প্রয়াত ক্রিকেটার এবং ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রাজ সিং দুঙ্গারপুর। সাবেক এই ক্রিকেটার রাজস্থানের রাজপরিবারের সদস্য এবং দুঙ্গারপুরের তৎকালীন শাসক প্রয়াত মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিংজির কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন।
হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর এবং রাজ সিং দুঙ্গারপুর সত্যিই ভালো বন্ধু ছিলেন। তাদের বেশির ভাগ আড্ডা হতো হৃদয়নাথের বাড়িতে। সেখানেই রাজ সিং বন্ধুর বড় বোন লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। রাজ সিং এবং লতার কয়েকবার দেখা করার পর একে অপরের প্রেমে পড়েন। আরও জানা যায়, রাজ সিং লতা মঙ্গেশকরকে ‘মিঠু’ নামে ডাকতেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লতা মঙ্গেশকর এবং রাজ সিং দুঙ্গারপুর দুজনেই বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু তিনি যখন তার বাবা-মাকে এ বিষয়ে জানান, তখন তার বাবা মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিংজি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর পেছনে কারণ ছিল, লতা কোনো রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন না। তাই মহারাওয়াল লক্ষ্মণ তার ছেলে রাজ সিংকে একটি সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করতে দিতে পারেননি।
মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিংজির দৃঢ় সিদ্ধান্ত রাজ সিং দুঙ্গারপুর এবং লতা মঙ্গেশকরের স্বপ্নের দুর্গটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে দিয়েছিল। বাবার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার কারণে পিতার সিদ্ধান্ত মেনে নেন তিনি। কিন্তু রাজসিং তার পুরো জীবনে কাউকে বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞা করেন এবং সেই কথা বাবা-মাকেও জানিয়েছিলেন। যাই হোক, লতা মঙ্গেশকরও একই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং দুজনেই আজীবন বন্ধু ছিলেন।
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজ সিং দুঙ্গারপুর আলঝাইমার রোগের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মুম্বাইয়ে মারা যান। হয়তো তাদের প্রেমের গল্পটির সর্বোত্তম সমাপ্তি ছিল না, তবে শেষ পর্যন্ত দুজন যেভাবে প্রতিজ্ঞা মেনে চলেছেন, তা আজকের সময়ে অবশ্যই বিরল।
তবে লতা মঙ্গেশকর এবং রাজ সিং দুঙ্গারপুর তাদের সম্ভাব্য সম্পর্কের খবরে কখনো কোনো কথা বলেননি বা প্রতিক্রিয়া জানাননি।
২০০১ সালে লতা মঙ্গেশকর ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্ন অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)