হরিচাঁদ ঠাকুরের ওড়াকান্দি স্নানোৎসব শুরু ২৯ মার্চ
মঙ্গলার থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে শুরু হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্নানোৎসব ও তিনব্যাপী মহাবারুণী মেলা। গত দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে স্নানোৎসবে স্থগিত ছিল। তবে এ বছর মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের এ স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা।
এ উপলক্ষে কয়েকদিন আগে থেকে শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে হাজার হাজার মতুয়া ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন। ঠাকুরবাড়ি ঘেঁষে বসেছে কয়েক হাজার দোকানপাট।
জানা গেছে, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রতি বছর ওড়াকান্দিতে এ স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১ তম আবির্ভাবোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উৎসবকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখ মতুয়া ভক্তের আগমন ঘটবে ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্নানোৎসবে যোগ দিতে হাজার হাজার মতুয়া ভক্ত ও অনুসারীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে ঠাকুর বাড়িতে সমবেত হয়েছেন। কেউ কেউ ঠাকুর বাড়িতে বিছানা পেতে স্নান অপেক্ষায় আছেন। কেউ কেউ দোকানপাট পেতে বসেছেন।
স্নান উৎসবকে ঘিরে ঠাকুর বাড়ির পাশ ঘেঁষে ৬০ একর জায়গাজুড়ে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় কাঠ, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরী জিনিসপত্র ও খেলনা সামগ্রী, তালপাখা, চানাচুর, মিষ্টি দোকান, হোটেল-রেস্তোরার দোকান বসেছে।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের আমবাড়িয়া গ্রাম থেকে আসা বিপুল কুমার মিস্ত্রী বলেন, আমি প্রতি বছর ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িতে আসি। গত বছর করোনার কারণে আসতে পারিনি। এবার কয়েকদিন আগেই এখানে চলে এসেছি। ঠাকুরের পূর্ণভূমিতে আসতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।
উৎসবকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে ঠাকুর বাড়ি এলাকায় বসানো হয়েছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ চৌকি ও সিসি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি মতুয়া সংঘের ২ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কর্মী দায়িত্ব পালন করবেন।
স্নানোৎসব ও মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু সরকার জানান, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাবোৎসব উদযাপন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভক্তদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, প্রস্রাব-পায়খানা ও স্নান করে মহিলাদের কাপড় পাল্টানোসহ সকল ধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, করোনার কারণে পর পর দু’বছর স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা বন্ধ থাকায় এবার বেশি লোকের আগমন ঘটবে বলে আশা করছি। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার কয়েক লাখ বেশি মানুষের আগমন ঘটতে পারে। বিশে^র প্রায় ১০টি দেশ থেকে মতুয়া ভক্তরা এ ¯স্নানোৎসবে যোগদান করবেন।গোপালগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্নানোৎসবে আগত পূর্ণার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।
জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, স্নানোৎসবকে ঘিরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরো ঠাকুরবাড়ি ও তার আশপাশ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।উল্লেখ্য, গত বছরের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শনে আসেন। সেখানে তিনি হরিমন্দিরে পূজা-অর্চনা করেন ও ঠাকুর বাড়ির সদস্য এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)