বেতনা নদী খনন শেষের আগেই ধসে পড়েছে পাড়ের মাটি
সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত¡াবধানে বাস্তবায়িত শহরের অদূরে বেতনা নদী খনন কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলার ১, ২ ও ৬ পোল্ডারের পুনর্বাসন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেতনা নদী খনন শেষ হওয়ার আগেই ধ্বসে পড়েছে পাড়ের মাটি। তবে সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠান পাউবো কর্মকর্তাদের দাবি ভৌগোলিক কারণে সাতক্ষীরার মাটি অত্যন্ত দুর্বল বা কম আঠালো। যে কারণে খননের পরও ধ্বসে পড়ছে পাড়ের মাটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসকেভেটর মেশিন দিয়ে নদীর পলি মাটি উঠিয়ে পাড়েই রাখা হচ্ছে। ফলে প্রকল্পের কাজ ৪০-৫০ শতাংশ শেষ হতে না হতেই পাড়ের মাটি ধ্বসে পড়ছে নদীগর্ভে। বেতনা পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের আশঙ্কা এভাবে পাড়ের মাটি ধ্বসে ফের নদী গর্ভে পড়লে শত কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বেতনা খননে কার্যত কোনো উপকারে আসবে না তাদের।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মোট ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার ১, ২ ও ৬ পোল্ডারের পুনর্বাসন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ১১০ কোটি ব্যয়ে বেতনা নদী পুনর্খননের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ থেকে শুরু হয়ে ১৯ কিলোমিটার নদী খননের কাজ করছে ঢাকার এজেডিএল-এডিএলের (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিন মাস আগে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত গড়ে ৪০-৫০ শতাংশ হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
বেতনা নদী লাগোয়া বিনেরপোতা গ্রামের অজয় কুমার, নির্মল মন্ডল ও আব্দুর রশিদ জানান, গেল বছরের জুনে বেতনা নদী পুনর্খননে কাজ শুরু হয়েছে। এখনও কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু খনন যেভাবে হচ্ছে তা কোনো কাজে আসবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসকেভেটর মেশিন দিয়ে নদীর পলি মাটি উঠিয়ে নদীর পাড়েই রাখছে। যা বৃষ্টি পানিতে ধুয়ে পুনরায় পড়ছে নদীতে। এছাড়া অনেক স্থানে পাড় ধ্বসে পড়ছে নদীগর্ভে। তাছাড়া বেতনা নদী আগে যে রকম চওড়া বা ছিল এখন সেরকম হচ্ছে না। খননের পর নদীর প্রস্থ আরো কমে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতির শাধ্যমে নদীর অনেক স্থানে অবৈধ স্থাপনা বাদ দিয়ে খননকাজ করা হচ্ছে হচ্ছে। এতে যেমন নদী অগের তুলনায় সরু হয়ে গিয়েছে, তেমনি সরকার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বেতনা খনন করছে তা পূরণ হবে না।
সাতক্ষীরার নাগরিক নেতা আনিসুর রহিম জানান, খননের ফলে বেতনা নদী তার আগের চেহারা হারিয়ে ফেলছে। নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে যাচ্ছে। ঠিকাদার নদীর তলদেশের মাটি কেটে পাড়েই ফেলে উঁচু করে দিচ্ছে। যে কারণে পাড়ের উচু মাটি ব্যালেন্স রাখতে না পেরে ধ্বসে পড়ছে নদীর গর্ভে। এছাড়া পাড় উচু করে দেয়ায় দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে নদী অনেক গভীর হয়েছে। কিন্ত আসলে ল্যান্ড সাইডের লেভেল থেকে নদীর গভীরতা সেরকম বাড়েনি। ফলে নদী খননের আসল উদ্দেশ্য কার্যত ব্যহত হচ্ছে। তিনি জলাবদ্ধ নিরসনে সঠিকভাবে বেতনা খনেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এজেডিএল-এডিএলের (জেভি) স্বত্বাধিকারী মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যেহেতু প্রকল্পের কাজ বা বেতনা নদী খনন চলমান রয়েছে। খননকাজ শতভাগ শিডিউল অনুযায়ী করা হবে। কাজে যাতে ত্রæটি না হয় সেদিকটা সর্বোচ্চ খেয়াল করা হবে। প্রকল্প এলাকায় আমার নিয়োজিত লোক রয়েছে। তাদের বলে দেয়া হবে খননকাজে কোনো ত্রæটি যেন না হয়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাহনেওয়াজ তালুকদার জানান, বেতনা নদী পুনখনন কাজ মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে যেসব এলাকায় খননের পরও পাড় ধ্বসে পড়ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা পুনরায় মেরামত করে দিতে হবে। তাছাড়া ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সাতক্ষীরার মাটি খুবই দুর্বল বা আঠালো কম। যে কারণে পাড়ে শক্ত করে ধরে রাখতে পারছে না মাটি।
তবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদী দেখভাল করবে পাউবো। কিন্তু খাসজমি রক্ষণাবেক্ষণ জেলা প্রশাসনের এখতিয়ার। ফলে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকা না থাকার বিষয়টি জেলা প্রশাসনের ব্যাপার। এখানে পাউবো’র কিছুই করার নেই। তবে নদী খননে ত্রæটি হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, সাতক্ষীরায় বেতনাসহ যেসব নদী পুনখনন কাজ চলছে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া বেতনা, মরিচ্চাপ ও প্রানসায়ের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা অধিকাংশ উচ্ছেদ করা হয়েছে। যেসব স্থানে এখনো রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)