ইউরোপে চাকরির প্রলোভনে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার, বিচার চাইলে ধর্ষণ!
ইউরোপে আকর্ষণীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে লেখাপড়া না জানা সহজ সরল মানুষদের। জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে কাউকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়া ভিসা ও বিমান টিকিট। আর কাউকে পাচার করছে চক্রের সদস্যরা। পাচারের শিকার সবাই মধ্যপ্রাচ্যে যাপন করছে মানবেতর জীবন। প্রতিকার চাইতে গিয়ে কেউ কেউ শিকার হয়েছেন ধর্ষণের।
মানবপাচারের অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি র্যাবের।
জানা যায়, এমন প্রতারণার মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক লোকের কাছ থেকে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক কামরুল আহম্মেদ (৪২)। কৌশল হিসেবে তিনি ঘন ঘন অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করতেন।
র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কামরুলের জনশক্তি রফতানির কোনো লাইসেন্স নেই। বিভিন্ন ট্যুরিস্ট ও ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠাতেন তিনি। বেকার যুবকদের টার্গেট করে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং ভুয়া টিকিট সরবরাহ করতেন। ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরে গিয়ে প্রতারিত হয়ে তাদের টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করতেন কামরুল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, নবম শ্রেণির গণ্ডি পার হওয়া কামরুলের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যান তিনি। সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা অর্জন করেন। সেখানে একটি প্রাইভেটকার কিনে নিজেই ভাড়ায় চালাতেন। তবে করোনা মহামারির কারণে ওই প্রাইভেটকারটি বিক্রি করে ২০২১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে পুণরায় প্রতারণা এবং মানবপাচার শুরু করেন এই প্রতারক।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, সুনামগঞ্জের এক গৃহবধূ ভাগ্য বদলের আশায় ইউরোপে চাকরির জন্য শরণাপন্ন হন ঢাকায় অবস্থানরত নিজ গ্রামের তোফায়েল আহমেদ নামে এক যুবকের। টাকা নিয়ে তোফায়েল নারীকে বিদেশ না পাঠিয়ে শুরু করেন নানা টালবাহানা। উপায় না পেয়ে ওই নারী তোফায়েলের পরিচিত কামরুল আহমেদের রামপুরার বাসায় প্রতিকার চাইতে গেলে তাকে ধর্ষণ করেন তোফায়েল।
ওই নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযানে নামে র্যাব। বের হয়ে আসে তোফায়েল এবং কামরুলের মানবপাচারের তথ্য।
শুধু তাই নয়, গত ১২ এপ্রিল মৌলভীবাজার থেকে একজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর কথা বলেন জামাল মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচারের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় বিএমইটি কর্তৃক তাদের লাইসেন্স ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। একমাস পূর্বে মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এমডি জামাল মানবপাচারের দায়ে র্যাব-৩ এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
জামাল সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা এবং মানবপাচারের কাজ করে আসছেন।
গ্রেফতার খালেদ ২০০১ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ফেরত এসে তিনি রাজনগর মৌলভীবাজারে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এই ব্যবসায় তিনি সফল হতে না পেরে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেন। তিনিও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।
গ্রেফতার তোফায়েলের পেশা একজন গাড়িচালক। এছাড়াও মৌলভীবাজারে তার সিএনজি পার্টস এবং ডেকোরেটরসের ব্যবসা রয়েছে। লোভে পড়ে তিনি কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেন। কামরুলের বড় ভাইয়ের মাধ্যমে কামরুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
চক্রের মূলহোতা কামরুল আহমেদ। বিদেশ ফেরত এই প্রতারকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ২টি মামলা রয়েছে। কামরুল ও তোফায়েল ছাড়া চক্রের অন্য দুই সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ভুয়া ভিসা, বিমান টিকিট ও পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে র্যাব।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)