কালিগঞ্জের ড্যামরাইল সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী: জনদুর্ভোগ চরমে!
৫০ বছরেও রাস্তার সংস্কার না হওয়ায় চলাচলে চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিছুদূর পর পরই খালা খন্দে ভরা। আবার মাঝে মধ্যে বিশাল এক জলাশয়। এমনি দৃশ্যা দেখা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের উকশা বিজিবি থেকে ড্যামরাইল হয়ে বাঁশঝাড়িয়া বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তার দৃশ্য এটি। রাস্তাটি কাঁচা হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এ সময় রাস্তায় যেন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা নাকি খাল। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় বিভিন্ন গর্ত, খানা-খন্দ দেখা যাচ্ছে। কোন যানবাহন তো দুরের কথা, পায়ে হেঁটে পথচারীরা চলাচল করতে পারছে না। বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় কষ্ট করেই এলাকাবাসীকে এই রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার জগদানন্দপুর, মোস্তফাপুর, ড্যামরাইল, শেরকাটি, সদরকাটি, মৌখালী, বেলাট, গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান রাস্তা এটি। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কয়েক হাজার লোক যাতায়াত করে থাকে। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য এই একটি রাস্তা ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীকে এই রাস্তা ব্যাবহার করতে হয়। তাছাড়া বাঁশঝাড়িয়া ও উকশা বিজিপি সদস্যদের এই রাস্তা দিয়েই তাঁদের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দুর্গম এলাকার একটিমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যামরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের বর্ষা মৌসুমে কাঁদা রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়ীয়া ইউনিয়নের উকশা বিজিবি থেকে ড্যমরাইল হয়ে বাঁশঝাড়িয়া বিজিবি পর্যন্ত রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মাঝে মাঝে কিছু মাটি ফেলা ছাড়া রাস্তাটিতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয়দের যাতায়াতের প্রধান এই রাস্তাটি মাটির হওয়ায় বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই এলাকার হাজারো মানুষ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চলাচল করছে। উকশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ও এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তায় চলতে গিয়ে হরহামেশা দুর্ঘটনার স্বীকারও হচ্ছেন অনেকে। রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সময় মতো ঘরে তুলতে পারছে না। এমনকি তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বড় এবং ভারী কোনো পরিবহন এই এলাকায় পৌঁছানো দুরূহ ব্যাপার। যার কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়েই তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই এলাকাবাসীর দাবি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পাঁকা করণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ।
ড্যামরাইল এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক আবু সাঈদ জানান, ভ্যান চালিয়েই তার সংসার চলে। রাস্তা নিয়ে তার অভিযোগ, বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকার বাজেট হয়, কিন্তু এই রাস্তা ঠিক হয় না। জন্মের পর থেকেই রাস্তার এ দশা দেখে আসছি। কোনো সরকার বা প্রতিনিধি এ রাস্তা উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। কাঁচা রাস্তার কারণে ভ্যানটানা খুব কষ্ট হয়। একটু ভারী মাল থাকলে গাড়ি উল্টে যায়।
ড্যামরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম রহমান বলেন, বিদ্যালযে যোগদানের পর থেকে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে রাস্তাটি এ অবস্থায় দেখে আসছি। প্রথমে দেখলে এটিকে রাস্তা মনে নাও হতে পারে। মনে হতে পারে খাল-খন্দের মাঝে মাঝে সামান্য একটু রাস্তা। এলাকার বাসিন্দা ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কষ্ট করে হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। অনেক জনপ্রতিনিধি আশ্বস্ত করেছেন রাস্তা সংস্কারের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী স্বপন মন্ডল বলেন, অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা করা যায়নি। সকলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তা দিব্যি ভুলে যান। গ্রামবাসীর দাবি রাস্তাতে দ্রুত সংস্কার করে আমাদের দুর্ভোগ লাগব করবে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দপ্তরে তকদির করেছি রাস্তাটি সংস্কারের জন্য। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত আকারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ রাস্তার ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেবেন।
ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন বলেন, এক মাস আগে আমি ওই রাস্তায় ১ হাজার ৪০০ ফুট কাজ করেছি। বাকি কাজ উপজেলা পিও’র করার কথা। তবে ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আপাতত সরকারী কোন বরাদ্দ নেই।
শ্যামনগর-কালিগঞ্জের আংশিক আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার বলেন, সরকারি বরাদ্দ না থাকায় আপাতত সংস্কার সম্ভব নয়, তবে এলাকাবাসী আমার সাথে যোগাযোগ করলে ডিও লিটার পাঠাবো।
তবে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্যের নিকট বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি রাস্তাটি পাঁকা করণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। ফলে এলাকাবাসী রাস্তাটি পাঁকাকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)