গাজী মোক্তার হোসেন: সাংবাদিকতার নিবেদিত প্রাণ


এসএম শহীদুল ইসলাম: সাংবাদিক গাজী মোক্তার হোসেন আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি সোমবার (৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
গাজী মোক্তার হোসেন—নামটি সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজে খুব বেশি আলোচিত না হলেও মোটামুটি তাকে অনেকেই চিনেন। সদা শান্ত, সদা আন্তরিক এই মানুষটির সঙ্গে আমার পরিচয়ের সূত্রপাত “দৈনিক নওয়াপাড়া” পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে। সময়টা আজ থেকে প্রায় এক দশক আগের। পত্রিকাটির জন্মলগ্নেই আমি ছিলাম সেই অঙ্গনের একজন। যশোরের খ্যাতিমান সাংবাদিক প্রয়াত আসলাম হোসেনের সম্পাদনায় পত্রিকাটি যখন যাত্রা শুরু করে, তখন থেকেই ছিলাম সেই ‘আতুড়ঘর’-এর একজন সাক্ষী।
সাতক্ষীরায় “দৈনিক নওয়াপাড়া”-র পাঠকপ্রিয়তা ছিল নজরকাড়া। কেবল পাঠক নয়, লেখকরাও পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করে এক নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। ঠিক সেই সময়ই কাশেমপুরের সেলিম হোসেন যুক্ত হলেন আমাদের টিমে। আমার সঙ্গে তখনও সেলিমের পরিচয় হয়নি। আমি নাজমুল সরণির মিনি মার্কেটে পত্রিকার খবরা-খবর সংগ্রহের জন্য নিয়মিত বসতাম। একদিন হঠাৎ পরিচয় হয়ে গেল সেলিমের সঙ্গে। সেই পরিচয়ই সেতু হয়ে গেল গাজী মোক্তার হোসেনের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের।
গাজী মোক্তার হোসেন তখন সদ্য দৈনিক নওয়াপাড়ার প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। পত্রিকা অফিসের ঘোষণায় জানলাম, তিনি আমাদের নতুন সহকর্মী। ভালো লাগলো, কারণ তার কথা, ভঙ্গি, চোখেমুখের আন্তরিকতা এক ধরনের আত্মিক বন্ধনের আভাস দিচ্ছিল।
পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রতিনিধি সম্মেলনে আমাদের তিনজনের পরিচয় করিয়ে দিলেন সম্পাদক আসলাম ভাই। সাংবাদিকদের এক জমজমাট মিলনমেলায় এভাবে আনুষ্ঠানিক পরিচয় পেয়ে আমরা যেমন সম্মানিত বোধ করলাম, তেমনি পেলাম পত্রিকার পক্ষ থেকে ডায়েরি, ব্যাগ, কলম ও পরিচয়পত্র উপহার—যা আমাদের উৎসাহিত করেছিল বহুগুণে।
গাজী মোক্তার হোসেনের সাংবাদিকতা ছিল নীতিনিষ্ঠ, দায়িত্বশীল এবং সমাজদায়ী। তিনি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সন্তান হলেও বসবাস করতেন শহরের সার্কিট হাউস এলাকায়। এ শহরের সাংবাদিক সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কারো প্রশ্ন থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না। তিনি আমৃত্যু সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ক্লাবের দায়িত্ব বহন করেছেন নিষ্ঠার সাথে। ক্লাবের প্রতিটি সদস্যের কাছে ছিলেন সমান শ্রদ্ধেয়। তিনি সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ একেবারেই পছন্দ করতেন না। চেষ্টা করতেন সবাইকে এক ছাতার নিচে আনার। কারো মতভেদ হলে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলতে চাইতেন।
সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের জন্য ছিলেন সক্রিয়। কখনো কারো অসম্মান সহ্য করতে পারতেন না। বরং নবীনদের উৎসাহ দেওয়া, লেখালেখিতে বৈচিত্র্য আনা এবং পেশাগত মান উন্নয়নে তিনি ছিলেন সচেষ্ট।
ব্যক্তি গাজী মোক্তার হোসেন ছিলেন সাদামাটা, মাটির কাছের মানুষ। তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার পেশাগত জীবনকে শাণিত করেছে। তাঁর মতো একজন সহকর্মীপাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়।
আজ তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর অবদান, সততা, পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতা সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।
আমরা যারা তার সান্নিধ্যে এসেছি, জানি—তিনি ছিলেন একজন প্রচারবিমুখ মানুষ।
সালাম ও শ্রদ্ধা গাজী মোক্তার হোসেন ভাইকে। শান্তিতে ঘুমান। আপনি থাকবেন আমাদের স্মৃতিতে, আমাদের কাজে, আমাদের কলমের প্রতিটি ছোঁয়ায়।
লেখক :
এসএম শহীদুল ইসলাম,
বার্তা সম্পাদক, দৈনিক পত্রদূত, সাতক্ষীরা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

সাতক্ষীরায় শ্বশুরবাড়ী যেয়ে শাশুড়ীর মাথা ফাঁ*টালেন জামাতা!
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদরের বাঁশদহা ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে শাশুড়ী আছিয়া খাতুনের মাথাবিস্তারিত পড়ুন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবসসমূহ পালনে সাতক্ষীরায় সভা
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের নিমিত্ত সাতক্ষীরা জেলা বাস্তবায়নবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে মদ-ফেনসিডিলসহ সাড়ে ১০লক্ষ টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ
সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা ১৯ বোতল ভারতীয়বিস্তারিত পড়ুন