খবর দৈনিক যুগান্তরের
টয়লেট নির্মাণ প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় ৭৩ কোটি টাকা


উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ নিতে গেলে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পালন করা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে পরামর্শক নিয়োগে এক ধরনের অলিখিত বাধ্যবাধকতা থাকে।
এবার টয়লেট নির্মাণ, পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যবিধি শেখানো সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের তিন খাতে ৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার পরামর্শক ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যয় আরও বেশি ছিল। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে কিছুটা কমে এ অঙ্ক দাঁড়িয়েছে।
খবর দৈনিক যুগান্তরের।
কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। প্রকল্পের আওতায় ওয়াশ (ওয়াটার, হাইজিন, স্যানিটেশন) সুবিধার আওতায় আসবে গ্রামের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ।
পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ বিষয়ে আমি জানতে চেয়েছিলাম। পরে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসে আমার সঙ্গে আলোচনাও করেছেন। তবে ‘সব সময় সব কথা বলা যায় না’- এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্পে এ রকম পরামর্শক ও বিভিন্ন মিটিংয়ের নামে বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু যতটা সম্ভব এ খাতে ব্যয় কমানো উচিত। এছাড়া যেসব কার্যক্রম করা হবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরের পাশাপাশি ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিওর ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেসব কাজে লাগানো উচিত। তবে আর্সেনিকযুক্ত এলাকায় কিছুটা কারিগরি কার্যক্রমের জন্য পরামর্শক লাগতে পারে। সেটি এত টাকা বা এত ধরনের কাজে নয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা বিভাগ) আরিফ আনোয়ার খান বলেন, যাচাই-বাছাই করেই এসব পরামর্শক এবং ব্যয় ধরা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে, তারপর পরিকল্পনা কমিশনেও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এভাবে ধাপে ধাপে পর্যালোচনা করেই এসব ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া একেক পরামর্শকের একেক ধরনের কাজ। এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা ১ হাজার ৮৮২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫০ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ সহায়তা থেকে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় যেসব কার্যক্রম করা হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রকল্প এলাকার অতিদরিদ্রদের জন্য ৩ লাখ ৫১ হাজার ২৭০টি টয়লেট তৈরি করে দেয়া হবে।
এ খাতে ব্যয় হবে ৭৭২ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪১ দশমিক ০৫ শতাংশ। এছাড়া ৭৮টি লার্জ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম বাস্তবায়ন করা হবে। সেই সঙ্গে ৩ হাজার ৩৬৪টি কমিউনিটি পর্যায়ে পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৩৫২টি পাবলিক স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, ৭৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে টয়লেট রানিং ওয়াটার সুবিধা সৃষ্টি, কোভিডের কারণে হাত ধোয়ার জন্য পানি সুবিধাসহ ৮৮২টি স্টেশন নির্মাণ এবং কোভিড-১৯ রোধে প্রয়োজনীয় উপকরণাদি সরবরাহ করা হবে।
আরও থাকবে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কার্যক্রম। এসব কার্যক্রম সংবলিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পিএমইউর জন্য ১ হাজার ৬২৪ জনমাস পরামর্শকের পেছনে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। এছাড়া ৩৪০ জনমাস প্রি-ফিজিবিটি স্টাডি, ডিজাইন অ্যান্ড সুপারভিশন টিএ কনসালটেন্সির জন্য চাওয়া হয়েছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর ক্লাইমেট হট স্পট (কোস্টাল এরিয়াস) নির্ধারণে ১৭৮ জনমাস পরামর্শকের জন্য ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। যেটি মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত ১৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার সুপারিশে বলা হয়েছিল, পিএমইউ অঙ্গে পরামর্শক সেবার ব্যয় ন্যূনতম পর্যায়ে সংস্থান রাখতে হবে।
এছাড়া প্রকল্পের কার্যক্রম বিবেচনায় প্রয়োজনে নিরিখে প্রস্তাবিত পরামর্শকের কার্যক্রম ও জনমাস নির্ধারণের বিষয়টি রিভিজিড করে এ অঙ্গে প্রস্তাবিত অর্থ যৌক্তিক হারে হ্রাস করতে হবে। উপকূলীয় এলাকার সমীক্ষা অঙ্গসহ সব পরামর্শকের টিওআর পুনর্গঠিত ডিপিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পে ছকে পরামর্শকদের সংস্থান পৃথকভাবে দেখাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে পরামর্শক রাখতেই হয়। তারপরও আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা ব্যয় কমাতে পেরেছি। কিন্তু তারা (উন্নয়ন সহযোগীরা) সাধারণত কমাতে চায় না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায়িত্ব অন্তবর্তী সরকারকেই নিতে হবে
দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহত যোদ্ধাদের দায়িত্ব নেওয়া ওবিস্তারিত পড়ুন

৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’, সাধারণ ছুটি ঘোষণা
৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করে ওই দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণাবিস্তারিত পড়ুন

ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় জাতিসংঘের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধ ও নৈতিক মান বজায়বিস্তারিত পড়ুন