ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে বিশ্ব, মৃত্যু হবে ৩ কোটি মানুষের!


বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কভিড-১৯ মহামারি লাখো মানুষকে ক্ষুধা ও অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল বিশ্বের ৩ কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য এই মুহূর্তে ৪৯০ কোটি ডলার দরকার। দ্রুত সাহায্যের হাত না-বাড়ালে চরম খাদ্য সংকটে না খেতে পেয়ে এক বছরের মধ্যে অন্তত ৩ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে।
করোনার তাণ্ডবে এমনিতেই থেমে আছে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা। থেমে আছে উৎপাদন, বিপণন ও কল-কারখানা। এই অবস্থায় সংস্থাটির প্রধান ডেভিড বেসলে এ ব্যাপারে সতর্ক করে মানুষের বেঁচে থাকা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। একইসঙ্গে বিশ্বের সব ধনী দেশ ও কোটিপতিদের প্রতি দ্রুত সহায়তার হাত বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ডেভিড বেসলে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে তিন ডজনেরও বেশি দেশে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। যা সংঘাতে বিধ্বস্ত দেশগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আফ্রিকার দেশ কঙ্গো ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। দেশটির ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে তহবিল সংকটের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মানবিক ত্রাণ সহায়তা কাটছাঁট করা হয়েছে। এছাড়া কভিড-১৯ মহামারির কারণে নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ সুদানে লাখ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে বলে জানান তিনি।
সম্ভাব্য ক্ষুধা মহামারির ব্যাপারে পাঁচ মাস আগে সতর্ক করে দেয়ার পর ব্যবস্থা নেয়ায় একটি দুর্ভিক্ষ এড়ানো গেছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ডব্লিউএফপির প্রধান বেসলে। তবে তিনি এও বলেছেন, অনাহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো ২৭ কোটি মানুষের আরও বেশি সহায়তা দরকার।
ডব্লিউএফপির প্রধান বলছেন, বিশ্বের ইতিহাসের এ অস্বাভাবিক সময়ে যাদের কিছুই নেই, তাদের সহায়তায় সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার এখনই সময়। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে দুই হাজারের বেশি বিলিয়নেয়ার রয়েছেন, যাদের সম্পদের পরিমাণ ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিলিয়নেয়ার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার গড়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার বলছে, মহামারির পর থেকে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বাল্টিমোর, টেসলার সিইও ইলোন মাস্ক, ক্যাসিনো ম্যাগনেট শেলডন অ্যাডেলসন ও অন্য বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেসলে বলেন, আমি মানুষের অর্থ বানানোর বিপক্ষে নই, তবে মানবতা আমাদের জীবনকালের সবচেয়ে বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইয়েমেনের পরিস্থিতি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। মহামারির আগে থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল উপসাগরীয় দেশটি।
জাতিসংঘের প্রাক্কলন, ইয়েমেনের প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশই বেঁচে থাকতে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে। গত বৃহস্পতিবার ইয়েমেনে ২ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছে কুয়েত।
নিরাপত্তা পরিষদে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্ক লুউকক সতর্ক করেন, ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ ফের কড়া নাড়ছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মতো উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ দিচ্ছে না। যুদ্ধের জন্য প্রধান দায়ী এ দেশগুলো চলতি বছরের বার্ষিক সহায়তা হিসেবে এখনো কিছু দেয়নি। ফলে দিনদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। খবর এএফপি ও সিএনবিসি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
