সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় আগে টিকা, প্রাধান্য পাবে ১০ শ্রেণির মানুষ


করোনার সংক্রমণ বেশি যে এলাকায় সেখানেই আগে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। ১০ শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে তৈরি হয়েছে ভ্যাকসিন পরিকল্পনা। তবে কে আগে পাবেন, তাকে কীভাবে বাছাই করা হবে তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পেশাজীবীসহ সাধারণ নাগরিকদের সঠিক ডাটাবেজ না থাকায় এই অগ্রাধিকার নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছে।
তবে যারা টিকা নিতে চান তাদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য সহযোগিতা করবে এটুআই ও আইসিটি বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়। সেখানে প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এ প্রতিষ্ঠানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক জানান, জাতীয় পরিকল্পনাতে ভ্যাকসিন দেয়ার তালিকায় দশ ধরনের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন দুই লাখ ১০ হাজার। সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী আছেন তিন লাখ, বেসরকারি কর্মী সাত লাখ। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও কর্মী আছেন আরও দেড় লাখ। এছাড়া গণমাধ্যম কর্মী রয়েছেন ৫০ হাজার। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাঁচ হাজার ব্যক্তি রয়েছেন এই তালিকায়।
অগ্রাধিকার তালিকায় আছে পুলিশ বাহিনীর ৫ লাখের বেশি সদস্য। এদের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশদের আগে দেয়ার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ষাটোর্ধ্বদের। তাদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রাধান্য পাবে ক্যান্সার, যক্ষ্মা ও ডায়াবেটিকে আক্রান্ত রোগীরা। এমন রোগীদের ধরা হয়েছে এক লাখ দুই হাজারের মতো।
এছাড়া সেনাবাহিনী জন্য ধরা হয়েছে তিন লাখ এবং সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি ধরা হয়েছে ৭০ হাজার। ডা. শামসুল হক জানান, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ২৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ভ্যাকসিন সংরক্ষণে ৬৪ জেলায় কোল্ডচেইন প্রস্তুত করা হচ্ছে। হাম ও রুবেলা টিকাদান কার্যক্রম শেষ হলেও স্টোরেজ খালি হয়ে যাবে। সেখানে করোনার টিকা রাখতে সমস্যা হবে না।
রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিকভাবে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাদের আগে দেয়া হবে, তাদের বাছাই করার পদ্ধতি কী তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পেশাজীবীসহ দেশের সাধারণ মানুষের কোনো ডাটাবেজ করা নেই। পুলিশ বা চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে প্রাপ্যতার অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা কঠিন। সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পরে উপস্থিত কর্মকর্তাদের একটি অংশ দেশের যে এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়ার পক্ষে মত দেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পাঠনো হয়েছে। তবে ‘লাইভ আইটেম’ হওয়ায় কিছু পরিবর্তন হতে পারে। সেখানে ভ্যাকসিন কীভাবে, কাদের দেয়া হবে, প্ল্যানিং কোঅর্ডিনেশন কীভাবে হবে, জেলা পর্যায়ের কমিটিতে কারা থাকবে, কারা কাজ করবে এসব আছে।
এছাড়া প্রায়োরিটি গ্রুপে কারা, ভ্যাকসিন দেয়ার সময় সার্ভিস ডেলিভারি কীভাবে হবে, ভ্যাকসিন ডেলিভারির সঙ্গে সম্পর্কিত লজিস্টিক, কোল্ড চেইন মেইনটেইনের বিষয়ও এতে রাখা হয়েছে। কমিউনিকেশন, সার্ভিলেন্স, ভ্যাকসিন দেয়ার পর যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় সেক্ষেত্রে কী করতে হবে, মনিটরিং কীভাবে হবে এ ধরনের সব বিষয়েই সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে কোন পদ্ধতিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচি ও আইসিটি বিভাগ এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ভ্যাকসিন সম্পর্কিত সব ধরনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রণীত কর্মপরিকল্পনা পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন এবং ওয়ান হেলথ গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ নাভেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্মারকের আলোকে সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিন পরিবহন ব্যয়সহ প্রতিডোজের মূল্য ৫ ইউএস ডলার নির্ধারণ করা হয়। ভ্যাকসিনের অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের জন্য আরও সোয়া ডলার ধার্য করা হয়েছে। এতে প্রতিডোজ ভ্যাকসিনের খরচ দাঁড়িয়েছে সোয়া ৬ ডলার।
প্রাথমিক পর্যায়ের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট দাম ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার পাঁচশ’ ৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
