সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব কমিটির অগঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে উদ্বেগ সাংবাদিক নেতাদের
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিক কর্মকান্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি সম্পাদকসহ স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকবৃন্দ।
এ ব্যাপারে প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
১৩ জন সাবেক সভাপতি, সম্পাদক ও স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠিটি ১২ সেপ্টেম্বর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চিঠিতে গভীর উদ্বেগের সাথে বলা হয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ৩ জন সাধারণ সদস্য ও ১ জন সহযোগী সদস্যের সদস্যপদ বাতিল এবং ১৪ জন সহযোগী সদস্যের সদস্য পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ‘প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে দুইজন সদস্যকে কারণ দর্শানের নোটিশ প্রদান ও ‘অর্থ আত্মসাত’ এর অভিযোগে দুইজন সদস্যকে উকিল নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উক্ত সিদ্ধান্তের কিছু অংশ প্রেসক্লাব প্রদত্ত প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এবং কিছু অংশ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের নিকট থেকে অবহিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রে সদস্যপদ বাতিল সংক্রান্ত বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান সন্নিবেশিত রয়েছে। যা নিন্মরূপ-
ধারা-৪.৫ সদস্যপদ বাতিলের নিয়ম:
ক) যদি কোন সাধারণ সদস্য সাংবাদিকতা পেশা ত্যাগ করেন অথবা যে পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন সেই পত্রিকা ত্যাগ করেন অথবা অন্যকোন কারণে পত্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হন এবং পরবর্তী ৬(ছয়) মাসের মধ্যে অন্যকোন পত্রিকায় সংযুক্ত না হন তবে উক্ত সদস্যদের সাধারণ সদস্যপদ বাতিল হবে। পরবর্তীতে তিনি নতুন পত্রিকার সাথে যুক্ত হওয়ার পর প্রমানপত্রসহ আবেদন করলে তিনি সরাসরি সাধারণ সদ্যস্যপদ গ্রহণ করতে পারবেন।
খ) সাধারণ পরিষদের সভায় সাধারণ সদস্য ও সহযোগী সদস্যপদ বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে কার্যনির্বাহী কমিটি কোন সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর কোন অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করা, সংশ্লিষ্ট সদস্যকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া, পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন।
কিন্তু কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনতন্ত্রের উক্ত বিধান পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৩ জন সাধারণ ও ১৫ জন সহযোগী সদস্যের সদস্যপদ বাতিল অথবা স্থগিত করেছেন।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, এনএসআই এর উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন, ডিজিএফআই এর সহকারী পরিচালক খন্দকার আরিফুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল কবির, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার মো. আল আমিন এবং সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপি ও সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ এর নেতৃত্বাধীন কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে ১০৪ জনকে সাধারণ সদস্যপদ ও ১৫ জনকে সহযোগী সদস্যপদ প্রদান করে একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গত ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে বর্তমান কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। সাত সদস্য বিশিষ্ট উক্ত কমিটি কর্তৃক প্রণীত ভোটার তালিকায় উল্লেখ করা হয় ‘নতুন সদস্যপদ প্রাপ্তির আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের নাম এ তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়নি তাদের সদস্যপদ প্রাপ্তির বিষয় পরবর্তীতে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটিকে বিবেচনার সুপারিশ করা হলো’। কিন্তু নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি সেই ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই সদস্যপদ বাতিল ও স্থগিতের নামে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রক তৎপরতা শুরু করেছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীগণ আরো উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেছেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপির নেতৃত্বে প্রেসক্লাবের সাবেক নেতৃবৃন্দ ও কতিপয় সদস্য সম্পর্কে প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে ও বিভিন্ন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে নালিশের সুরে মানহানিকর, উস্কানি ও প্রতিহিংসামূলক বিভিন্ন কথাবার্তা বলে চলেছেন। কার্যনির্বাহী কমিটির সভার প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে চরম আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং ব্যক্তিগত আলোচনায় সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এসব আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে চলেছেন।
শুধু তাই নয়, প্রেসক্লাব সদস্যদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের ঘটনাগুলো মীমাংসার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো উস্কানি দিয়ে সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ইয়ারব হোসেন, সাপ্তাহিক মুক্ত স্বাধীন সম্পাদক মো. আবুল কালাম এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের মিডিয়া জগত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কতিপয় ধারার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সাংবাদিকদের হয়রানীর বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন করছে তখন প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের পৃষ্টপোষকতায় একজন সাংবাদিক কর্তৃক আরেকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা বর্তমান সময়ে একটি সাংঘর্ষিক আচরণ বলে বিবৃতি বলা হয়েছে। একই সাথে এই মামলা করে তা তুলে নেওয়ার নামে একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে পুলিশের নামে টাকা আদায়ের মতো গর্হিত কাজ করা অনৈতিক বাণিজ্যের শামিল বলে বিবৃতি উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সাংবাদিক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে, সেটি গত ১০-০৪-২০২১ তারিখে প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কালিগঞ্জ উপজেলার কাঁকশিয়ালি গ্রামের মৃত মান্দার আলী গাজীর স্ত্রী বাক প্রতিবন্ধী নছু বিবি থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উক্ত সংবাদ সম্মেলনটি করেন। এর আগে ঐ মহিলা সংবাদ সম্মেলন করার জন্য সাংবাদিক রবিউল ইসলামের সহায়তা চাইলে তিনি তাকে প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা সেলিম রেজা মুকুলের কাছে নিয়ে যান এবং মহিলাকে গরিব হিসেবে উল্লেখ করে তার কাছ থেকে প্রেসক্লাবের হলরুম ব্যবহারের ভাড়া অর্ধেক নেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু এই ঘটনাকে রং-চং মাখিয়ে সাংবাদিক রবিউল ইসলামের এই ভূমিকাকে বিকৃতভাবে এবং তাকে একজন অপরাধী হিসেবে পুলিশের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর একমাস পর গত ৯ মে ২০২১ তারিখে কালিগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় রবিউল ইসলামকে ৫নং আসামী করা হয়। এই মামলা দায়েরের পর অপপ্রচারের বিষয়টি আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে। যার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
বিবৃতি বলা হয়েছে, পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে এবং রবিউল ইসলাম মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি এ ব্যাপারে সাংবাদিক রবিউল ইসলামের পাশে না দাঁড়িয়ে মামলার কারণ দেখিয়ে তার সদস্যপদ বাতিল করেছে। অথচ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে নাশকতাসহ এমন অনেক মামলার আসামি, এমন কি আদালতের রায়ে সাজা ভোগকারী ব্যক্তিও সাধারণ সদস্য ও কর্মকর্তা হয়ে আছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে ব্যাপক তথ্য অনুসন্ধানের পর একটি সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়কদের নামের তালিকা এবং কার্যকাল উল্লেখ করে একটি অনার বোর্ড স্থাপন করা হয়। কিন্তু বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি সাধারণ সভার সেই সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে অনার বোর্ডটিতে ইতোপূর্বের বিভিন্ন তারিখ মেয়াদ উল্লেখ করে সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জী, মমতাজ আহমেদ বাপি ও মোহাম্মদ আলী সুজনের নাম অর্ন্তভূক্ত করেছেন। এছাড়াও বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর সহকারী জজ আদালতে এবং মহামান্য আ্যাপিলেট ডিভিশনে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সংক্রান্ত দুটি মামলা বিচারাধীন ও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়া সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জীকে আইন-শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, সাংবাদিক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপদস্থ করার মতো ঘটনাবলীর প্রতিবাদ করেনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব। এটা অনাকাঙ্খিত।
নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষরিত উক্ত বিবৃতিতে, গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে যে সকল সদস্যের সদস্যপদ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে এবং যাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও উকিল নোটিশ দেওয়ার কথা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে তা আগামী সাধারণ সভার পূর্বে প্রত্যাহার এবং উল্লিখিত বিষয় সমূহ সাধারণ সভায় আলোচ্য সূচিতে অর্ন্তভূক্ত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি মো. আনিসুর রহিম, সাবেক সভাপতি জিএম মনিরুল ইসলাম মিনি, সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ, সাবেক একাংশের সভাপতি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস, সাবেক একাংশের সাধারণ সম্পাদক কাজী শহিদুল হক রাজু, দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী ও দৈনিক পত্রদূত এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সদস্য আব্দুস সামাদ প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)