হাসপাতালেই থাকছেন খালেদা জিয়া
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার স্থায়ী উন্নতি হয়নি। শনিবারও অল্প পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে রিপোর্টে এসেছে। এদিন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক হয়। এতে করোনার কারণে শঙ্কা থাকলেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এখনই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া নতুন আরও কয়েকটি পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাকে আরও এক সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। মোটামুটি ঝুঁকিমুক্ত হলেই বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
শনিবার রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক এ তথ্য জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আগের মতোই আছেন। এখন কিছুটা স্থিতিশীল বলা যায়। কেবিনে স্থানান্তরের পর বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হয়নি। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, করোনা বাড়ছে, এ বিষয়ে চিকিৎসকরা অবগত আছেন। তাদের সিদ্ধান্ত ছাড়া তো তাকে বাসায় নেওয়া সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, প্রথমবার ‘ম্যাডাম’ করোনা পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে হাসপাতাল থেকেই আবার তার করোনা সংক্রমিত হয়। এজন্যই এবার ভয় কাজ করছে। হাসপাতালে প্রচুর কোভিড রোগী আসা যাওয়া করছে। কেবিনেও নার্স, স্টাফ, আয়া, ক্লিনারসহ অনেকেই যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারেন। মেডিকেল বোর্ড এজন্যই খালেদা জিয়াকে বাসায় রেখে চিকিৎসার চিন্তা করেছিল। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা স্বস্তিদায়ক নয়। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত- তার অবস্থা আজ ভালো তো কাল খারাপ। সবচেয়ে ভয়ের কারণ রক্তক্ষরণ যা শনিবারও অল্প পরিমাণে হয়েছে। এটি কোনোভাবেই পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। রক্তের হিমোগ্লোবিন হু-হু করে কমে যায়। আবার সময় নিয়ে একটু বাড়ে।
তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের ডায়াবেটিসও কখনো নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ইনসুলিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। এজন্য কেবিনে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিসিইউর সাপোর্টও রাখা হয়েছে। ইলেকট্ররাইল ইমব্যালেন্স অর্থাৎ খনিজে অসমতা দেখা দিচ্ছে মাঝেমধ্যে। এজন্য শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যায়। রুচি কমে যায়।
মেডিকেল বোর্ডের ওই সদস্য আরও জানান, ‘ম্যাডাম’ হাসপাতালে থাকতে চান না। তিনি বাসায় যেতে চাচ্ছেন। আর এই বয়সের একজন মানুষকে টানা হাসপাতালের বিছানায় থাকা ভীষণ যন্ত্রণার। চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করে বাসায় নেওয়া হলে তো আবারও হাসপাতালে নিতে হবে। তাই বারবার আনা-নেওয়া তার জন্য খুব ক্ষতি। কারণ করোনা বাড়ছে চার দিকে। তাকে দেখভাল করেন এমন একজন সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও ম্যাডামের নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ পাওয়া গেছে। শনিবার বোর্ডের বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার কেবিনে চলাচল একেবারে সীমিত করা হয়েছে। কেবিনে প্রবেশের আগে নার্স ও স্টাফদেরও তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাইরে থেকে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে দেশের বাইরে নিয়ে যত দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে, ততই তার জন্য মঙ্গল। দেশে যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব তা দেওয়া হয়েছে। তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে উন্নত সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এটি আমরা পরিবারকে বারবার এড্রেস করছি।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ওইদিন তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার তার শরীরে রক্তক্ষরণ হয়। দীর্ঘদিন সিসিইউতে থাকার পর গত ৮ জানুয়ারি তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৬ বছর বয়সি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)