কলারোয়ায় মানুষের নদী পারাপারে ভ্যান চালকের ড্রামের সাঁকো
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের কোঠাবাড়ী ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের রায়টা বাজার। মাঝখানে বেত্রবতী তথা বেতনা নদী। ওই দুই এলাকার যাতায়াতের একমাত্র পথ নদীর উপর বাঁশের সাঁকো। যুগ যুগ ধরে হাজারো মানুষের একমাত্র সেই বাঁশের সাঁকো আজো আলোর মুখ দেখেনি। সেখানে পাকা সেতু নির্মাণ না হওয়ার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে অনেকের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বাঁশের সাঁকোটি কয়েক বছর অন্তর অন্তর করতে হয় সংষ্কার। স্থানীয়রা নিজেদের অর্থ আর পরিশ্রম দিয়ে বাঁশের সাঁকো মেরামত করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান।
সেই বাঁশের সাঁকো গা ঘেষে এবার মানুষের চলাচলের জন্য নিজ অর্থে প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে সাঁকো তৈরি করেছেন এক ভ্যান চালক।
জানা গেছে, বাঁশের তৈরী সাঁকো এতোই ছোট যে একজন মানুষ ভাল ভাবে পারাপার হতে পারে না। অনেক দূর থেকে কোন মানুষ বাইসাইকেল নিয়ে আসলে ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে পারেন না।
এ বিষয় নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোন পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে ওই এলাকার সাধারণ মানুষেরা জানান।
এর মধ্যে গত ৪ মাস পূর্বে ৫৮ বছর বয়সী শেখ সোবহান আলী নামের এক ভ্যান চালক কোঠাবাড়ী-রায়টা এলাকার মানুষের কথা বিবেচনা করে তার একটি ইঞ্জিন ভ্যান বিক্রয় করে দিয়ে বিক্রয়ের সেই টাকা ও তার কাছে জমানো ২ লাখ টাকা দিয়ে ওই স্থানে ৩২টি ড্রাম দিয়ে একটি ভাসমান সেতু তৈরি করেন। বর্তমানে ওই সেতু দিয়ে মানুষ ভাল ভাবে চলাচল করছেন। বাঁশের সাঁকোর পাশ দিয়ে ড্রামের সেতু সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভ্যান চালক শেখ সোবহান আলী জানান, ‘তিনি যশোরের ঝুমঝুমপুর থেকে কলারোয়ায় এসেছেন ৪১ বছর আগে। এখানে এসে রায়টা গ্রামের বিয়ে করেন। তার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীতে ৩ শতক জমি কিনে একটি বসত বাড়ী নির্মাণ করেন। বর্তমানে ২ মেয়ে মারুফা ও হালিমা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন। ২ ছেলে ইয়াছিন ও ইমরান মালয়েশিয়ায় কাজ করেন। এখন তিনি আর ভ্যান চালান না।’
তিনি আরো জানান, ‘কোটাবাড়ী ও রায়টার নদীর মাঝে ভাসমান সেতু নির্মাণ করে সেখানে একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন। ওই চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ৪/৫’শ টাকা বেচাকেনা করেন। আর ভাসমান সেতু থেকে মানুষ পারাপারে যে যা দেন সেই যতসামান্য টাকা উত্তোলণ করেন। সেখান থেকেও প্রতিদিন প্রায় ১’শ টাকার মতো আয় করেন। এই টাকা দিয়ে তিনি সংসার চালান।’
তিনি বলেন, ‘নিজে লেখাপড়া না জানলেও তার ছেলে ও মেয়েদের স্কুল ও কলেজে পড়িয়েছেন।’
এদিকে এলাকাবাসী অতিদ্রুত কোঠাবাড়ী-রায়টার ওই স্থানের বেত্রবতী নদীতে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)