পানের বাজার মূল্য কম থাকায় দিশেহারা পান চাষীরা
পান চাষ একটি লাভজনক ফসল কিন্তু পানের বাজার মূল্য কম থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পান চাষীরা। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না, কোন উপায়। পান চাষ লাভজনক ফসল হলেও খরচও মোটা অংকের, পান বরজের বিঘাপ্রতি বছরে খরচ হয় ১/১.৫ লক্ষ টাকা।
করোনার সময় থেকে পানের বাজারে ধস নেমেছে সেখান থেকে পান চাষীরা পান বিক্রি করে পান বরজের খরচ যোগাতে পারছেন না। এদিকে পান বরজের খরচ দিন কে দিন বেড়েই চলেছে।
পানের প্রধান খাদ্য খৈল যার মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ কেজির বস্তা প্রতি ৩/৪ হাজার টাকা, যার ১ বছর আগের মূল্য ছিলো ২/২.৫ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই থেকে তিন বার পান বরজে খৈল দিতে হয় শুধু তাই নয় জোন মজুরি, বাঁশের শলা, বাঁশ, ক্যাশি বরজের চালে ছাউনির জন্য ব্যাবহার করতে হয়, এসবের মূল্য দ্বিগুন হারে বেড়েছে কিন্তু পানের মূল্য পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। এমত অবস্থায় কৃষকেরা দিশেহারা প্রায়।
করোনা ভাইরাসের লকডাউন থেকে পানের মূল্য হ্রাস পেয়ে বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে পান চাষে চরম লস ও দিশেহারা হয়ে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা।
পূর্বে যে পানের পোন প্রতি ২৫০/৩০০ টাকায় বিক্রি হতো বর্তমান বাজারে ঐ পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০/৬০ টাকায় ,আগে যে পান ৮০/১০০টাকা বিক্রি হত এখন সেই পান পোন প্রতি ২০/৩০ টাকা, ২৫/৩০ টাকার পান বর্তমান বাজার মূল্য ৫/১০ টাকা।
কলারোয়া উপজেলার জয়নগর এলাকার পান চাষী আনন্দ দাস জানায় আম্পানে তার ৭ বিঘা বরজ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলো, সেটি দাঁড় করাতে ১০/১২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিলো, পান বিক্রি করে খরচ ওঠাবেন ভেবেছিলেন কিন্তু পান চাষের খরচ পান বিক্রির টাকায় হচ্ছে না খরচ ওঠাবেন কিভাবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন বর্তমানে ৪/৫ গাদি পান বিক্রি করে যে টাকা পাচ্ছেন, তা আগের এক গাদি পানের দামের সমান।
বিধান দাস জানিয়েছেন, তিনি ২বিঘা জমিতে পান চাষ করেছেন, প্রতি বছর দুই বিঘা জমিতে পানের পরিচর্যা ও আনুসঙ্গিক খরচ হয় ২.৫/৩ লক্ষ টাকা। পানের বাজার মূল্য কম থাকায় পান বিক্রির টাকায় পানের পরিচর্যা খরচ তো দুরের কথা, আষাঢ় ও ভাদ্র মাসের বরজ বাঁধার খরচ ওঠানো মুশকিল। ধারদেনা ও লোনের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এমত অবস্থা চলতে থাকলে পান চাষের আগ্রহ হারাবে বলে জানান তিনি।
একই ইউনিয়নের কৃপারামপূর গ্রামের হান্নান খাঁ জানিয়েছেন তারও ১বিঘা বরজ মাটিতে শুয়ে পড়েছিলো, ওঠাতে যে খরচ হয়েছিলো সে খরচ ওঠানো সম্ভব নয় বর্তমান পান বিক্রির টাকা দিয়ে। ঋণ হয়ে বরজ চাষের খরচ যোগাচ্ছেন। এমত অবস্থায় সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
জয়নগর ইউনিয়নের সব পান চাষীরা একই তথ্য জানান, করোনার সময় থেকে পানের বাজারে ধস নেমে এখনও বিরাজ করছে একই অবস্থা। পানের বাজার মূল্য কম থাকায় ঋন ও জোন মজুরির টাকা কি ভাবে শোধ করবে তার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেক পান চাষীরা লোন নিয়ে পান চাষ করে তারা এখন চরম বিপাকে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বেশির ভাগই পান বিক্রি হয়, ঝাওডাংগা,পাটকেলঘাটা,কেশবপুর সব কয়টি বাজারে পানের দাম তিন ভাগের এক ভাগ আর সেটি এখন পান চাষিদের দুশ্চিন্তার কারণ।
পান বিক্রির টাকায় সংসার চালানো তো দুরের কথা বরজ চাষের খরচও ওঠাতে পারছেন না। সংসার ও বরজ চাষের খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অন্য দিকে বরজের জোন মজুরি লাগাম হীন ভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন ৫/৬ঘন্টা বরজের কাজের মজুরি ৬০০/৮০০টাকা। এমনি ভাবে পানের দাম কম থাকলে পান চাষীরা পান চাষের আগ্রহ হারাবে এমনটি ধারনা করছেন এলাকার বিশিষ্ট বেক্তিরা। তবে সরকারি সহায়তার জন্য পান চাষীরা বিনিত আকুতি জানিয়েছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)