হার না মানা উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প
ফেসবুকে বদলেছে বেনাপোলের জান্নাতুনের ভাগ্য
সময় এসেছে পরিবর্তনের। জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে ইটারনেট এর প্রসারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আর্থ সামাজিক অবস্থা।
ইন্টারনেটের বদৌলতে ব্যবসা পৌঁছে গেছে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও। নারী পুরুষ কেউ পিছিয়ে নেই। ঘরে বসেই চলছে অনলাইনে রমরমা ব্যবসা। তবে অনলাইন ব্যবসার প্রচার ও প্রসারে নারীরাই এগিয়ে।
ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডাটাবেজ পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান-২০১৯-এর তথ্য মতে, পৃথিবীর মাত্র দুই শতাংশ নারীর কাছে তাদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধন থাকে। যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০ জনে দুই জন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। বাংলাদেশে মোট উদ্যোক্তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই নারী। নারী উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
নারীরা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। তাদের ব্যবসায়িক পণ্যের মধ্যে রয়েছে—শাড়ি-পোশাক, রূপসজ্জা, গৃহসজ্জা, বিভিন্ন পদের তৈরি খাবার, অফিসের জন্য দুপুরের খাবার, মিষ্টান্ন পণ্য, বেকারি পণ্য, চকলেটসহ যাবতীয় পণ্যসামগ্রী। নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্ল্যাটফরম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম—‘উই’ বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের অন্যতম ভরসার প্ল্যাটফরম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।
হার না মানা নারী জান্নাতুনের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প:
সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসদরের ঝিকরা হরিতলা গ্রামের কাজী আজিজ হাসান হেলাল ও ঝরণা বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্য সেজ মেয়ে জান্নাতুন হয়াত। পলিটিক্যাল সাইন্সে মাস্টার্স শেষ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন যশোরের বেনাপোলের আবু হয়াত এর সাথে। বর্তমানে তিনি একটি ফেইসবুক পেজকে পুঁজি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ৬০ হাজার টাকা।
শুরুটা যেভাবে:
জান্নাতুন জানান, অন্যের অধীনে নয় নিজের অধীনে থেকেই স্বাধীন ভাবে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। এই কারণে পড়াশোনা শেষ করেও চাকরিটা করে ওঠা হয়নি।। ছোটবেলা থেকেই মনের ভিতরে সুপ্ত বাসনা ছিল ফ্যাশন বিষয়ক কিছু নিয়ে কাজ করার। কিন্তু পরিবারের কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে কিছু করার উদ্যোগে আমি আমার পেজ ক্রিয়েট করেছিলাম। তখন হ্যান্ডমেড কিছু জুয়েলারি শোপিস নিয়ে কাজ শুরু করি। আমার সন্তান পৃথিবীতে আসার পর- আমি পাকাপোক্তভাবে দেশীয় পোশাক নিয়ে আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি। আমার মায়ের দেওয়া ৯০০০ টাকা দিয়ে সর্বপ্রথম আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি। এর পর আমার হাজব্যান্ড আরও ৩০,০০০ টাকা দিয়ে আমাকে সাহায্য করে।
প্রতিবন্ধকতা:
জান্নাতুন জানান, ‘চাকরী ব্যাতীত কোন কিছুই আমাদের সমাজ সহজভাবে মেনে নেয়না। তারপরেও আমি মেয়ে হিসাবে চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি। আমার পরিবার এগুলো তেমন সাপোর্টব করতো না। সবাইকে বোঝাতে যে শ্রম দিয়েছি তা সরকারী চাকরীর চেয়ে কম কিছু না।
ফেসবুক যেভাবে ভাগ্য বদলেছে:
জান্নাতুন বলেন, ’অফলাইনে কিছু পণ্য সেল করা শুরু করি। কিন্তু আমাদের প্রোডাক্ট গুলো কাস্টমমেড হওয়ায় আমরা স্থানীয়ভাবে তেমন সাড়া পেতাম না। করোনা কালীন সময়ে ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন গুলো সামনে আসতো। সেখান থেকে আমি নিজের ‘জেসি ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি পেইজ খুলি। নিজের পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে পোস্ট করতে শুরু করি। সেখান থেকেই আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক অর্ডার আমার কাজের গতি হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।’
মাসিক আয়:
জান্নাতুন জানান, ‘শুরুর দিকে আয় টা ২০ হাজার এর মতো ছিলো, এখন বর্তমানে মাসে আমার ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো আয় হয়।’
পণ্য ও গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ:
জান্নাতুন জানান, ‘বর্তমানে আমি দেশীয় শাড়ি, কাস্টমাইজড ব্লক এবং হ্যান্ড পেইন্ট এর পণ্য, লেডিস পণ্য, ব্যাগ ও জুয়েলারি নিয়ে কাজ করছি।শুধুমাত্র অনলাইনে একটি পেজ ক্রিয়েট করলাম এবং প্রোডাক্টের ছবি দিলাম সেল হয়ে গেল বিষয়টা এমন নয়। অনলাইন জগতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। অনলাইনে ড্রেস সম্পর্কে অনেকের নেগেটিভ ধারণা থাকে। আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার পণ্য দিয়ে সে নেগেটিভিটি দূর করে কাস্টমারকে রিপিট কাস্টমারের রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছি।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশের জিডিপিতে বর্তমান নারীর অবদান ১০ শতাংশ এবং উদ্যোক্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন করা হলে তাদের জিডিপিতে অবদান হবে ২৫ শতাংশ।
ছবিতে..
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)