বাংলাদেশের তীরে এসে তরী ডুবলো

নিজেদের প্রথম দুইটি ম্যাচ দুই দলই হেরেছিল। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে তাই জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ- দুই দলের সামনেই। তাদের লড়াইটাও হলো সমানে সমান।
যেখানে শেষপর্যন্ত ৩ রানের ব্যবধানে হেরে গেল বাংলাদেশ, তীরে এসে ডুবলো তরী। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে জিতে সেমির আশা টিকে রইলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। অন্যদিকে বাংলাদেশেরও বিদায় প্রায় নিশ্চিত। তবে কাগজে-কলমে এখনও রয়েছে সম্ভাবনা। সেটি অবশ্য প্রায় অসম্ভবের পর্যায়েই পড়ে।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ১৪২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ৫ উইকেটে ১৩৯ রান করে। ফিল্ডিংয়ে তিন ক্যাচ মিস আর ব্যাটিংয়ে দায়িত্বহীনতার কারণে শেষ ওভারে গিয়ে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ১৪২ রানের জবাবে খেলতে নেমে শুরুতেই চমক দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নামানো হয়েছে সাকিবকে। এর আগে কখনও ইনিংসের সূচনা করতে দেখা যায়নি সাকিবকে।
আজ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে প্রথমবারের মতো এ কঠিন দায়িত্বটিই নিজের কাঁধে তুলে নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে ৮, ১১, ০, ৪০ ও ১৪ রান।
লিটন-নাইমের উদ্বোধনী জুটি সে অর্থে জমেনি একটি ম্যাচেও। এ কারণেই হয়তো আজ (শুক্রবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিটন দাসকে ব্যাটিং অর্ডারে নিচে পাঠিয়ে সাকিবকে আনা হয় ওপেনিংয়ে।
কিন্তু ইনিংসের পঞ্চম ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে এক চারের মারে ১২ বলে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি সাকিব। আন্দ্রের রাসেলের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে জেসন হোল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। পরের ওভারে অগ্রজ সতীর্থের দেখা পথে হাঁটেন নাইমও।
আগের ওভারে সাকিবের ক্যাচ নেয়া হোল্ডার এবার বল হাতে সাজঘরে ফেরান নাইমকে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন ১৯ বলে ১৭ রান করা নাইম। মাত্র ২৯ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
তৃতীয় উইকেটে জুটি বাধেন লিটন ও সৌম্য। তারা দুজন হাত খুলতে খেলতে পারেননি। তবে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে দলীয় সংগ্রহ পঞ্চাশ পার করা তারা। আন্দ্রে রাসেলের বলে দারুণ এক পুল শটে বাউন্ডারি হাঁকান সৌম্য।
ইনিংসের ১১তম ওভারের তৃতীয় বলে আকিল হোসেনের বলেও মারের চার। কিন্তু পরের বলটি তার ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে চলে যায় শর্ট থার্ড ম্যানে। যেখানে সামনে ঝাঁপিয়ে বল তালুবন্দী করেন ক্রিস গেইল। ফলে বিদায়ঘণ্টা বাজে ১৭ রান করা সৌম্যর।
এরপর বেশি কিছু করতে পারেননি অভিজ্ঞ তারকা ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তবে অপরপ্রান্তে লিটন কিছু বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের চাহিদা নাগালের মধ্যেই রাখেন। লিটন-মুশফিকের জুটিতে আসে ২.৫ ওভারে ৩০ রান। ইনিংসের ১৪তম ওভারে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ৭ বলে ৮ রান করা মুশফিক।
বাংলাদেশের স্কোর তখন ১৩.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ৯০ রান। জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ছিল ৩৯ বলে ৫৩ রান। সেই ওভারের পরের তিন বলে আসে তিন রান। ফলে সমীকরণ হয়ে যায় ছয় ওভারে ৫০ রানের। সেখান থেকে পরের তিন ওভারে ২০ রানের বেশি নিতে পারেননি লিটন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ফলে শেষ তিন ওভারে বাকি থাকে ৩০ রান। রবি রামপলের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। কিন্তু পরের পাঁচ বলে আসে মাত্র ৪ রান। ফলে ফের চাপে পড়ে বাংলাদেশ, সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ বলে ২২ রানে। গুরুত্বপূর্ণ ১৯তম ওভার নিয়ে আসেন নিজের আগের ওভারে মাত্র ৩ রান খরচ করা ডোয়াইন ব্রাভো।
এবার প্রথম বলে লং অন সীমানা দিয়ে ছক্কা হাঁকান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু শেষের পাঁচ বলে তিন রানের বেশি দেননি ব্রাভো। একই সঙ্গে শেষ বলে ফিরিয়ে দেন লিটনকে। লং অনে দাঁড়িয়ে দারুণ দক্ষতায় লিটনের ক্যাচটি তালুবন্দী করেন হোল্ডার। সংগ্রামী ইনিংসে লিটন করেন ৪৩ বলে ৪৪ রান।
শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১৩ রানে। ক্যারিবীয়দের পক্ষে বোলিংয়ে আসেন রাসেল। তার প্রথম বলে স্কুপ করে ২ রান নেন নতুন ব্যাটার আফিফ হোসেন ধ্রুব। পরের বলে আসে ১ রান। তৃতীয় বলে কুইক রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটে মিড অন থেকেই ২ রান নিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ।
তিন বলে ৮ রানের সমীকরণে ছক্কার আশায় পুল খেলেন টাইগার অধিনায়ক। কিন্তু পার করতে পারেননি সীমানা, ডিপ স্কয়ার লেগে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন আন্দ্রে ফ্লেচার, আসে ২ রান। ওভারের পঞ্চম বলে হোল্ডারের মিস ফিল্ড থেকে আসে আরও ২ রান নেন। ফলে শেষ বলে বাকি থাকে ৪টি রান।
কিন্তু আন্দ্রে রাসেলের করা ব্লক হোলের ডেলিভারিটি ব্যাটেই লাগাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফলে ৩ রানের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এর আগে ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুরুটা খারাপ করেননি বোলাররা। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৯ রান তুলতে পারেন ক্যারিবীয় দুই ওপেনার ক্রিস গেইল আর এভিন লুইস।
মোস্তাফিজুর রহমানের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটিতেই সাফল্য পেতে পারতো বাংলাদেশ। বলে হালকা ব্যাট ছুঁইয়ে অনেকটা দৌড়ে গিয়েছিলেন গেইল। পরে রান হবে বুঝতে না পেরে ফেরত আসতে যান।
বল ধরেই পয়েন্ট থেকে জোরে থ্রো করেন সাকিব আল হাসান। উইকেটরক্ষক লিটন দাসও স্ট্যাম্পের কাছে চলে এসেছিলেন। কিন্তু সাকিবের থ্রো লিটনের দিকে ছিল না, ছিল স্ট্যাম্প বরাবর। সেটি মিস হলে বেঁচে যান গেইল।
তবে ওই ওভারেই মোস্তাফিজ ধাক্কা দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ওভারের শেষ বলটি তুলে মারতে গিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে দেন এভিন লুইস (৯ বলে ৬)। স্কয়ার লেগে দৌড়ে এসে সহজ ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম।
পঞ্চম ওভারে ভয়ংকর গেইলকে বোল্ড করেন শেখ মেহেদি হাসান। টাইগার অফস্পিনারের ঘূর্ণিতে ইনসাইডেজ হয়ে ১০ বলে মাত্র ৫ রান করে ফেরেন ইউনিভার্স বস। পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬ ওভারে ২ উইকেটে মাত্র ২৯ রান তুলতে পারে ক্যারিবীয়রা।
পরের ওভারেই দারুণ একটি সুযোগ মিস করেন মেহেদি। রস্টন চেজ তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই বল তালুবন্দি করতে পারেননি মেহেদি। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। পরের বলেই সিমরন হেটমায়ার (৯ বলে ৭) তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ হন সৌম্য সরকারের।
৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে উদ্ধার করতে পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে চলে আসেন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। তিন নম্বরে নামা রস্টোন চেজকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন তিনি।
কিন্তু রানের গতি বাড়াতে পারছিলেন না একদমই। ইনিংসের ১২ ওভার শেষে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ দাঁড়ায় মাত্র ৬১ রান। পরে আসে তাসকিনের সেই ওভার। প্রথম বলে পোলার্ডের বিপক্ষে আবেদন হয় লেগ বিফোরের। আম্পায়ার সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি বাংলাদেশের।
এক বল পর পপিং ক্রিজের সামনে পা পিছলে পড়ে যান তাসকিন। পরের বলটি স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে এক রান নেন পোলার্ড। কিন্তু এরপর আর থাকেননি মাঠে। স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে সাজঘরে ফিরে যান ১৬ বলে ৮ রান করা ক্যারিবীয় অধিনায়ক।
৩২ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি থামার পর ব্যাটিংয়ে আসেন আরেক মারকুটে ব্যাটার আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু তিনি কোনো বলই খেলার সুযোগ পাননি। চেজের করা স্ট্রেইট ড্রাইভ তাসকিনের পায়ে লেগে আঘাত হানে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্পে। তখন বাইরে দাঁড়িয়ে রাসেল।
যার ফলে কোনো বল না খেলেই শূন্য রানে আউট হতে হয় এ তারকা ব্যাটারকে। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে বলে ডায়মন্ড ডাক। একই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই মারকুটে ব্যাটার সাজঘরে ফেরায় খানিক স্বস্তি আসে টাইগার শিবিরেও।
কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ থাকতে দেননি উইকেটরক্ষক ব্যাটার নিকোলাস পুরান। ব্যক্তিগত ২ রানে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ভুলে স্ট্যাম্পিংয়ের হাত থেকে বেঁচে যান তিনি। এই সুযোগের পুরোটা কাজে লাগান ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক।
সাকিবের করা ইনিংসের ১৪তম ওভারে জীবন পেয়ে সাকিবের করা ১৬তম ওভারে পরপর দুইটি ছক্কা হাঁকান পুরান। পরে মেহেদির করা ১৮তম ওভারেও জোড়া ছক্কা হাঁকান তিনি। পুরানের ব্যাটেই ঘুরে দাঁড়ায় প্রথম ১৪ ওভারে মাত্র ৭০ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে ১৯তম ওভারে বোলিং করতে এসে প্রথম দুই বলেই পুরান (২২ বলে ৪০) ও চেজকে (৪৬ বলে ৩৯) সাজঘরে ফেরান তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। সেই ওভারের পঞ্চম বলে জেসন হোল্ডারকেও ফেরাতে পারতেন শরিফুল। কিন্তু ক্যাচ ছেড়ে দেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।
সেই হোল্ডারই মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে হাঁকান ছক্কা। যদিও প্রথম বলে ডোয়াইন ব্রাভোকে আউট করেন মোস্তাফিজ। আর ইনিংসের একদম শেষ বলে ছক্কা মেরে দলীয় সংগ্রহটা ১৪২ রানে নিয়ে যান স্বেচ্ছা অবসর থেকে ফেরা পোলার্ড।
শেষদিকের বোলিংটা একদমই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ১৪ ওভারে ৭০ রান করা ক্যারিবীয়রা শেষ ছয় ওভারেই সাতটি বিশাল ছয়ের মারে তুলে নেয় ৭২ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদি, শরিফুল ও মোস্তাফিজ। তবে ৪ ওভারে ৪৩ রান খরচ করে বসেন মোস্তাফিজ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে রাতব্যাপী ১৬দলীয় শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত
হাবিবুর রহমান সোহাগ: কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের কেঁড়াগাছি ফুটবল মাঠে সোনামাটি যুববিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়া ফুটবল টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন শ্যামনগর
কলারোয়া পাবলিক ইন্সটিটিউট ৮দলীয় নক আউট ফুটবল টুর্নামেন্টে ধুলিহর ইয়াং স্টার ফুটবলবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়া ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্যামনগর
কলারোয়া পাবলিক ইন্সটিটিউট ৮দলীয় নক আউট ফুটবল টুর্নামেন্টে রুস্তম আলী ফুটবল একাদশবিস্তারিত পড়ুন
