বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় বিপাকে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মাস দুয়েক আগেও কলকাতার নিউমার্কেট, মার্কুইজ স্ট্রিটে গিজ গিজ করত বাংলাদেশের মানুষ। তবে জুলাই মাস থেকে সে দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ব্যাপক সহিংসতা, কারফিউ, শেষে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়ন- সব মিলিয়ে কলকাতায় এখন বাংলাদেশি পর্যটক প্রায় নেই বললেই চলে।

এর একটা বড় কারণ ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু করেনি। তাই আগে থেকে যারা ভিসা নিয়েছিলেন এবং জরুরি চিকিৎসা করাতে হলেই ভারতে আসার অনুমতি পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

কলকাতার নিউমার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিট বা মুকুন্দপুর অঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই মূলত বাংলাদেশি পর্যটকরা থাকেন, কেনাকাটা করেন। ওইসব এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে বছরভর।

ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেটের শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক গুপ্তা বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রায় কেউই আসছেন না মাসখানেকের বেশি সময় হয়ে গেল। নিউ মার্কেটের জামাকাপড়ের দোকান বলুন বা অন্যান্য সামগ্রী- এসবের একটা বড় ক্রেতা বাংলাদেশের মানুষ। ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি তাই তারা প্রায় কেউই আসতে পারছেন না। আমাদের বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে গত এক মাসে।

তবে নিউমার্কেটের ব্যবসা কমে যাওয়ার আরও একটা কারণ আরজি কর মেডিকেল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা।

গুপ্তা বলেন, ওই ঘটনা মানুষকে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে বহু মানুষেরই কেনাকাটা করার, উৎসবে মাতার মতো মন নেই। এ ছাড়া রোজই মিছিল প্রতিবাদ হচ্ছে। তাই মানুষ এখন এদিকে আসা কমিয়ে দিয়েছে।

একই অবস্থা বাংলাদেশিরা মূলত যে এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন, সেই মার্কুইস স্ট্রিটেও। হোটেল-খাবারের দোকান বা অন্যান্য পরিষেবা – এ রাস্তার সব কিছুই বাংলাদেশি পর্যটক-কেন্দ্রিক।

করোনার সময়ে যেমন বাংলাদেশি পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, গত একমাসে বাংলাদেশে অশান্তির জেরে আবারো প্রায় সেই অবস্থাতেই পৌছেছে।

আবার বহু মানুষ বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে আসেন কলকাতায়। একটি বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী জানাচ্ছে এক মাস আগের তুলনায় এখন বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

হোটেলের ঘর প্রায় ফাঁকা
মার্কুইস স্ট্রিট এলাকাটি বহু বাংলাদেশি মানুষের কাছে অতি পরিচিত এলাকা। কলকাতার কেন্দ্রস্থলের এই এলাকায় বহু হোটেল রেস্তোরাঁ আছে, যারা মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপরে নির্ভর করেই ব্যবসা করে থাকে।

এ ছাড়াও ওই অঞ্চলে মানিএক্সচেঞ্জ, বাসের কাউন্টারসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রায় সব ধরনের পরিসেবাই পাওয়া যায়। ওই এলাকায় গেলে মনেই হবে না যে এটা ঢাকার বাইরে অন্য কোনও শহরের রাস্তা।

তবে জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের আসা কমে গিয়েছিল। আর আগস্ট থেকে তা একরকম বন্ধই হয়ে গেছে।

মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল মালিকদের সংগঠনের নেতা মনোতোষ সরকার বলেন, এখন শুধু মাত্র মেডিকেল ভিসা নিয়ে মানুষ আসতে পারছেন, অথবা আগে থেকে যাদের ভিসা নেওয়া ছিল। কয়েক মাস আগেও আমাদের হোটেলগুলির ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ অকুপেন্সি রেট ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে।

সরকার বলেন, মার্কুইস স্ট্রিটে তো শুধু হোটেল নয়, বাংলাদেশি পর্যটকদের আরও বহু পরিসেবা প্রদানকারী সংস্থা আছে। তাদেরও মূল ক্রেতা ওদেশের পর্যটকরাই। তারা এখন এতটাই কম সংখ্যায় আসছেন, যে সব ব্যবসায়ীরাই মার খাচ্ছে। বাস আসছে বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে, কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে ওই ৩০ শতাংশ মতোই আসন ভর্তি হচ্ছে, বাকিটা ফাঁকা থাকছে।

নিউমার্কেট
এসএস হগ মার্কেট, যা নিউ মার্কেট বলে পরিচিত, অথবা তার আশপাশের বিপণী বিতানগুলিতে সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বেড়াতে এসে হোক অথবা চিকিৎসা করানো জন্য, বেশিরভাগ বাংলাদেশি পর্যটকই কলকাতায় এলে নিউ মার্কেটে কেনা কাটা করতে গিয়ে থাকেন।

বিশেষত পোশাকের দোকানগুলিতে বাংলাদেশি ক্রেতাদেরই ভিড় দেখা যেত।

নিউমার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা বলেন, কিন্তু এক মাস হয়ে গেল, তারা এখন আর ভারতে আসছেন না প্রায় কেউই। আমাদের দোকানগুলোর ৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে এই এক মাসে। পোষাক, সাজগোজের জিনিস অথবা জুতা সহ সব ব্যবসায়ীই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মাস খানেকের মধ্যেই দুর্গাপূজা। পূজায় আর ঈদের আগে আমাদের ব্যবসার বড় সিজন। পূজার সময়ে শুধু যে হিন্দুরা কেনাকাটা করেন না নয়। এই সময়ে অনেক নতুন ডিজাইনের পোশাক বাজারে আসে, তাই মুসলমান এবং অবশ্যই বাংলাদেশিরা এই সময়ে কেনাকাটা করতে আসতেন। আবার পাইকারি বাজার থেকে পোষাক কিনে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেদেশ থেকে ব্যবসায়ীরাও আসতেন।

তিনি আরও বলেন, তবে এ বছর কেউই প্রায় আসছেন না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি তো একটা কারণ। আবার কলকাতায় এখন বহু মানুষ আরজি করের ঘটনা নিয়ে এতটাই মন খারাপ করে আছেন যে তারাও কেনাকাটা করতে উৎসাহ পাচ্ছেন না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই আগামী পাঁচ-ছয় দিন সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে বাজারের পরিস্থিতি যদি কিছুটা উন্নতি হল তা হলে ভালো। না হলে এবারের কেনাকাটার মৌসুমটা পুরোই লস আমাদের।

হাসপাতালেও রোগী কমেছে
বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে আসেন, তাদের একটা বড় অংশ স্বাস্থ্য পরিসেবার জন্য আসেন। কলকাতা হোক বা ভেলোর, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু অথবা দিল্লি-মুম্বাই -বহু বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশের মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

এ সব হাসপাতালগুলিতে বাংলা কথা বলা কর্মকর্তারা যেমন থাকেন, তেমনই বাংলাদেশিদের জন্য থাকে পৃথক পরিসেবা-ডেস্কও।

কলকাতার যেসব বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীরা বেশি সংখ্যায় আসেন, ওই হাসপাতালগুলি বলছে গত একমাসে খুব কম রোগী সেদেশ থেকে এসেছেন।

যদিও ভারতের হাইকমিশনগুলি মেডিকেল ভিসা দিচ্ছে, তা সত্ত্বেও আগের তুলনায় কম সংখ্যক রোগীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে কলকাতার হাসপাতালগুলিতে।

মনিপাল হসপিটালস গোষ্ঠী কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করেছে কয়েক মাস আগে। তাদের অধীন হাসপাতালগুলিতে গড়ে ২১০০ জন বাংলাদেশি রোগী আসেন প্রতি মাসে। সেই সংখ্যাটা প্রায় এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

তবে মনিপাল হসপিটালস্ গোষ্ঠীর পূর্বাঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক চিফ অপারেটিং অফিসার অয়নাভ দেবগুপ্ত বলছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে মনিপাল হসপিটালসে আসা রোগীর সংখ্যা সামান্য হলেও বেড়েছে। কিন্তু দু মাস আগে যত রোগী আসতেন এই সংখ্যাটা তার থেকে অনেক কম। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস এখনও ভিসা ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি স্বাভাবিক করে নি, তাই যখন যেমন ভিসা পাচ্ছেন রোগীরা, তখন আসছেন এখানে।

কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলিতেই বাংলাদেশি রোগীদের ভিড় সবথেকে বেশি দেখা যায়।

ওখানে হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক বিরাট পরিসেবা শিল্প। খাওয়ার বা থাকার হোটেল, ওষুধের দোকান – সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক মানুষের রোজগার চলে ওই হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করে।

কলকাতার রোগীদের ভিড় সেখানে স্বাভাবিক থাকলেও এদের একটা বড় অংশ নির্ভর করে বাংলাদেশি রোগীদের ওপরে।

তাই বাংলাদেশ থেকে পর্যটক বা রোগী আসা যতক্ষণ না স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন এই বিরাট সংখ্যক মানুষের অনিশ্চয়তা কাটছে না। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

একই রকম সংবাদ সমূহ

বাংলাদেশি রোগী ‘বয়কট না করা’র সিদ্ধান্ত ভারতীয় চিকিৎসকদের সংগঠনের

চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি রোগীদের বয়কট না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেবিস্তারিত পড়ুন

বাংলাদেশিরা না যাওয়ায় হাহাকার: আধপেটা থাকছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার মারকুইস স্ট্রিটকে সেখানকার ব্যবসায়ীরা ‘মিনিবিস্তারিত পড়ুন

সীমান্ত বন্ধ হলে বড় ক্ষতি ভারতের, ঝুঁকিতে লাখো মানুষের জীবিকা

বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই তোলপাড় চলছে প্রতিবেশী ভারতে।বিস্তারিত পড়ুন

  • বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, বলছেন ফেরত যাওয়া ভারতীয় ট্রাকচালকরা
  • আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলায় বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
  • ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পতাকায় আগুন
  • আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভাঙচুর-পতাকা অবমাননা, ভারতের দুঃখ প্রকাশ
  • বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ ভারতের ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্তোরাঁ
  • মমতার বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিস্বরূপ : মির্জা ফখরুল
  • মমতার বক্তব্য তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বাংলাদেশে আলু-পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের হুমকি শুভেন্দুর
  • হাসিনার পতনে দলে দলে সংখ্যালঘুর ভারতে পালানোর তথ্য সঠিক নয় : দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন
  • ‘ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরুন’ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বাংলাদেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনে মোদির হস্তক্ষেপ চান মমতা
  • বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন কলকাতার মেয়র