অবর্ননীয় দূর্ভোগে সাতক্ষীরার উপকূলীয় বানভাসী লক্ষাধিক মানুষ, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা


অবর্ননীয় দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার বানভাসি লক্ষাধিক মানুষ।
প্রবল জোয়ারের চাপে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদরের (আংশিক) ও শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের (আংশিক) অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছ। বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। পানিতে ভেসে গেছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি। ধ্বসে পড়েছে শতাধিক কাঁচাঘরবাড়ি। রান্না-বান্না ও গৃহস্থালীর কোন কাজ করতে না পারায় শুকনা খাবারেই নিভাতে হচ্ছে তাদের পেটের ক্ষুধা। অনেকের বসত ঘর পানিতে ভেসে গেছে। কষ্টের কোন শেষ নেই দুর্গত এলাকার মানুষের।
প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এর আগে কখনো তারা এতো পানি দেখেনি। তাই অতিদ্রুত সরকারি সহায়তা প্রত্যাশা করেছে বানভাসি মানুষ।
তবে বন্যাদুর্গতদের সকল প্রকার সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায়। ওই সময় বেশকিছু স্থানে রিং বাধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা ও কুড়িকাউনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনয়নের হাজরাখালী পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে এতই গভীর হয়ে যায় যা সংস্কার করা এতদিন সম্ভব হয়নি। এর ফলে গত তিন মাস ধরে ওই এলাকার লোকালয়ে চলে জোয়ার-ভাটা। তার উপর বর্তমান অমাবশ্যার গোনে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২/৩ দিনের জোয়ারে ও প্রবল বর্ষনে যে সমস্ত এলাকায় রিংবাধ দিয়ে পানি বন্ধ করা হয়েছিল সেগুলো আবারো ছুটে যায়।
এর ফলে জোয়ার-ভাটা বইছে লোকালয়ে ও বাড়ির উঠানে। মানবেতর জীবন যাপন করছে লক্ষাধিক মানুষ। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দূর্গত এলাকায় ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে দূর্গতরা। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব। অনেকেই এখন বাড়িঘর ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান ও একই গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী দীর্ঘ তিন মাসেও সুভদ্রকাটি ও শ্রীপুরে ভেঙে যাওয়া বাঁধ ভালভাবে মেরামত না করায় লঞ্চঘাট এালাকায় কয়েক দফায় ভেঙেছে। পানি ঢুকেছে লোকালয়ে।
এ ছাড়া সুভদ্রকাটিতে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় বাড়িতে জোয়ার ভাটা খেলে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের। গত বৃহষ্পতিবারে অমাবস্যার জোয়ারে ও অতি বৃষ্টিতে আবারো শ্রীপুরের পার্শ্ববর্তী রিংবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। খাঁটের নীচে পানি, সাপ ও কীট পতঙ্গের ভয় থাকলে ও খাটের উপরে রাত কাটাতে হয়। ভাটায় কিছুটা পানি কমলেও জোয়ারে তা আবারো বেড়ে যায়। এরপরও রোববার বিকেলে ও রাতে কয়েক দফায় মুসল ধারায় বৃষ্টিতে ঘরের মধ্যে পানি বেড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও গত ৫ দিনেও মেলেনি কোন সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা। কাজ নেই, খাবার নেই ছেলেপুলেদের নিয়ে দিন কাটবে কি করে।
সুভদ্রকাটি গ্রামের সোহারাব হোসেন জানান, তালতলা বাজার থেকে সাতক্ষীরা গামি মূল সড়কের কল্যাণপুর নামক স্থানে ১০০ ফুটেরও বেশি ভেঙে গেছে। সেখান দিয়ে প্রবল জোরে জেয়ারের পানি ঢুকছে। ভাটায় বাঁধার চেষ্টা করলেও জোয়ারে আবারো ভেঙে যাচ্ছে। অসুস্থ রোগী আশাশুনিতে নিয়ে যেতে হচ্ছে নৌকায় করে। এতে মৃত্যুঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
এ ছাড়া এ এলাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কটের অভিযোগ করেন তিনি।
পানি বন্দি হয়ে গরু ছাগল নিয়ে বিপদে রয়েছেন উল্লেখ করে আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি গ্রামের নুরুল আমিন বলেন, এ রকম পানি জন্মের পর থেকে দেখেননি।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের গাইনবাড়ির সিরাজুল গাইন, বাকের আলী গাইন, নেববুনিয়া গ্রামের রোমেছা খাতুন জানান, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়ার মধ্যেই তাদের বসবাস। ঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসকে প্রতি বছরে এক দু’বার তাদের মোকাবেলা করতে হয়। গত বৃহষ্পতিবারের উন্মত জেয়ারের পানি দেখে তাদের বাড়ি ছাড়া ছাড়া আর আর উপায় দেখছেন না।
সাতক্ষীরা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাসেত বলেন, আশাশুনি ও শ্যামনগরের ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি মানুষের জন্য ইতি মধ্যে দেড় লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিক টণ চাল দেওয়া হয়েছে। ৩৩০ মেট্রিক টল চাল ও ১০ লাখ টাকা চেয়ে ঢাকা অফিসে আবেদন জানানো হয়েছে। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য উপজেলা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে আগামি নভেম্বরের আগে ওইসব বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব নয় বলে জানান সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (২) নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু শেখর সরকার।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, দুর্যোগ পরবর্তীতে তিনি কয়েকবার শ্যামনগর ও আশাশুনির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শণ করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান অনুযায়ি সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহষ্পতিবার থেকে অমাবস্যার জোয়ারে ও অতি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার উপকুলবর্তী কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর কয়েকটি রিং বাঁধ ভেঙে যায়। এতে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে যাতায়াতের প্রধান সড়কের পাকা রাস্তার উপর দিয়ে প্রবল বেগে পানির স্রোত বইতে শুরু করে।
পাানিবন্দি হয়ে পড়ে তিনটি ইউনিয়নসহ প্রায় ৫০টি গ্রাম। পানিবন্ধি হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। দুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় অবস্থান নেয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

সাতক্ষীরার ভোমরায় জামায়াতের হুইল চেয়ার বিতরণ
সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চলাচলের সুবিধার জন্য হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্য কলারোয়ায় পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন, নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য উৎপাদন, প্রদর্শনীসহ নানান সময়োপযোগীবিস্তারিত পড়ুন

দীর্ঘদিন কাজ করেও সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি বিআরটিএ’র সীল মেকানিকদের
শেখ আমিনুর হোসেন: সড়কে দূর্ঘটনা কমাতে ডিজেল চালিত যানবাহনে রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে গতিনিয়ন্ত্রকবিস্তারিত পড়ুন