আল্লাহর সঙ্গে যেভাবে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করবেন মুমিন


মানুষ আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। আল্লাহর গোলামীর মাধ্যমেই মানুষ তার সান্নিধ্য লাভ করে। তাঁর গোলামি বা ইবাদত করার অন্যতম মাধ্যম হলো নামাজ। যা মুমিন মুসলমানের অনন্য গৌরবময় ইবাদত। এ ইবাদতের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দা গড়ে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার জন্য গৌরবময় এ উপহার দান করতে তাঁর প্রিয় বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মেরাজের নির্দেশ দেন। ইসলামের ইতিহাসে এ মেরাজও অনন্য বিস্ময়কর অলৌকিক ঘটনা।
পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বনবির নামাজ প্রাপ্তির ক্ষণ ও মেরাজের ঘটনা বিশ্বমানবতার কাছে বিস্ময়কর। যার বিস্ময় আজও শেষ হয়নি। মেরাজের রাতে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের মাধ্যমেই নামাজ পেয়েছেন বিশ্বনবি। এ জন্য নামাজই হচ্ছে মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাতে মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে সাত আসমান পার করে অজানা দূরত্বের দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণ করে মহান প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। আর মুমিন মুসলমান দীর্ঘ পথের সফর ও কষ্ট না করেই নামাজের মাধ্যমে মহান প্রভুর একান্ত সান্নিধ্য ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হবেন।
যে কারণে মহান প্রভু মেরাজের রাতে মুমিন মুসলমানের জন্য নামাজকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। যাতে মুমিন মুসলমান প্রতিদিন প্রতিক্ষণ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে নিবিড় সম্পর্ক ও একান্ত সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা প্রথম পূর্ণাঙ্গ যে সুরাটি নাজিল করেছেন, তাহলো সুরা আল-ফাতিহা। এ সুরাটিকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। মুমিন বান্দা নামাজের প্রতি রাকাআতেই এ সুরার মাধ্যমেই সুসম্পর্ক তৈরি করার জন্য মহান প্রভুর সঙ্গে একান্তে নিবিড় কথা বলেন। আর মহান প্রভুও প্রতিটি আয়াতে আয়াতে জবাব দিয়ে থাকেন।
নামাজে মুমিন বান্দা কীভাবে আল্লাহর সঙ্গে একান্তে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেন এবং কথা বলেন; আর আল্লাহ তাআলাই বা কীভাবে এসব কথার উত্তর দেন, তা হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিম প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
> আমার বান্দা যখন বলে- الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘আলহামদুলিল্লাহহি রাব্বিল আলামিন’
> তখন আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে’। বান্দার মুখ থেকে ‘আলহামদুলিল্লাহহি রাব্বিল আলামিন’ প্রশংসার উচ্চারণ শুনে আল্লাহ এতটাই খুশি হন এবং গর্ববোধ করেন যে, তিনি তাঁর ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে’।
> বান্দা যখন হৃদয় থেকে বলে- الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ ‘আর রাহমানির রাহিম’
> তখন আল্লাহ বলেন- ‘আমার বান্দা আমার গুণাগান গায়’।
> বান্দা যখন হৃদয় থেকে বলে- مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন’
> তখন আল্লাহ বলেন- ‘আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করছে’।
> তারপর বান্দা যখন অনুগতচিত্তে বলে- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ‘ইয়্যাকা নাবুদু ও ইয়্যাকা নাসতাইন’ অর্থাৎ আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, একমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য চাই।
> তখন আল্লাহ বলেন- ‘এটা আমার আর আমার বান্দার সম্পর্ক, বান্দা (যখন) যা চাইবে তা-ই সে পাবে’।
> তারপর বান্দা মহান প্রভুর কাছে একান্ত দরদ মাখা কণ্ঠে দুনিয়ার সেরা জিনিসের আবেদন করেন। আর তাহলো-
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ – صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুসতাক্বিম, সিরাত্বাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদদ্বাল্লিন’
অর্থ : ‘(হে প্রভু!) আপনি আমাদের সহজ-সরল পথ দেখান। তাঁদের পথ; যাঁদের প্রতি আপনি নেয়ামত দান করেছেন। আর যারা অভিশপ্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত কিংবা পথহারা বা পথভ্রষ্ট তাদের পথে আমাদের পরিচালিত করবেন না’।
> তখনও আল্লাহ বলেন- ‘এটা শুধু আমার বান্দার জন্য, আমার বান্দা যা চাইবে তা-ই পাবে।’ (মুসলিম)
একনিষ্ঠ নামাজে মুমিন মুসলমান সুরা ফাতেহা পড়ার মাধ্যমেই মহান আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে থাকেন; নিবিড় সুসম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ লাভ করেন। নামাজের প্রতি রাকাআতেই মুমিন মুসলমানকে এ সুরাটি পড়ে হয়। কেননা সুরা ফাতেহা পড়া ছাড়া নামাজই হবে না।
এ নামাজেই মুমিনের সঙ্গে আল্লাহর মেরাজ সংঘটিত হয়। নিবিড় মগ্নতায় মুমিন বান্দা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। আল্লাহর সঙ্গে এ সুসম্পর্ক তৈরিতে আল্লাহ ও নামাজি ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ থাকে না। এ সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যেভাবে, যা চাইবে; মহান আল্লাহ বান্দাকে তাই দিয়ে দেবেন বলেও হাদিসে কুদসিতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন।
এ কারণেই নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবেগ প্রবণ হয়ে পড়তেন। আবেগঘন কণ্ঠে হজরত বেলালকে আহ্বান করতেন আর বলতেন-
‘হে বেলাল! নামাজের ব্যবস্থা কর; আমাকে শান্তি দাও।’
এ শান্তি; কিসের শান্তি? তা ছিল আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার শান্তি! মেরাজের অপার গৌরবময় সুখ শান্তি!
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদের প্রতি ওয়াক্তের নামাজকে মেরাজে রূপান্তরিত করা। আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সুসম্পর্ক তৈরি করে নেয়া। বিশ্বনবির প্রশান্তি লাভের বিষয়টি নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা।
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে যথাসময়ে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজের মাধ্যমে মহান রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলার তাওফিক দান করুন। নিবিড় সুসম্পর্ক তৈরির করার তাওফিক দান করুন। নামাজে মেরাজের প্রশান্তি ও সুখ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
