সূচিত হলো ভিন্ন ধারার মৃন্ময় এক শিল্পকর্ম
কলারোয়ায় ধানের দুর্গাপ্রতিমায় দ্যুতিময় সোনালি আভা
শেখ জিল্লু: কলারোয়ায় এবার ব্যতিক্রমী সুগন্ধি চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে গড়া প্রতিমা এখন পূর্ণতার ছোঁয়া পেল। প্রতিমার মৃন্ময় রূপ এখন যেনো সোনা দিয়ে মোড়ানো!
দর্শনার্থীরা ইতোমধ্যে ভিড় করছেন এক নজর প্রতিমা দর্শন করতে। রং-তুলির সর্বশেষ প্রলেপ সম্পন্ন হওয়ার পর এখন গোটা প্রতিমা আবৃত রাখা হয়েছে। পুঁতির মতো একটির পর একটি ধান গেঁথে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমার অবয়ব।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্মিত প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করতে প্রতিমাশিল্পী প্রহ্লাদ বিশ্বাসের এক মাসের মতো সময় লেগেছে।
বিশেষভাবে চিনিগুঁড়া ধান বসিয়ে তা তৈরি করা হয়েছে।
কলারোয়া পৌরসদরের উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়া পূজা মন্ডপে চিনিগুঁড়া সুগন্ধি ধানে তৈরি এই প্রতিমা এখন পরিপূর্ণ রূপে দৃশ্যমান। রং-তুলির মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এক ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে।
সরেজমিনে পূজামন্ডপ ঘুরে এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা গেছে।
চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে মোড়ানো প্রতিমা এবারই প্রথম এই অঞ্চলে দৃশ্যমান হলো। চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো দেখে যেনো মনে হচ্ছে সোনা মোড়ানো রয়েছে। এছাড়া ধান গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্যের স্মারকও বটে। ছোট ছোট চিনিগুঁড়া ধান বসানো হয়েছে পুঁতির মতো। যা নয়নাভিরাম রূপ পেয়েছে।
পৌরসদরের উত্তর মুরারীকাটি গ্রামের পালপাড়া পূজা মন্ডপের সভাপতি সভাপতি জীবন ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ পাল, প্রভাষক ভোলানাথ মন্ডল, অশ্বিন পাল, অনিক পাল জানান, ৪ জন প্রতিমাশিল্পীর মাসখানেক সময় লেগেছে এই প্রতিমা তৈরি করতে। খরচ হয়েছে আনুমানিক এক লক্ষ টাকার মতো। চিনিগুঁড়া ধান লেগেছে একশ’ কেজির মতো। প্রতিমাকে ভিন্ন আদলে তুলে ধরার প্রয়াসে চিনিগুঁড়া ধান ব্যবহার করা হয়েছে। যেন সোনালি আভা ফুটে উঠে।
“ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা”- কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এই শাশ্বত আহবান যেনো ফুটে উঠেছে প্রতিমার গোটা অবয়বজুড়ে!
প্রতিমাশিল্পীরা জানান, ‘এই মন্ডপে দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর, মহিষাসুরসহ ১৮টি প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট ও বিচালির ফ্রেম বা কাঠামো তৈরি করা হয়। পরে তাতে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি আনা হয়। সেগুলো শুকিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে মাটি নরম থাকতে প্রতিমাজুড়ে চিনিগুঁড়া ধান বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
চিনিগুঁড়া ধান এমন ভাবে বসানো হয়েছে যাতে দেখলে মনে হবে প্রতিমাগুলো সোনায় মোড়ানো।
এগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রতিমায় রং স্প্রে করা হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) কলকাতা থেকে প্রকাশিত বর্তমান পত্রিকায় বিদেশের পুজো শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাতক্ষীরার কলারোয়ার উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়ায় চিনিগুঁড়া ধানের তৈরি প্রতিমার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে পুজোর মধ্যে বিশেষ নজর কেড়েছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার বিশেষ প্রজাতির সুগন্ধি চিনিগুঁড়ো ধানের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা।
কলারোয়া উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সন্দিপ রায় জানান, ‘২০ অক্টোবর দেবী দুর্গার বোধন ও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। এবার উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৪৮টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। সবচেয়ে বেশি মন্ডপ রয়েছে উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে। সেখানে ৯টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। আর পৌরসভায় রয়েছে ৮টি মন্ডপ।’
তিনি আরো জানান, ‘আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরি সুসম্পন্ন হয়েছে। তিনি আশা করেন, শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উৎসবমুখরতায় উপজেলাব্যাপী দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)