কলারোয়া পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন
কলারোয়া সরকারি জিকেএমকে পাইলট হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ তিন শিক্ষক কর্তৃক প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি মিথ্যা আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাধারণ শিক্ষকরা।
বুধবার দুপুরে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে শিক্ষকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট হাইস্কুল জাতীয়করণ সংক্রান্ত কাজে প্রধান শিক্ষক আবদুর রব শিক্ষকের নিকট থেকে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মর্মে সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ ৩জন শিক্ষক যে অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যালয় জাতীয়করণ সংক্রান্ত কাজে শিক্ষকরা ঢাকায় যাতায়াত, বিভিন্ন অফিসে যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য শিক্ষক প্রতিনিধির মাধ্যমে মাঝেমধ্যে এক থেকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন, সেটাও আমাদের শিক্ষক প্রতিনিধির মাধ্যমে খরচ করা হয়। একটি বিশেষ মহল প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এহেন অভিযোগ এনেছেন। আমরা এ ধরনের মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ এবং প্রধান শিক্ষকের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন শিক্ষক জানান, ‘২০১৭ সাল থেকে প্রতি মাসে মাঝেমধ্যে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করে তারা দিয়েছেন। তবে সেটা কোনভাবেই কোটি টাকা নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রকিব ও সহকারী শিক্ষক মাহফুজা খাতুন এডিসি জেনারেল মহোদয় বরাবর মিথ্যা অভিযোগ করেন। আমাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের নামে ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে জাতীয়করণে প্রধান শিক্ষক ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা শিক্ষকদের নিকট থেকে আদায় করেছেন এবং সেই টাকার একটি অংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছেন এবং বাকি টাকা প্রধান শিক্ষক নিজে আত্মসাৎ করেছেন। সেটা তদন্তে প্রমানিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যালয় জাতীয়করণ সংক্রান্ত কাজে শিক্ষকরা ঢাকায় যাতায়াত, বিভিন্ন অফিসে যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য শিক্ষক প্রতিনিধির মাধ্যমে মাঝে মধ্যে এক থেকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন, সেটাও আমাদের শিক্ষক প্রতিনিধির মাধ্যমে খরচ করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিদ্যালয় জাতীয় করণ কার্যক্রম শুরু হলে শিক্ষকদের বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতন ভাতা প্রদান করায় সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রকিব ও মাহফুজা খাতুন এডিসি স্যারের নিকট পৃথক পৃথক আবেদনে সরকারি নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতন ভাতা প্রদান করেছেন মর্মে অভিযোগ করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে প্রধান শিক্ষক আবদুর রব নাকি সহকারি প্রধান শিক্ষক আবদুর রকিবসহ ৭ জন শিক্ষকের নিকট কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন মর্মে এডিসি স্যারের নিকট পৃথক পৃথক অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় একজন নির্বাহি অফিসার, একজন ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয় এর সমন্বয়ে তিন দিনব্যাপী তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয় নি। এছাড়া বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রকিব এর ভাইয়ের স্ত্রীর নামে লোনের ভুয়া গ্রান্টার করায় বার বার ব্যাংক হতে তার কাছে নোটিশ আসায় তিনি বিষয়টি ইউএনও মহোদয় কে অবহিত করায় আব্দুর রকিব তাকে বাঁশের চটা দিয়ে মারপিট করে রক্তাক্ত করেন। সহকারি শিক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান কর্তৃক ৭১এর ভাষাসৈনিক এর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চেয়ারম্যান অত্র বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আমানুল্লাহ স্যারকে বহুবার অপমান করেন। অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল হোসেন দায়িত্বে থাকাকালিন সময়েও বারবার অপমান করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক সভায় সহকারী শিক্ষক রফিকুজ্জামান যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব করায় সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রকিব তাকে সরাসরি হুমকি দেন। পরের সভায় আবার সহকারী শিক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান ওই শিক্ষককে পুনরায় হুমকি দেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রকিব প্রায় সময়ই শিক্ষকদের সাথে গালিগালাজ করতেন সকল শিক্ষক তার গালিগালাজ হতে পরিত্রান পাওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবর শিক্ষক কমনরুম স্থানান্তর করার আবেদন করেন। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রধান শিক্ষক আবদুর রকিব ৪৫ দিন ছুটি ভোগ করেন। বাউবির ২০টি ক্লাস পরিচালনার কথা থাকলেও তিনি মাত্র দুটি ক্লাস গ্রহণ করেন যা বিদ্যালয়ের ক্ষতি। সেই সময়ে তাকে শোকজ করা হলে তিনি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি খাম প্রেরণ করেন এবং খামের ভিতর দেখা যায় একটি সাদা কাগজ। সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রকিব ২০১৯ সালে অফিস কক্ষে প্রবেশ করে জোরপূর্বক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন। এসকল বিষয় প্রধান শিক্ষক প্রশাসনিকভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপনের চেষ্টা করলে তার উপর ন্যাক্ক্যারজনক ঘটনা ঘটিয়ে তাকে লাঞ্চিত করা হয়। কতিপয় শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
উপস্থিত সকল শিক্ষক কর্মচারী এ ধরনের মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ এবং প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব এর উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সার্বিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই স্কুলের ৩৬ জন শিক্ষক ও স্টাফদের মধ্যে ৩১ জন সহকারী শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক আবদুর রকিব এর বিরুদ্ধে একটি অডিট আপত্তি কে কেন্দ্র করে তার সাথে প্রধান শিক্ষক আবদুর রবের বিরোধ চলছিলো। এরই জেরে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও দুই জন সহকারী শিক্ষক কর্তৃক প্রধান শিক্ষক আবদুর রব লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে ৩জন শিক্ষককে আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা (নং-২৭) দায়ের করেছেন।
অপরদিকে, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রকিব, সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান ও সহকারী শিক্ষক মাহফুজা খাতুন মঙ্গলবার বিকালে প্রধান শিক্ষক আবদুর রবের বিরুদ্ধে অডিট, স্কুল জাতীয়করণের নামে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)