কলারোয়ায় বসতবাড়ির গা ঘেষে নির্মাণাধীন ভবনে ক্লিনিক-প্যাথলোজির পায়তারা!
বৈধ-অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভরপুর হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা। নিত্যনতুন গজিয়েও উঠছে এগুলো। কিছু অসাধু ব্যক্তিদের কারণে চিকিৎসাসেবা যেনো চিকিৎসা ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। এমনই আরেকটি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার শুরু হতে যাচ্ছে সাতক্ষীরার কলারোয়ায়। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা সরকারি হাসপাতালের একেইবারেই পাশে বসতবাড়ির গা ঘেষে গড়ে উঠছে দ্বিতল ভবনের আরেকটি বেসরকারি ক্লিনিক।
এ ব্যাপারে সংক্ষুব্ধ প্রতিবেশি হাজি নাছিরউদ্দীন কলেজের প্রভাষক আল-মামুন সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুবিচারের দাবিতে দরখাস্ত করেছেন।
প্রভাষক আল-মামুন জানান, ‘আমার বাসার সম্মুখে মাত্র আড়াই ফুট দূরত্বে আমার পার্শ্ববর্তী জমির মালিক মো. আব্দুর রহমান সরদার সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই সরকারি হাসপাতালের মাত্র ১৫০ গজ দূরে একটি অনিবন্ধিত ক্লিনিক স্থাপনের জন্য ভবন নির্মাণ ও প্রস্তুত করছেন। ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) আমার বেডরুমের জানালার একেবারেই সন্নিকটে তথা গা ঘেষেই। ভবনের নীচতলাটি নির্মিত হচ্ছে পৌরসভা কর্তৃক পাশকৃত ভবনের নকশার সম্পূর্ণ বহির্ভূত যা প্যাথলোজির জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কলারোয়া পৌর মেয়র বরাবর একটি আবেদন দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাসার এত কাছাকাছিতে ক্লিনিক না করতে প্রথমে আমি ভবন মালিককে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করলে তিনি এখানে ক্লিনিক করবেন না মর্মে আমাকে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার কথা না রাখলে আমি আমার আত্নীয়-স্বজনের মাধ্যমে তাকে অনুরোধ করলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন। আমি এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরও একটি আবেদন করেছি। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আবেদন জানিয়েছি।’
ভাড়া দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ওই ভবনের মালিক মো. আব্দুর রহমান সরদার বলেন, ‘ভবনটি এখনো নির্মানাধীন। ভাড়া দেয়া হয়নি।’
তবে নির্মানাধীন ওই ভবনের নিচতলায় ইতোমধ্যে পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মরত ডি কে সমাদ্দারসহ কয়েক ব্যক্তির কাছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আর দ্বিতীয়তলায় ক্লিনিক স্থাপনের জন্য কাজ চলমান রয়েছে।
নিচতলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার হিসেবে ভাড়া নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ডি কে সমাদ্দার বলেন, ‘শুধু আমি একা নই, আমিসহ বাগআঁচড়ার ডাক্তার হাবিবুর রহমান, মিতালী প্যাথলোজির শফি ও সোনাবাড়িয়ার গ্রামডাক্তার আলাউদ্দীন মিলে প্যাথলোজি করা হচ্ছে।’
তবে ভবনের দ্বিতীয়তলায় ক্লিনিক স্থাপনের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। তবে দ্বিতীয়তলায় তাকেসহ তার পার্টনারদের একাধিকবার পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। এমন ছবিও সংক্ষুব্ধ প্রতিবেশি প্রমাণ হিসেবে দাখিল করেছেন।
এদিকে, পৌরসভা স্বীকৃত ভবন নির্মাণের নকশা (প্লান) অনুযায়ী ভবন নির্মান তো হয়নি, এমনকি নকশা বহির্ভুত নির্মাণ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা গেছে- নির্মানাধীন ভবনের দ্বিতীয়তলায় হাফিজা ক্লিনিক কিংবা হাফিজা ক্লিনিকের মালিকদের আরেকটি বেসরকারি ক্লিনিক স্থাপন করা হচ্ছে। নির্মিতব্য ওই ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) কক্ষটি ২হাত দূরত্বেই রয়েছে প্রতিবেশিদের বসতবাড়ির বেডরুমসহ অন্যান্য কক্ষ।
এছাড়া সরকারি আইন অনুুযায়ী সরকারি হাসপাতালের এক কিলোমিটারের মধ্যে কিংবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আধা কিলোমিটারের দূরত্বের মধ্যে কোন বেসরকারি হাসপাতাল থাকতে পারবে না বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিরসনে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি ও নিয়মনীতি ছাড়া কোন বেসরকারি ক্লিনিক স্থাপনের সুযোগ নেই। সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রতিবেদন চাইলে সরেজমিন পরিদর্শন ও তদন্ত সাপেক্ষে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচ এন্ড এফপিও) ডাক্তর জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত না। তবে চিঠি পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কলারোয়া পৌরসভার মেয়র প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হয়নি মর্মে অভিযোগ পেয়েছি। এটি মূলত নানা-নাতির পারিবারিক বিষয়। খুব শীঘ্রই উভয় পক্ষকে নিয়ে বসবো।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি ফরওয়ার্ড করা হচ্ছে।’
সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) ডাক্তার মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘সরকারি আইন, বিধি ও নিয়মের বাইরে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনের কোন সুযোগ নেই। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)