কলারোয়ায় বিদ্যুৎ বন্ধের গল্প ও পেছনের গল্প
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় চলতি সময়ে প্রচন্ড গরম আর তাপদাহে অতিষ্ঠ গোটা জনজীবন ও প্রানিকূল। তার উপর চলমান পবিত্র রমজান মাস। এরই মাঝে সময়ে অসময়ে চলে যাচ্ছে বিদ্যুত। গরমের অতিষ্ঠতা তীব্রতর হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন সকলে।
কিন্তু বিদ্যুতের এই লুকোচুরি খেলা কেন? এর পেছনের কারণ-ই বা কী? সেই কারণ আর পিছনের গল্প জানালেন সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুত সমিতির কলারোয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম।
ফেসবুকে তেমনি এক গল্প আকারে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
হুবুহু সেটা তুলে ধরা হলো-
বিদ্যুৎ বন্ধের গল্প ও পেছনের গল্প
পবিত্র রমজান মাস চলছে। সাথে আছে প্রচন্ড গরম। এই গরমে বিদ্যুৎ বন্ধ হলে আমরা সবাই জানি কিন্তু এই বন্ধের পেছনের কারণ অনেকেই জানতে চাইনা। আসুন জানি গল্পের পেছনের গল্প।
#যার জন্য যেটা প্রযোজ্য
#গল্প ১:
আপনি চৈত্রের তাপদাহ সহ্য করে সারাদিন রোজা রেখে বুকফাটা তৃষ্ণা নিয়ে ইফতারির সামনে বসেছেন। আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি আছে। দোয়া কালাম পড়ছেন। এই সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। রাগে ক্ষোভে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে যাচ্ছেতাই গালাগালি করলেন। সোস্যাল মিডিয়ায় গরল উৎরে দিলেন। মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বাহারি আইটেমের ইফতারি শেষ করলেন।
#পেছনের গল্প :
আপনি হয়তো জানেন না আপনার লাইনটি বন্ধ করে বড় ধরনের অভিযোগ সারতে তখন খুটির মাথায় কাজ করছে কোনো একজন লাইনক্রু। সেও সারাদিন রোজা রেখে অভিযোগ সেরেছে। পোলের মাথায় বসে শুধু পানি দিয়ে ইফতারি সেরে বলেছে আলহামদুলিল্লাহ্।।
#গল্প ২:
সারাদিন রোজা রেখেছেন। তারাবী পড়তে যাবেন এমন সময় ঝড়ো বাতাসে লাইন চলে গেলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গরমে তারাবী পড়লেন। মনে মনে ভাবলেন ঝড় থামার পরেও কেনো বিদ্যুৎ পেলামনা। আফসোস এই দেশ আর জাতির। বিদ্যুৎ বিভাগের হয়রানি আর দুর্দশা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক বড় পোস্ট দিয়ে ঘুমুতে গেলেন। ঝড় থেমে হালকা বৃষ্টি পড়ছে তাই ঘুমের সমস্যা হয়নি। সেহেরি খেতে উঠে দেখলেন বিদ্যুৎ এসেছে। তৃপ্তি নিয়ে শেষ মিনিট পযর্ন্ত সেহেরি খেলেন।
#পেছনের গল্প :
আপনি ভাবছেন ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ অফিস সুইস বন্ধ করে রেখেছিল আবার চালু করে দিয়েছে বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। কোনো দৈবক্রমে সেহেরিতে বিদ্যুৎ আসেনি। সারাদিন রোজা রাখার পর একদল লাইনক্রু সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে বনজঙ্গল মাঠ পেরিয়ে অনেক বাঁশ আর গাছ কেটে, লাইন মেরামত করে আপনাকে বিদ্যুৎ দিয়েছে। এর পিছনে নির্ঘুম সময় আর শ্রম দিয়েছে বিদ্যুৎ অফিসের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী। ঐ সকল লাইনক্রু সেহরিতে কেউ পানি খেয়ে কেউ শুকনা খাবার খেয়ে পরের দিন রোজা রেখেছে আর লাইন সচল করার আনন্দে বলেছে আলহামদুলিল্লাহ্।।
#গল্প-৩:
জুম্মার নামাজের আজান দিতে মাইকের সামনে দাড়িয়েছেন। আল্লাহ্ আকবার বলতেই বাতাসে বিদ্যুৎ বন্ধ হলো। আজান শেষ করে আজানের দোয়া বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের চৌদ্দ গৌষ্ঠির নামে বদ দোয়া দিলেন।
#পেছনের গল্প :
একটু মনে করে দেখুন আপনার এলাকায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন লাইনের গাছপালা কাটতে এসেছিল। আপনার একটু দুরের একটা গাছের ডাল কাটার জন্য আপনি খালি হাতে এলেও আপনার স্ত্রী বটি হাতে তেড়ে এসেছিল। সেই ডাল বাতাসে যদি লাইনের উপর পড়ে বিদ্যুৎ বন্ধ হয় তবে এ দ্বায় কার??
#গল্প-৪:
আপনি অনেক বড় পদে আছেন। একরাতে বাড়িতে থাকা মা বাবা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেলো। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলেন, অনেক বড় যায়গায় অভিযোগ দিলেন। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এলো। দেখা গেলো আপনার গ্রামের লাইনটি হেলে পড়ে গেছে। সেই রাতে কোনভাবেই বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবেনা।
#পেছনের গল্প :
কিছুদিন আগে আপনার বাড়ির পার্শে ঝড়ে খুটি ভেঙ্গে যায়। লাইনের টেনশন ধরে রাখতে খুটিতে একটি ঠেশপোল আপনার পরিত্যক্ত জমির উপর ছিলো। আপনি ঐ ঠেশপোলটি আর স্হাপন করতে দেননি। আপনাকে অনেক বোঝানোর পরেও আপনি বুঝতে চাননি। বলেছেন “লাইন না থাকে পড়ে যাক ঐ যায়গায় আমি বিল্ডিং করবো”। আপনি ঐ যায়গায় বিল্ডিং করেননি কোনদিন করবেনও না। লাইন ঠিকই পড়ে গেলো। আপনার অসুস্থ মা বাবাকে বিব্যুৎ দিতে না পারার ব্যার্থতা কি শুধু বিদ্যুৎ অফিসের??
#গল্প-৫:
আপনি দুটি গরু পালছেন। ঈদে ভালো দাম পাবেন। একদিন মাঠে ঘাস খাওয়ানোর সময় কারেন্টের তারে জড়িয়ে মারা গেলো। আপনি শোকে পাথর হয়ে গেলেন। বিদ্যুৎ অফিসের গাফিলতি নিয়ে অনেক আন্দোলন হলো, লেখালেখি হলো, বিদ্যুৎ অফিসের কাছে ক্ষতিপুরন চাইলেন।
#পেছনের গল্প :
কিছুদিন আগে জমি চাষ করার সময় আপনার জমিতে স্হাপনকৃত টানা তারটি শুধুমাত্র বিদ্বেষ করে কেটে দিলেন। বিদ্যুৎ অফিসকে জানালেনও না। এখন যদি টানাতার শর্টসার্কিট হয়ে গরু মরে তবে এই দোষ কার??
পরিশেষে :
বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যায় আপনার বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখার জন্য। শুধু দরকার আপনার একটু সহযোগিতা, একটু সহনশীল আর পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি। বিদ্যুৎ যেমন দেখা যায়না তেমনি এর কোনো ধর্ম নেই। আজানের শব্দ যেমন শুনতে পাইনা, রোজা আর অন্য মাসের জন্য একই ধর্ম। লাইনে ফল্ট হলে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে আপনাকে অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে।
আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(চলবে)
ধন্যবাদ।।
প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম,
ডিজিএম,
কলারোয়া জোনাল অফিস,
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুত সমিতি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)