জাতীয় পাখি দোয়েল বিলুপ্তির পথে


বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল আজ বিলুপ্তির পথে! দুই টাকার কাগজের নোটে রয়েছে জাতীয় পাখি দোয়েলের ছবি। মাঠে-ঘাটে, বনে- জঙ্গলে,গাছে গাছে একসময় জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের আবর্তে এখন আর চিরচেনা সেই পাখি দেখা যায় না। পাখিদের কলরবে মুখোরিত গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখি শূন্য হতে চলছে।
বনে জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরূপ দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। দুস্কর হয়ে পড়েছে পাখির দেখা। বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কিটনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সংকট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি। গত কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে। তখন বোঝা যেতো ভোর হয়েছে। পাখির কলকাকলীই বলে দিতো যে, এখন ঘুম থেকে উঠতে হবে। প্রতিটি বাঁশঝাড়ই পাখির ডাকে মুখোরিত থাকতো এবং বাঁশঝাড়ের পার্শ্বে বসবাসরত মানুষদের ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে।
কিন্তু এখন যেন সেই পাখির ডাক হারিয়ে গেছে, এখন আর গাছ গাছালিতে পাখির ডাক নেই। কয়েকজন বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোয়েল, টিয়া, ময়না, কোকিল, শালিক, চড়ুইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনার গাছের ডালে বসে তাদের সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করতো। এই পাখির কিচির-মিচির শীষ দেওয়া শব্দ এখন আর কানে শোনা যায় না। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ গাছে, আমের ডালে, সজিনা গাছে, বাড়ির ছাদে যে পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোঁখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, বক, কাক, মাছরাঙা, ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না।পাখি প্রেমী কিছু লোকজন জানান, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।
নতুন প্রজন্ম ঐ পাখি আর তেমন দেখতে পায় না, তাছাড়া শিকারিদের দৌরাত্ম্যের কারণে পাখিশূন্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল। নির্বিচারে পাখি শিকার হচ্ছে। বন উজাড় করে গাছ কাঁটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে পাখির বিচরণ কমে যাচ্ছে। এখনি পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পাখি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সচেতন মহল মনে করছেন, নদী ভাঙনের ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি, তাছাড়া জনসংখ্যার প্রভাবেও কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে গাছ কেটে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই আগের মতো তেমন পাখির দেখা মিলছে না।
মুনাফার আশায় বনে শিকারিরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচতে জীবন রক্ষার্থে পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পরিশেষে বলা যায়, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ, বন ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির দেখা আর মিলবে না। তাই আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েলসহ অন্যান্য জাতের পাখি সংক্ষণের জন্য সামাজিক বানায়ন সৃষ্টি করা জরুরি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
