টিকা নেয়ার ১৫ দিন পর শরীরে অ্যান্টিবডি আসা শুরু করে
করোনার টিকা নেয়ার ১৪ থেকে ১৫ দিন পর শরীরে অ্যান্টিবডি (করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা) আসা শুরু করে। তাই টিকা নিলেও ১৫ দিনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য টিকা নিলেও মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজন আছে।
টিকা নেয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হলে বড় বিপদের সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়া টিকা নেয়ার পর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে তা সবসময় থাকবে না। তবে মেমোরি সেল থেকে যাবে। পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্ত হলেও সেই মেমোরি সেল দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করবে এবং করোনা থেকে সুরক্ষা দেবে।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে এসব কথা বলেন সার্সভাইরাসের কিট উদ্ভাবক, করোনাভাইরাস শনাক্তের ‘জি র্যাপিড ডট ব্লট’ কিট উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীল। তিনি মনে করেন, ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের অনাস্থার কোনো কারণ নাই। এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই।
সম্প্রতি টিকা নেয়ার ১২ দিন পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে।
ড. বিজন বলেন, ‘ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। কখনও আরও বেশি লাগে। মোটামুটি ১৫ দিন থেকে অ্যান্টিবডি আসা শুরু করে। ২৮ দিনে গিয়ে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবডি থাকে। ভ্যাকসিন নেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে যদি আপনার শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে, তাহলে কিন্তু ডিজিজ (অসুখ) হবেই। সচিব যেদিন ভ্যাকসিন নিয়েছেন, এর কয়েক দিন আগে বা পরে হয়তো তার শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। ভাইরাসের ক্ষমতা অনেক বেশি, যা ভ্যাকসিন থেকে অ্যান্টিবডি আসতে আসতে তার শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তার ক্ষতিটা নন-ভ্যাকসিনেটেড মানুষের মতো হবে না। আমার মনে হয়, তার রোগের তীব্রতা কম হবে।’
টিকা নেয়ার পরও সচিবের করোনায় আক্রান্ত হওয়া একটা নির্দেশক উল্লেখ করে ড. বিজন বলেন, ‘টিকা নিলেই মনে করবেন না যে, সুরক্ষা চলে আসবে। অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। এর বিকল্প নেই। টিকা দেয়ার কমপক্ষে ২৮ দিন মাস্ক পরতেই হবে। সেকেন্ড ভ্যাকসিন দেয়ার ২৮ দিন পর আপনারা মাস্ক পরা ধীরে ধীরে কমাতে পারেন। এর আগে মাস্ক পরা ছেড়ে দেবেন, এটা কল্পনাও করা যাবে না। সাধারণত ভ্যাকসিন নেয়ার পর ২৮ দিনের মাথায় যখন সর্বোচ্চ অ্যান্টিবডি আসে, তার পরবর্তী ২৮ দিনে অ্যান্টিবডি নেমে যায়। তাই ধীরে ধীরে নেমে আসার পর দ্বিতীয় ডোজ দিলে ভালো অ্যান্টিবডি হয়। যা ছয় মাস থেকে এক বছর আপনাকে নির্দ্বিধায় আপনাকে সুরক্ষা দেবে।’
টিকা দিলেও অ্যান্টিবডি শরীরে সারাজীবন থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিবডি সাময়িক যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হয়। কোনো দেশের সীমান্তে যদি বাইরের শত্রুরা আক্রমণ করে, তখন কিন্তু ওই মুহূর্তে দেশকে রক্ষা করার জন্য অসংখ্য সৈন্য সেখানে পাঠানো হয়। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে সব সৈন্য সেখানে থাকে না। কিছু সৈন্য পরিবেশটাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য থাকে। তারা সতর্ক থাকে সর্বদা। তেমনি ভ্যাকসিন দেয়ার পর যখন সর্বোচ্চ অ্যান্টিবডি আসে, তা ধীরে ধীরে কমে যায়। তাই বলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে না। শরীরে যে মেমোরি সেল তৈরি হয়, শরীরে কোনোরকম ভাইরাস ঢুকলে তাৎক্ষণিকভাবে বা তিন দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে। ভ্যাকসিন দিলে ১৫ দিনের আগে অ্যান্টিবডি হয় না, কিন্তু ভ্যাকসিন দেয়া থাকলে ভাইরাস আক্রমণ করলে তিন দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে দেবে মেমোরি সেল।’
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেয়ার অর্থ হলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী যে কোষ, তাদের শিক্ষা দেয়া হয়। যেমন গ্রামের একজন লেখাপড়া না জানা ব্যক্তিকে বই ধরিয়ে দিলে সে পড়তে পারবে না। তাকে আগে অক্ষরজ্ঞান দিতে হবে। অক্ষরজ্ঞান দিলে তিনি ওই বই পড়তে পারবেন। ভ্যাকসিন দেয়ার অর্থ হচ্ছে আমাদের ইমিউন সেলকে অক্ষরজ্ঞান দেয়া। এই বস্তুটা (ভাইরাস) যদি আমাদের শরীরে কখনও ঢুকে, তখন তুমি একে আক্রমণ করবা। এই শিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত ইমিউন সিস্টেম কাজ করে না।’
‘ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের অনাস্থার কোনো কারণ নাই। এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নাই। ভ্যাকসিন দেয়ার অর্থ পৃথিবীর সব মানুষ ভ্যাকসিন নিলে তাহলে ভাইরাস আর গ্রো করার জন্য কাউকে খুঁজে পাবে না। ভ্যাকসিনের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। দুই-একটা তো ব্যতিক্রম হবেই। ত্রাণ সচিবের দুর্ভাগ্য তিনি সেই ব্যতিক্রমে পড়ে গেছেন’, যোগ করেন ড. বিজন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)