বলছেন উপদেষ্টারা
টেলিকমিউনিকেশন লাইসেন্সিং নীতিমালা যুগান্তকারী পদক্ষেপ


‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি-২০২৫’ বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। ৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিমালাটি অনুমোদনকালে তারা এমন অভিমত দেন।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ওই দিন বিকেলে বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। সেই সঙ্গে তিনি নীতিমালাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ বলেন, যে মধ্যস্বত্বভোগী লাইসেন্সিং ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল সেটি এ নীতিমালার মাধ্যমে রহিত করে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী লাইসেন্সিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে যারা ব্যবসা করেন, তাদের সেবা মান এবং কভারেজ নিশ্চয়তার ভেতর আনা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক টেলিযোগাযোগ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে ভয়েস কল ও ডেটাকে নাগরিকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ফয়েজ জানান, বর্তমানে বিটিআরসির ২৬ ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৯৯৯টি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত মাত্রায় মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি করার আগের নীতিমালাকে অপব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়েছে। এ বিশৃঙ্খলার মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে যে বিটিআরসির পক্ষে লাইসেন্সগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা, তদারকি করা ও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া ব্যাহত হচ্ছিল। আগের নীতিমালার মধ্যস্বত্বভোগী স্তরগুলোকে অপসারণ করে বর্তমান নীতিতে তিনটি মাত্র স্তরে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্যাটেলাইট-সংক্রান্ত যে টেলিযোগাযোগ সেবা সম্প্রতি দেশে যাত্রা শুরু করেছে সেটির জন্য আরেকটি লাইসেন্স নিয়ে মোট চারটি স্তরের লাইসেন্সিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে বাকি সব ধরনকে বদলে বর্তমান স্তরে আনা হয়েছে।
নতুন নীতিমালাটিকে ব্যবসাবান্ধব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, আগের লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় যারা আইটিসি কিংবা আইএজি বা আইটিডব্লিউ পর্যায়ে কাজ করত তারা এখন আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করবে। এই স্তরটিকে বড় করে সেখানে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। একইভাবে জাতীয় অবকাঠামো স্তর করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আছে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ- অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক, টাওয়ার, ডেটা সেন্টার ইত্যাদি। এখানে দুটি শ্রেণি ছিল- টাওয়ার লাইসেন্স ও ফাইবার লাইসেন্স। বর্তমান নীতিমালায় যারা মধ্যবর্তী স্তরের লাইসেন্স নেবে, তারা টাওয়ার কোম্পানি হলে ফাইবার নেটওয়ার্ক করতে পারবে এবং ফাইবার নেটওয়ার্ক হলে টাওয়ার করতে পারবে। আর উভয়েই ডেটা সেন্টার এবং ক্লাউড বিজনেস করতে পারবে। ডেটা সেন্টার ও ক্লাউডের জন্য কোনো ধরনের লাইসেন্স লাগবে না। ডিজিটাল অর্থনীতি ভবিষ্যৎ উন্মুক্ত রাখার জন্য এটা করা হচ্ছে। এর ফলে আগামী দিনে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক এবং টাওয়ার ব্যবসায় নতুন নতুন অপারেটর আসবে এবং এক খাত প্রতিযোগিতামূলক হবে।
পুরোনো নীতিমালায় কিছু নতুন প্রযুক্তির বিষয় ছিল না এবং তা নতুনটিতে আনার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান ফয়েজ। তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা বিদেশে যান তারা দেখবেন কয়েক ডজন সেলুলার মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র চারটি আছে। যেহেতু এনভিএলও আসেনি, সে জন্য সেলুলার সেবাদাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়নি। আমরা এই প্রতিযোগিতার বিষয়টাকে নতুন পলিসির মাধ্যমে তুলে ধরেছি। একই সাথে প্রাইভেট ফাইভ-জি, ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই কিংবা ওয়াইফাই-সিক্স ওয়াইফাই-সেভেনের মত প্রযুক্তিগুলো ই-লাইসেন্সের হাত ধরে আসতে পারে।’
ফয়েজ দাবি করেন, নতুন তিনটি স্তরের মধ্যে আরও বেশি প্রতিযোগিতা হবে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গ্রাহকেরা ভয়েস কল এবং মোবাইল কিংবা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে কম মূল্য সেবা পাবেন।
লাইসেন্সের পর নতুন নীতিমালায় দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে সেবার মানের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সেবার মান নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে অনেকগুলো মূল কর্মক্ষমতা সূচক (কেপিআই) রয়েছে। এগুলোকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। যাতে আছে- গ্রাহক মোবাইল নেটওয়ার্কে কত সহজে প্রবেশাধিকার পাবে, কল সংযুক্ত হতে যেন বেশি সময় না লাগে, কল যুক্ত হওয়ার পর চলাচলের কারণে যেন তা কেটে না যায় ও সংযোগের মান ভালো থাকা। সে জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ১৫ এমবিপিএস এবং মোবাইল সেলুলার ইন্টারনেটে ১০ এমবিপিএস গতির কথা বলা হয়েছে। এটি আগে পরীক্ষা করা হতো না। এখন পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রাখা হবে। শহর, গ্রাম, পাহাড়, সমতল, উপকূল কিংবা উত্তরে কাছাকাছি মানের সেবা বিন্যাস করতে হবে।
ফয়েজ বলেন, ‘বর্তমানে দেশের মাত্র ২০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে ফাইবারাইজেশন পৌঁছেছে। সরকার আগামী তিন বছরের মধ্যে এটাকে ৮০ শতাংশে পৌঁছানোর টার্গেট নিয়েছে। শুধু শহরে ভালো ক্যাপাসিটি দিয়ে গ্রামকে বঞ্চিত রাখার যে বৈষম্য, সে বৈষম্য থেকে সরে এসে সারা দেশে কাভারেজ লেয়ার এবং একাধিক ক্যাপাসিটি লেয়ার থাকতে হবে। এখন আমরা মানসম্পন্ন সেবা পাচ্ছি না। কারণ আমাদের মোবাইল টাওয়ারগুলোর মধ্যে যে ক্যাপাসিটি আছে, সেই ক্যাপাসিটি দিয়ে অধিক সংখ্যক গ্রাহককে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। নতুন পলিসিতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত থেকে বেশ উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক আহরণ করা হয়। কিন্তু এখন কল-জিডিপি অনুপাত অত্যন্ত নিম্ন এবং গত বছর সেটা ৩৫ শতাংশ কমেছে। তাই নতুন নীতিমালায় সরকারকে আয়ের বড় অংশ না দিয়ে কীভাবে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট এবং ভয়েস কলের দাম কমানো যায় তা রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী কমিয়ে দেওয়া হবে এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে দেয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে দেড়বিস্তারিত পড়ুন

অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকবান্ধব না হলে আর কে হবে: উপ-প্রেস সচিব
বিগত সরকারের আমলে শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া প্রায় সব মামলাবিস্তারিত পড়ুন

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফের ভা*ঙচুর-অ*গ্নিসংযোগ
রাজধানীর কাকরাইলে আবারও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুর চলছে।বিস্তারিত পড়ুন