পদ না পেয়ে অভিমানে ছাত্রলীগ কর্মীর আত্মহত্যা, সাতক্ষীরায় রাব্বানী


দলীয় পদ না পেয়ে অভিমানে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সাতক্ষীরার তালায় আত্মহত্যা করা ছাত্রলীগ কর্মীর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ডাকসু’র সাবেক জিএস ও টিম পজিটিভ বাংলাদেশের মুখপাত্র গোলাম রাব্বানী।
রোববার বিকেলে তালার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামে শোকাহত বাড়িতে যান ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।
এ সময় তিনি শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং পরিবারটির পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা দেন।
আত্মহত্যা করা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কর্মী শেখ রিয়াদ হোসেন বাবুর বাবা শেখ মনজুর রহমান জানান, ছাত্রলীগ করার জন্য বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে টাকা নিতো বাবু। সব টাকা দলের পেছনে খরচ করতো। তবে কোনো পদ না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যার আগে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাবু এসব লিখে গেছে। আমি চাই বাংলাদেশে যেন এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ কর্মী বাবুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও সার্বিক খোঁজখবর নেন গোলাম রাব্বানী।
আলাপকালে ছাত্রলীগ কর্মী বাবুর বাবা মনজুর রহমান ছোট ছেলে শেখ রিফাতের লেখাপড়া শেষে একটি সরকারি চাকরির দাবি করেন।
এ সময় রাব্বানী সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
টিম পজিটিভ বাংলাদেশের মুখপাত্র গোলাম রাব্বানী বলেন, টাকার জন্য পদ না পেয়ে একজন ছাত্রলীগ কর্মী আত্মহত্যা করবে এটি হতে পারে না। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি ছুটে এসেছি। এই পরিবারটির পাশে আমি থাকবো। তারা যে ধরনের সহযোগিতা চায় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বাবুর ছোট ভাই শেখ রিফাতের একটি চাকরির ব্যবস্থাও করা হবে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সব ছাত্রলীগ কর্মীকে মনে রাখতে হবে আগে লেখাপড়া তারপর রাজনীতি। লেখাপড়া বাদ দিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। জীবনে সফল হতে হলে এটিকে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে।
নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাত্রলীগ কর্মী শেখ রিয়াদ বাবুর কবরস্থান জিয়ারত করেন গোলাম রাব্বানী।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বিকেলে নিজ বাড়িতে বিষপান করেন শেখ রিয়াদ হোসেন বাবু। পরে তাকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর আগে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বাবু।
পাঠকের জন্য স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
নিজের কাছেই অবাক লাগছে। আজ এক সপ্তাহ হলো…। বিষের বোতলটা আমার বালিশের নিচে পড়ে আছে স্পষ্ট দেখতে পারছি। সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। ছোট ভাইটা পাগলপ্রায়। জানি ছোট বোনটা খুব কাঁদছে। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি হয়তো! এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।
জানেন? সেদিন খুব কেঁদেছিলাম আমি। যেদিন আমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলেন সোহাগ দাদা। আমার বাঁচার শেষ আশাটুকু ছিলেন উনি। অঝরে কেঁদেছি সারারাত এই ক’দিন। প্রতি রাতে বালিশ ভিজিয়েছি চোখের জলে। একটিবারও খোঁজ নাওনি কেমন ছিলাম আমি।
আর, দোস্ত তোদের অনেক ধন্যবাদ। ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখালেখি করছিস। তবে কি জানিস? বাস্তবে এতটা সময় তোরা যদি দিতি…তাহলে, না থাক কিছু না।
জানি তোমরা খুব কাঁদছ। জানি খুব ভালোবাসতে আমাকে। হয়তো ঘৃণাও করতে অনেকে। যদি আর একটু খোঁজ করতে, আমার সমস্যাগুলো শুনতে…। যদি আমার দিকে আর একটু খেয়াল রাখতে…। যদি সবকিছু নির্ভয়ে বলতে পারতাম তোমাদের…। তাহলে আজ হয়তো…ছোট বোন, কাঁদিস না লক্ষ্মীটি। হয়তো সব থেকে বড় অন্যায়টা তোর সাথে হলো! মাফ করে দিস তোর এই অপরাধী ভাইটিকে। জানি এই ভুলের কোনো ক্ষমা নেই। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো। দূর থেকে না হয় দেখলাম সবার হাসিমাখা মুখ।
ভালো থেক সবাই, হয়তো ফেরার ইচ্ছা থাকলেও চাইলে পারবো না। ক্ষমা করে দিয়ো তোমাদের সন্তানকে। এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। সবাইকে ছেড়ে থাকাটা অনেক অনেক বেশি কষ্টের। অনেক বেশি ভুল করে ফেলেছি। ইসস যদি আর একটু সময় পেতাম। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। ভালো থেক সবাই।
দূর থেকে দেখবো সবাইকে। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো। ক্ষমা করে দেবেন এই বাজে ছেলেটাকে। আমি নাকি খারাপ, হুম মানলাম। বাট হয়তো এমন কাউকে পাবেন না যে প্রমাণ করতে পারবে আমি খারাপ। কারণ আমি আজ অবধি এমন কোনো কাজ করিনি যে প্রমাণ করতে পারবেন।
ছোটবেলা থেকে আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তার দেখানো পথেই চলে আসছি আজ অবধি। চাকরি বা বিয়ে কোনোটাই করিনি ছাত্রলীগ করবো বলে। বাট আজ দলও টাকার কাছে জিম্মি। আমার জীবনে আর কি বাকি আছে, হয়তো বেঁচে থাকতাম দু-মুঠো ভাতের জন্যে। কিন্তু যখন অসহায় মানুষগুলো কাঁদে আমি তাদের কান্না সহ্য করতে পারি না। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুও পারেননি। তাই তো সে নিজের জীবন দিছে, তবুও হার মানেনি, লড়াই করে গেছে অন্যায়ের বিপক্ষে সারাজীবন।
আমিও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারিনি তাই আমি খারাপ। আমার জীবনে আজ অবধি যত খারাপ সময় তার সবকিছু এই রাজনীতির জন্য। ভবিষ্যতের কথা ভাবিনি কখনও। আজ জীবনের এই শেষ সময় কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছাত্রলীগের নেশাটাই আমাকে শেষ করে দিল। হারিয়েছি সব- ঘর, পরিবার, ভালোবাসার মানুষ, কাছের মানুষ সব সব কিছু হারিয়েছি এই রাজনীতির জন্য। তাই চলে গেলাম এই নিষ্ঠুর স্বার্থের পৃথিবী থেকে। ক্ষমা করে দেবেন আমাকে।’

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
