প্রতিমা বিসর্জনে শেষ দুর্গাপূজা
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
দুপুরের
সোমবার দুপুরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যার পর রাতের মধ্যেই। করোনা সংক্রমণের কারণে এবার প্রচলিত শারদীয় ‘দুর্গোৎসব’কে শুধু ‘দুর্গাপূজা’র মধ্যেই সীমিত রাখেন আয়োজকরা।
বেলা দেড়টার দিকে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন মন্ডপ থেকে বিসর্জনের জন্য ঘাটে প্রতিমা আসতে থাকে। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনা গানের মধ্য দিয়ে বিজয়া দশমীর সীমিত শোভাযাত্রায় অংশ নেন ভক্তরা। করোনা সংক্রমণজনিত বিধিনিষেধের কারণে শোভাযাত্রায় ভক্তদের সংখ্যা ছিল অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। ঢাকার ওয়াইজঘাট ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা ঘাটে নেওয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতি করেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়।
চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় দুর্গাপূজা। এবার দেবী এসেছেন দোলায় চড়ে, ফিরে গেছেন গজে (হাতি) চড়ে।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে এ বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা থাকায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। করোনার কারণে এবার হয়নি বিসর্জনের বড় শোভাযাত্রা। হয়নি সিঁদুর খেলা।
পূজা উপলক্ষে আগে থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধও জারি করা হয়। মন্ডপে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও প্রতিদিন সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় পূজামন্ডপ। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। পূজার সময় বেশির ভাগ ভক্ত এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে।
দশমীর দিনে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ, প্রতিমা-নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হয়। দর্পণ বিসর্জনের পর দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরলেন।
পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের প দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এ জন্যই বিজয়া। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলিও। তবে করোনার কারণে এবার এসব আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। বিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল সোমবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবার সরাসরি টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থার কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভক্তদের বাসায় বসেও অঞ্জলি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবার অনেক ভক্তই বাসায় বসে প্রতিদিন পূজার অঞ্জলি গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, এ বছর সারা দেশে ৩০ হাজার ২২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হয়। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজামন্ডপের সংখ্যা ছিল ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩৭টি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)