বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না: ডা. শফিকুর


জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশটা কেউ কেউ পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলছে, যার কারণে বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। সেই মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। আমরা মৌলিক সংস্কার করে ছাড়ব এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।
শুক্রবার বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটির আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জনসভায় তিনি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় বুধবার রাতে দলের দুজন আসামিকে ছিনিয়ে নিতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের থানা পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা, ভাঙচুর, পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে ‘পাটগ্রামের’ কথা স্মরণ করিয়ে দেন ডা. শফিকুর রহমান।
দেশবাসীকে সতর্ক বার্তা জানিয়ে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা শুনতে পাচ্ছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই। কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের মতো স্বপ্ন দেখে থাকেন। তাহলে বলতে চাই, মহান আল্লাহর সাহায্যে আমরা সেই স্বপ্নকে দু:স্বপ্ন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এমন কিছু বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। দেশে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলবে না, কালো টাকার খেলা চলবে না। প্রশাসনের ক্যু চলবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় কেউ যেন অপকর্ম করতে না পারে। এজন্য আমরা সজাগ রয়েছি। জনগণের ভোটে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে তাদের স্বাগত জানাতে এখন থেকেই আমরা প্রস্তুত। আমরা আরও বলতে চাই, হাসিনার হাতে সব বাহিনী ছিল। জনবিস্ফোরণের কারণে ক্ষমতা আটকাতে পারেনি তারা। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদের নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের জয় নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ, কারণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা কোনো মস্তানতন্ত্র বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণের ইচ্ছা পূরণের জন্য রাজনীতি করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমাদের এই রাজনীতিতে আসা।
তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে যারা মায়া কান্না করেছে, তারাই সংখ্যালঘুদের সম্পদ লুট করেছে। আমরা দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানি না। এ দেশের মাটিতে যারাই জন্ম গ্রহণ করবে, তারাই এদেশের সম্মানিত নাগরিক। আমরা কথা দিচ্ছি, সংবিধান অনুযায়ী আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াবো। ওরা মালিক হয়েছিলো জনগণের। আমরা জনগণের সেবক হব ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মদিনার ছায়ার আলো এই বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই। শরিয়ার কথা শুনলে অনেকে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কেননা তারা ঘুস দুর্নীতি করতে পারব না, যা ইচ্ছে তা করতে পারবে না, পর নারীর ইজ্জত লুট করলে তাদের জীবন থাকবে না, চুরি করলে তার হাত থাকবে না। এমন মদিনার ছায়া আমরা এ দেশে দেখতে চাই।
‘মব কালচার’ প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, দেশে ‘মব কালচার’ নতুন না। ৭২ সাল থেকেই দেশে ‘মব কালচার’ চলছে। ৭২ সালে মায়ের স্তন কেটে উল্লাস করেছে, এমন কুলাঙ্গার বাংলাদেশে আছে। সে নারী যেই হোক, সে আমার মা, সেই নারী আমার বোন, আমার মেয়ে। তার স্তন কাটার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ মারা হয়েছে। সেগুলো কি ‘মব কালচার’ ছিল না। সেগুলো ‘মব কালচার’ ছিল। তবে মব কালচারকে সমর্থন করার সুযোগ নেই আমাদের। কোন নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না। দেশের সরকার ও বিচার বিভাগ বিচার তা করবে। সেই আইন দেশের সংবিধানে রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আবু সাঈদ বিশাল আন্দোলনের ‘আইকনিক পারসন’ ছিলেন। তিনি রংপুরের গর্ব। ২৪ জুলাইয়ে যারা নিহত হয়েছে, যারা আহত হয়েছে। আহতদের এখনো সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এসবের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, এ দেশের মানুষে তাদের বিচার দেখতে চায়। যদি বিচার না হয়, তাহলে ন্যায় বিচারের সংস্কৃতির অভাবে, বাংলাদেশ জঙ্গলে পরিণত হবে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলি, অতিতে যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিষয়টা রাষ্ট্র দেখবেন। এখন আপনারা যারা দায়িত্বে রয়েছেন, আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। জনগণ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাদের শক্তি জোগাবে ইনশাআল্লাহ। আমরাও আপনাদের পাশে থাকব; কিন্তু অন্যায় দেখলে আমরা সবার আগে প্রতিবাদ করব। অতএব অন্যায়কারীর পক্ষ নিবেন না। জনগণের বিপক্ষে যাবেন না। জনগণের বিপক্ষে গেলে কি পরিণতি হয় সেটা ২০২৪ সালে দেখেছেন।
দীর্ঘ ১৭ পর রংপুরে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম।
জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরের আমির এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, শহিদ আবু সাঈদের বাবা ও বড়ভাই রমজান আলীসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
এর আগে সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। দূর-দূরান্ত থেকে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে জনসভায় জড়ো হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মাঠেই দুটি জামায়াতের মাধ্যমে জুমার নামাজ আদায় করেন তারা। এছাড়াও রংপুর নগরীর বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে জনসভা মাঠে প্রবেশ করেন তারা।
জনসমাবেশস্থল ছাড়াও ডিসির মোড়, কাছারি বাজার, আরডিআরএস মোড়সহ বিভিন্ন সড়কে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কখনো রোদ, কখনো ছায়া, এই রোদছায়ার লুকোচুরি আবহাওয়ার মাঝেই মাঠে বক্তব্য শোনেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।
বক্তব্যের শেষে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সমাবেশস্থল। সেই সঙ্গে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ছেয়ে যায় পুরো মাঠ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের পরেই নির্বাচন: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যারা গণহত্যা করেছে, আমরাবিস্তারিত পড়ুন

যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে তারাই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চায়: সালাহউদ্দিন
নির্বাচনে প্রার্থী হলে যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে তারাই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চায়বিস্তারিত পড়ুন

‘সাকিব অবৈধ সরকারের এমপি, তা ভুলে গেলে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি হবে’
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্য ছিলেন সাকিব আল হাসান। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেবিস্তারিত পড়ুন