লাভজনক সত্বেও শার্শায় খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহে আগ্রহ নেই চাষীদের
বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের শার্শা উপজেলায় খেজুরের রস ও গুড়ের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্বেও রস ও খেজুর গুড় সংগ্রহে আগ্রহ নেই সাধারণ গাছীদের। যে কারনে বিলুপ্ত হতে চলেছে খেজুর গাছ। অথচ এককালে শার্শা উপজেলার উৎপাদিত খেজুর গুড় বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। চাহিদাও ছিলো প্রচুর। বর্তমানে খেজুরের রস ও গুড় লাভজনক হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা সত্বেও চাষীরা খেজুর গুড় উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। তারা খেজুর গাছ রক্ষনা বেক্ষনেও উদাসীন।
সত্তুর আশির দশকেও উপজেলায় বাড়ি বাড়ি খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদন করা হতো। প্রতিটি বাড়িতে খেজুরের রস জালানো হাড়ি ও বড়ো বড়ো চুলা থাকতো গুড় তৈরির জন্য। এক সময় ইটভাটায় খেজুর গাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় সে সময় অনেকেই খেজুর গাছ বিক্রী করে দেয়। নতুন করে খেজুরের চারা না লাগানোর ফলে খেজুর গাছের সংকট দেখা দেয়। একারনে অনেকেই গাছির পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যায়।
শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের গাছি খলিলুর রহমান জানান, আগে প্রত্যেক বাড়িতে খেজুরের গুড় বানানো হতো। তখন সকলেই গাছ কাটতো। এখন এ গ্রামে মাত্র ৮ জন গাছি রয়েছেন। আগে প্রায় ৩শ’র মতো গাছি ছিলো। এখন গাছিরা অন্যের খেজুর গাছ ভাগে নিয়ে রস ও গুড় তৈরী করেন। আগেকার দিনে সকলেই নিজেদের গাছ নিজেরাই করতেন। এখনকার দিনে এক ভাড় রসের দাম ৩০০ টাকা এবং এক কেজি নলেন গুড়ের পাটালির দাম ৭/৮ শ’ টাকা। তবুও তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারেন না। তিনি আরো জানান, একটা খেজুর গাছ তোলা খরচ পড়ে ৭০ টাকা এবং প্রতিটি গাছ কাটতে পারিশ্রমিক দিতে হয় ২০ টাকা। রস নিজেরা পেড়ে নিতে হয়। এসব কারনে অনেকের খেজুর গাছ থাকলেও তারা নিজেরা গাছ না করে প্রয়োজনে রস ও গুড় কিনে খান। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে রসের উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। শীত বেশী পড়লে রসও বেশী হয় বলে তিনি জানান।
অপর গাছি জুলফিকার আলি বলেন, খেজুর গাছে এখন অনেক লাভ। আগে ১০ টাকায় ১ ভাড় রস বিক্রী হতো, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ টাকায়। ১ কেজি গুড়ের দাম ছিলো ৩০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫/৭ শ’ টাকা। বর্তমানে একটা গাছে এক মৌসুমে ৩ হাজার টাকার রস ও গুড় পাওয়া যায়। একশ’টা খেজুর গাছ থাকলে ৩ লাখ টাকারও বেশী আয় হয়। খেজুর গাছে জমির অন্য ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না, জমিরও ক্ষতি হয় না । ফসলী জমির চারি পাশে খেজুর গাছ লাগিয়ে বাড়তি উপার্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, আগের মতো সবাই আগ্রহী হলে এলাকায় রস ও গুড়ের চাহিদা মিটিয়েও এলাকার বাইরে রপ্তানি করা সহজ হবে এবং জেলার ঐতিহ্য ফিরে আসবে।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, গ্রাম-বাংলা তথা যশোরের ঐতিহ্য রক্ষা করতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও জমির আইলে কয়েকশত খেজুর গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ পেশার সঙ্গে জড়িত গাছিদের নিয়ে সমাবেশ করে তাদের রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের পাশাপাশি বিপননের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)