সাতক্ষীরায় নিজ দক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশে চাকরি পেলো ৭৬ জন
নিজ যোগ্যতায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজেরা কাদলেন, অন্যদেরও কাঁদালেন। এই ক্রন্দন যতটা না আনন্দের, ঠিক ততটাই নিজের যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে না দেওয়ার। ঘুষ ছাড়া শুধু মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতায় পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দরিদ্র, শ্রমজীবী ও কৃষক পরিবারের এসব প্রার্থী।
গতকাল বুধবার(১৫ মার্চ) দিনগত রাত ১১টায় সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে পুলিশের ‘ট্রেনিংরিক্রুট(কনস্টেবল)’ পদে উত্তীর্নদের তালিকা প্রকাশ করে নিয়োগ বোর্ড। এতে মোট ৭৬টি পদের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ২১৫০ জন অনলাইনে আবেদন করেন। ফিটনেস টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা এরপর ভাইভা। তিনটি ধাপ শেষে গতকাল এই ফলাফল প্রকাশ করাহয়।
ফলাফল প্রকাশের সময় নিজের নামটি শুনতে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ওঠেন বেশকিছু প্রার্থী। শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থী ও তাদের অভিভাবক অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে পরেন। তাৎক্ষণিক তারা শুধু মাত্র সরকারি ফি ১২০ টাকায় শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানান।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান, বাগেরহাট থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান, খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান সহ সাতক্ষীরা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগন।
পুলিশ নিয়োগের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী জাহিদ হাসান সাংবাদিকদের সাথে তার অনূভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ছোটবেলায় তার বাবা তাকে রেখে নিরুদ্দেশ হন। এরপর তার মা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। অত্যন্ত কষ্টে অনাহারে, স্বল্পাহারে দিন কেটেছে তাদের। পুলিশের চাকরি পেয়ে তার সেই দুঃখ ঘুচে গেছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত জাকিয়া সুলতানা জানান, তার বাবা একজন কৃষক। তারা দুই ভাই-বোন পুলিশ কনস্টেবলপদে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে খুশি।
পেশায় দিনমজুরের ছেলে সামছুজ্জামানও নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
কৃষকের মেয়ে সাজু চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জানান, দেশসেবাই তার একমাত্র কাজ হবে। গরিবের জন্য কাজ করতে চান তিনি।
চা দোকানির মেয়ে খুরশিদা খাতুন ঘুষ ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না জেনেও লাইনে দাঁড়িয়ে চাকরি পেয়ে আনান্দে কেঁদে ফেলেন। ১২০ টাকায় যে চাকরি হয় তিনি নিজে তার সাক্ষী। তখন পাশে দাঁড়ানো বাবা বারবার চোখের পানি মুছতে থাকেন।
পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি জানান, ঘুষ ছাড়া যে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায়, পুলিশ সুপার তা প্রমাণ করেছেন। আর ঘুষ ছাড়া মেয়ে চাকরি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান খুরশিদার বাবা।
ফলাফল প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, চাকরি নয়, সেবা’—এই শ্লোগানে সাতক্ষীরা জেলায় নিয়োগ যোগ্য শূন্য পদের বিপরীতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ, ডিসেম্বর ২০২২ এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতায়, চাকরি পাবে নিজ যোগ্যতায়’, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। এসময় তিনি চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব সাথে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার আহবান জানান।
উল্লেখ্য যে, প্রাথমিকভাবে ২১৫০ জন অনলাইনে আবেদন করেন। এর মধ্যে PET (Physical Examination Test) এ উত্তীর্ণ হয়ে ৯৪৬ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, লিখিত পরীক্ষায় ২৫৭ জন উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভায় অংশগ্রহণ করেন এবং তন্মধ্যে চূড়ান্তভাবে ৭৬ জনকে মনোনীত করে সাতক্ষীরা জেলা টিআরসি নিয়োগ বোর্ড।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)