‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন’ বলার ১৪ দিন পর সিইসির দুঃখ প্রকাশ
গত ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওমর হামলা হওয়ায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে, বলা যাবে কি-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? তার এই বক্তব্যের পর নানা মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়েন কমিশন প্রধান।
অবশেষে ১৪ দিনের মাথায় এসে নিজের বক্তব্যে কারণেই দুঃখ প্রকাশ করলেন তিনি। তবে আবারও অভিযোগের তীর গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশ করে সিইসি বলেন, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলমের সোমবার (২৬ জুন) স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিইসির দুঃখ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, গত ১২ জুন বরিশাল সিটি সাধারণ নির্বাচন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আনুমানিক বিকেল ৫টা সময় উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করার সময় ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ দলের পক্ষে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হতে বর্ণিত প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ওই বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করছেন মর্মে নির্বাচন কমিশনের নজরে এসেছে।
প্রকৃত বিষয় হলো বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্ণিত প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। নির্বাচন কমিশনের উক্ত নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ১৪ জুন ২০২৩ তারিখে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। ওই প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে (১) মো. মঈনুল ইসলাম স্বপন ও (২) মো. জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে শনাক্তকরণসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে এবং উক্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এবং কোনো রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের সুনাম ও সম্মানের হানি ঘটে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদ ও বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত। উক্তরূপ অসত্য সংবাদ ও বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো মন্তব্য/বক্তব্যে কোনো ব্যক্তি মর্মাহত হলে তিনি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে যে, রাজনৈতিক নেতা ও গণমাধ্যম কর্মীরা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত যেকোনো বক্তব্য ও সংবাদ প্রদান ও প্রচার করবেন এবং বর্ণিত অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত মন্তব্য ও সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হতে বিরত থাকবেন।
এর আগে ২০২২ সালে একটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ‘নির্বাচনে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে হবে’-এমন বক্তব্য দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন সিইসি। ওই বছর ১৯ জুলাই তিনি বলেছিলেন, আমরা কখনো কখনো ভুল করে ফেলি। এজন্য আমি অনুতপ্ত।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)