গত ১৫ বছরে দানবের মতো শাসন আর জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে: মির্জা ফখরুল
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বেনজীর…বলা হচ্ছে নজিরবিহীন দুর্নীতি। একই সঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান (আজিজ আহমেদ), তাকে স্যাংশন দিয়ে দিয়েছে। আরেকজন তথাকথিত এমপি তাকে কলকাতা নিয়ে টুকুরো টুকুরো করে বটি বটি করেছে… এই তো হচ্ছে চেহারা।’
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সোমবার দুপুরে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
‘দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ঘরের শান্তি কেড়ে নিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন সেনা বাহিনীর অবস্থা কি? একটা ইনস্টিটিউশন হিসেবে তার সম্মান-ইজ্জত কোথায় থাকে, যখন তার সাবেক প্রধানকে স্যাংশন দেয়! সেই পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা কোথায় থাকে, যার সাবেক প্রধান ও র্যাবের সাবেক ডিজিকে পালিয়ে যেতে হয় দেশ থেকে… কার সম্মান কোথায় থাকে। আজকে এরা (সরকার) দেশটাকে এভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (সরকার) গত ১৫ বছরে একটা দানবের মতো শাসন দিয়ে শুধু দেশের রাজনীতিকেই ধ্বংস করেনি, অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে ফেলেছে। তার প্রমাণ দেখেন… আপনারা আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন। জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, কেমন লাগে বলেন? ঘরে শান্তি আছে? নাই।’
‘গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম, সবজির দাম, চালের দাম…. অবিশ্বাস্য! খাওয়া-দাওয়া করা যায় না, বাচ্চাদের ঠিক মতো ডিম দেওয়া যায় না, দুধ দেওয়া যায় না। গরুর মাংস ৮শ টাকা, লাউয়ের দাম ১২০ টাকা…. এই হলো অবস্থা।’
দেশে পণ্যসামগ্রীর দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি- সিপিডির গবেষণার তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিপিডির এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে আজকে জিনিসপত্রের দাম এতো বেড়েছে যে, সেটা ধনীদের জন্যও কঠিন মনে হয়। গরুর গোস্ত তো কিনতে পারেন না, ইলিশ মাছের তো প্রশ্নই ওঠে না! এমনকি ভালো সবজিও কেউ কেনেন না, কারণ দাম বেশি।’
প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও বাংলাদেশে সবকিছুর দাম ঢের বেশি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন সয়াবিন তেল বলেন, পাম ওয়েল বলেন… সব কিছুর দাম ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম থেকে বেশি। আমরা সাধারণ মানুষ এখন এক কঠিন সময় পার করছি…এই সময়টা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যারা গত ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে, পুলিশ, বিজিবি, প্রশাসনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’
এসময় মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা সবাইকে এসব কথা জানান, চুপ করে থাকবেন না, ঘর থেকে বের হন, আওয়াজ তোলেন। সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা শুধু বিএনপির দায়িত্ব না… সব মানুষকেই তার আত্মরক্ষার্থে কথা বলতে হবে। আবার শুধু বের হলেই তো হবে না। আমাদের নারীদের বের করে আনতে হবে, মানুষকে বের করতে হবে, সকল মানুষ যখন বেরিয়ে আসবে, তখনই বিপ্লব হবে… সেটা আমাদের করতে হবে। আমরা শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না।’
সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এখন সময় এসেছে নিজেদের সংগঠিত করার। আমরা চেষ্টা করছি, নির্যাতিত হচ্ছি, জেল খাটছি, আমাদের মা-বোনেরা বার বার জেলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারিনি। এই চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য আমাদের সংগঠনকে আরও দৃঢ় করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো ভুল-ত্রুটি যেগুলো আছে সেগুলো দূর করে ফেলতে হবে। সবাই মিলে একজোট হয়ে নামতে হবে।’
প্রবীন এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘এটা বিএনপির সমস্যা না, এটা বাংলাদেশের সমস্যা, জাতির সমস্যা… এই জাতি ভবিষ্যতে টিকবে কি টিকবে না, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে কি পাবে না, স্বাধীনভাবে চলতে পারবে কি পারবে না- তার পুরোটা নির্ভর করছে এই সরকারকে আপনি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করতে পারবেন, কি পারবেন না তার ওপর। নির্বাচন করতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে, সেজন্যই আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি।’
কিন্তু সেই নির্বাচন কোথায়- প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে তারা (সরকার) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে। এই সরকার তার অধীনে তিনটা তিনটা নির্বাচন পার করেছে। এই তিনটা নির্বাচনেই প্রহসন হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘গতকাল (রোববার) সিইসি বলছেন, এভাবে বৈরি রাজনৈতিক পরিবেশে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাতে কোনো দলই তো নির্বাচনে আসে না। ৬৩টা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যায়নি। তাহলে নির্বাচন হচ্ছে কোথায়? সে কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে।’
সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগ ১০টা আসনও পাবে না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট দিলে উনারা ১০টা আসনও পাবে না। আমি বার বার বলি, তাদেরকেও বলছি, সাহস থাকে তো আসেন নির্বাচন করেন, যেখানে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে- কার কত জনপ্রিয়তা বুঝা যাবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক শাহিদা রফিক, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, পেয়ারা মোস্তফা, এলিজা জামান, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবা ইউসুফ, দক্ষিণের রুমা আখতার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)