মাধ্যমিকের আগেই বাল্যবিয়ের হিড়িক
কলারোয়ায় এক গ্রামে ৫ বছরে ২০টি বাল্যবিয়ে!
মোস্তফা হোসেন বাবলু, কলারোয়া: সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাল্য বিয়ে যেনো জেকে বসেছে। একটি গ্রামের পাশাপাশ মহল্লা বা পাড়ায় গত ৫ বছরে ২০টি বাল্য বিয়ে সংঘটিত হয়েছে।
উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাবাড়িয়া ওয়ার্ডের এক এলাকায় এ দৃশ্যপট উঠে এসেছে।
সুত্র মতে, প্রেমঘটিত সম্পর্ক, দরিদ্রতা, অসচেতনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মৌন সমর্থনেও বাল্য বিয়ে সংঘটিত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।
সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিকা ইসলাম (১৪) পালিয়ে বিয়ে করার বিষয় অনুসন্ধান করতে যেয়ে বাল্য বিয়ের বিস্ময়কর এ তথ্য বের হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, দক্ষিণ সোনাবাড়িয়া গ্রামের কোম্পানী পুকুরের পাশে তাদের পাড়ার জনসংখ্যা আনুমানিক দুইশোর মতো। এই পাড়ায় ভ্যানচালক আনারুলের কন্যা শারমিনের ৭ম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায়।
পাশেই স্কুল পড়–য়া শওকতের কন্যা লতা, নূর ইসলামের কন্যা আয়শা, মৃত আলী হোসেনের কন্যা বৃষ্টি খাতুন, আবুল হোসেনের কন্যা শারমিন ও সাবিনা, রমজানের কন্যা তনু, ইসমাইলের পুত্র সাগর ও কন্যা লিতুনজিরা, মনিরুলের নাতনী চম্পা খাতুন ও মিন্টুর কন্যা মুন্নি খাতুনের বাল্যবিয়ে হয়েছে।
এছাড়াও আরশাদ আলী খোকার পুত্র নাজিম, আলমগীরের পুত্র হাবিব, ইয়াকুবের পুত্র এনামুল, খালেকের পুত্র নাঈম, রমজানের পুত্র সাকিব, সামাদ ঢালীর পুত্র সুমনের বিয়ে হয়েছে মাধ্যমিকের আগেই। আর আফতাবের পৌত্র নাজমুল নাবালিকা মেয়ে বিয়ে করেছে।
তারা আরো জানান, এদের অনেকের ১/২টা বাচ্চা হয়ে গেছে।
আবার এই সময়কালে বউয়ের সামনে পিটুনি খেয়ে আরাফ আলীর পুত্র নাবালক ইমরান (১৪) আগাছানাশক বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে।
এদের মধ্যে লতা আর বৃষ্টির মাধ্যমিক পাশের আগেই বিয়ে হয়েছিলো মূলত অর্থনৈতিক সমস্যা আর সামাজিক অবক্ষয়ের পরিবেশগত কারণে। বাকি সবার বিয়ে হয়েছে প্রেমের সম্পর্কের কারণে।
লতার পিতা শওকত জানান, দরিদ্রতার কারণে মেয়েকে পড়ালেখা করানো দুষ্কর হয়ে গিয়েছিলো। এজন্য দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
একই কথা জানান বৃষ্টির মামা। বৃষ্টির পিতা মারা গেছেন। তার মামা জানান, দরিদ্রতা আর পারিপার্শ্বিক সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে ভাগ্নেকে দ্রæত বিয়ে দেয়া হয়েছে।
আনিকার পিতা আনারুল ইসলামকে সেলফোনে কল দেয়া হলে তিনি জানান, ‘তার কন্যা অষ্টম শ্রেণীতে পড়তো। বিশেষ কারণে এখন ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে।’
মেয়ের বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।
তবে এর কিছুক্ষণ পরেই আনারুলের উদ্ধৃতি দিয়ে সোনাবাড়িয়া সোনারবাংলা কলেজের প্রভাষক পরিচয়দানকারী জনৈক আলম সেলফোনে বলেন, আনিকার বিয়ে-টিয়ে হয়নি। একটা সমস্যার কারণে ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে।
মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুনোর আগেই বিয়ে করা অন্য কয়েকজনের অভিভাবক, স্বজন বা আত্মীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, একটা ঘটনা ঘটে গেছে, এর বাইরে কিছু বলতে চায় না। যা হয়ে গেছে, গেছে। বিব্রত না করাই ভালো।
এ ব্যাপারে কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড দক্ষিন সোনাবাড়িয়ার ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এদের বেশিরভাগই অজান্তে কোর্ট থেকে তারা বিয়ে করে এসেছে।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির হোসেন হেলাল বলেন, বেশিরভাগই প্রেমঘটিত ও দরিদ্রতার কারণে এমনটা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বাল্যবিয়ে রোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করছে ইউনিয়ন পরিষদ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)