ভারত কখনো চায়নি বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক: মিয়া গোলাম পরওয়ার
ভারত কখনো চায়নি বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও ভারত বন্ধুত্বের পরিচয় দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে শুকনো মৌসুমে পানি বন্ধ করে রাখা আর বর্ষায় পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যার সৃষ্টি করা, সীমান্তে বাংলাদেশিদের পশুর মতো হত্যা করা কখনো বন্ধু রাষ্ট্রের ভূমিকা হতে পারে না। আমরা ভারতকে রাষ্ট্র হিসেবে কখনো আমাদের শত্রু মনে করি না। ভারতের শাসক গোষ্ঠী আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বারবার আঘাতের চেষ্টা করছে এবং আমাদের সঙ্গে শত্রুর মত আচরণ করে আসছে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, যাদের সাহায্যে আমরা স্বাধীন হয়েছি বলে প্রচার করা হয়, তারা মূলত দুটি কারণে সহযোগিতা করেছে। প্রথমত, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের কাছে ভারতের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবার জন্যই তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে অস্ত্র দিয়ে, সৈন্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। দ্বিতীয়ত, চতুর্দিকে ভারত আর পেটের মধ্যে বাংলাদেশ। এই ভূমি পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে পারলে, ভারত নিজের অঙ্গরাজ্যের মতো করে ব্যবহার করতে পারবে। এ দুটি কারণেই তারা বন্ধু সেজেছে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ১৪ ডিসেম্বর তারা বেছে বেছে জাতির সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছে সেটি জাতির সামনে এখনো প্রকাশিত করা হয়নি। এখনো সময় আছে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী জহির রায়হান একটি ডকুমেন্টারি তৈরির কাজ শুরু করছিলেন। হঠাৎ করে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। আজ পর্যন্ত তার কিংবা তার ডকুমেন্টারির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য জহির রায়হানের ডকুমেন্টারি উদ্ধারের প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী দক্ষিণের নায়েব আমির আব্দুস সবুর ফকির।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মু. দেলোয়ার হোসেন, মো. কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক নূর নবী মানিক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম, কামরুল আহসান হাসান, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বিজয়ের একদিন আগে বেছে বেছে সাংবাদিক, শিল্পী, গবেষক, শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলো কারা? এটি স্পষ্ট আধিপত্যবাদীরাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ রহস্য উদঘাটন করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য।
আধিপত্যবাদী শক্তি এজন্য মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা, আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, গোলাম আযম, বিএনপি নেতা সালা উদ্দিন কাদের চৌধুরী, হেফাজতে ইসলামীর আলেম-ওলামা সহ এ দেশের গুণীজনদের হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ আমাদের ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বর্গা দিয়েছিল।
৫ আগস্ট এ দেশের ছাত্র-জনতা আমাদের স্বাধীনতা ফ্যাসিবাদদের হাত থেকে মুক্ত করে এনেছে। তবে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা একটার পর একটা ষড়যন্ত্র করে জনগণের অর্জিত বিপ্লব ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এজন্য জনগণকে সজাগ ও সর্তক থাকতে হবে। আধিপাত্যবাদের দোসর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করতে ভারতে বসে এখনো ষড়যন্ত্র করছে।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ একের পর এক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছিল। পল্টন ময়দানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ করার পর থেকে ভারতের নিদের্শে স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিঃশেষ করার মিশন শুরু করে আওয়ামী লীগ। তারা গত ১৫ বছরে যখন যাকে বাঁধা মনে করেছে তাকেই শেষ করেছে। ভারতের মদদে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা চালিয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সকল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিচার বাংলার জমিনে হবেই হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, স্বাধীনতার মাত্র একদিন আগে স্বাধীন দেশ যাদের নেতৃত্বে সমৃদ্ধ হবে খুঁজে খুঁজে সেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। যারা বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশপ্রেমিক মেধাবী সেনা সদস্যদের হত্যা করেছে, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে, হেফাজতে ইসলামের তরুণ হাফেজদের হত্যা করেছে, ছাত্র-শিবিরের অসংখ্য মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করেছে, গুম করেছে তারাই আধিপাত্যবাদের মদদে বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে করে ভারতের মিশন বাস্তবায়নে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। পতিত স্বৈরাচার সরকার দেশ পরিচালনার কাজ থেকে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, দেশপ্রেমিক যেসকল অফিসারদের বঞ্চিত করেছে তাদেরকে স্বপদে ফিরিয়ে এনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে ড. মাসুদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করুন। নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে দেশপ্রেমিক অফিসার প্রয়োজন
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)