তালায় জীবন সংগ্রামে সফল পাঁচ নারীর আত্মকথা
![](https://kalaroanews.com/wp-content/uploads/2025/02/0-2.jpg)
![](https://kalaroanews.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
সেলিম হায়দার, তালা (সাতক্ষীরা): সমাজ ও পরিবারের নানা বাঁধা কাটিয়ে জীবন সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করেছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৫ নারী। নানা বাঁধা বিপত্তিকে পায়ে মাড়িয়ে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব নারীদের খুঁজে বের করে ২০২৪-২৫ সনের জয়ীতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় ৫টি ক্যাটাগরীতে সম্মাননা দিয়েছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। এ সকল নারীদের প্রত্যেকের জীবনে রয়েছে অসীম আত্মশক্তি ও সংগ্রামের আলাদা আলাদা জীবন কাহিনী। তাদের সেই সংগ্রামী জীবনের কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো:
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী সকিনা বেগম:
জীবন সংগ্রামে দারিদ্রতাকে পিছনে ফেলে সাফল্য অর্জন করেছেন সকিনা বেগম। তিনি তালা উপজেলার আমড়াডাংগা গ্রামের মৃত আমের আলী শেখের স্ত্রী। খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা গ্রামে জন্ম সকিনা শিশু বেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে দাদীর কাছে বেড়ে ওঠেন। দাদী অন্যের বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে এনে সকিনাকে খাওয়াতেন। নাবালক বয়সেই সকিনার বিয়ে হয়। স্বামীর তখন কিছুই ছিল না। কয়েক বছর আগে স্বামীও মারা যায়। তিনি নিজ উদ্যোগে ৬ সন্তানের লেখাপড়া করিয়েছেন। বর্তমানে তার বড় মেয়ে প্রাথমিকের শিক্ষক, মেজ মেয়ে ঢাকা মেডিক্যালের নার্স এবং ছোট ছেলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। তার বড় ছেলের বৌ বিপুল ভোটের ব্যবধানে জালালপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে সকিনা বেগমের প্রায় দশ বিঘা সম্পত্তির পাশাপাশি ১০ টি ছাগল ও ১০ টি গরু রয়েছে। এক সময়ে অর্ধাহারে থাকা সকিনা বেগম বর্তমানে ছেলে-মেয়ে ও স্বজনদের নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছেন।
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে সফল নারী জাহানারা খাতুন:
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী জাহানারা খাতুন। তিনি উপজেলার কুমিরা গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। ২০০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য তিনি ঘর থেকে বের হন। একটি বে-সরকারী সংস্থায় কাজ করার পাশাপাশি নিজের পড়ালেখাও শেষ করেন তিনি। বর্তমানে শুধু আর্থিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন চাকুরী করে ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি।
সফল জননী কুলসুম বেগম:
সফল জননী নারী হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কুলসুম বেগম। তিনি তালা উপজেলার বাগমারা গ্রামের তমেজ উদ্দীন কাগুজীর স্ত্রী। স্বামী দরিদ্র কৃষক থাকায় তিন বেলা ভাত জোটেনি তাদের সংসারে। তবুও প্রবল ইচ্ছে শক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ৮ সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন তিনি। বর্তমানে তার ৬ সন্তান সরকারি ও বে-সরকারী চাকুরিজীবী, একজন ব্যবসায়ী এবং ছোট কন্যা জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। কুলসুম বেগমের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এই সাফল্য। সফল জননী এ নারী বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন।
নির্যাতিতা থেকে উদ্যোমী, কর্মঠ ও স্বাবলম্বী নারী স্বর্ণলতা পাল:
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নব উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী স্বর্ণলতা পাল। তিনি তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের মানিকহার গ্রামের কানাই চন্দ্র পালের কন্যা। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা স্বর্ণলতা পালের কপাল পোড়া শুরু হয় বিয়ের পর থেকেই। যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে পাষন্ড স্বামী। এরমধ্যে তাদের ঘরে একপুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এরপরও কমেনি নির্যাতনের মাত্রা। এক পর্যায়ে তাদেরকে ফেলে স্বামী অন্য জায়গায় বিয়ে করে সেখানে সংসার করতে শুরু করে। তাদের কোন খোঁজ নিতনা। নিরুপায় হয়ে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে স্বর্ণলতা। মৃৎশিল্পের কাজ দিয়ে শুরু করে নতুন জীবন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে নতুন করে স্বপ্ন দেখে উদ্যোমী স্বর্ণলতা পাল। বর্তমানে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে সুখেই আছেন তিনি।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন ছবেদা খাতুন:
একজন নারী হয়েও জীবন সংগ্রামের মাঝে সমাজের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন ছবেদা খাতুন। তিনি উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত সামাদ সরদারের স্ত্রী। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা ছবেদার স্বামী মারা যান ১৯৯৫ সালের মে মাসে। তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে চলতো তাদের সংসার। বর্তমানে তাদের সংসারে স্বচ্ছতা ফিরে এসেছে। তবে বাল্যবিয়ে হওয়ার কারণে অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে ছবেদা খাতুনকে। তাই বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সকলকে সচেতন করার জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন। ইতিমধ্যে একাধিক বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিক রেখেছেন তিনি। বাকি জীবনও সমাজ উন্নয়নে কাজ করে যাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
![](https://kalaroanews.com/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
![](https://kalaroanews.com/wp-content/uploads/2023/09/kalaroa-homio-hall-1024x549.jpeg)