গুনাহ মাফের ফজিলতপূর্ণ ১০টি আমল


জীবনে চলার পথে শয়তানের প্ররোচনায় ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেক গুনাহ করে থাকি আমরা। এর মধ্যে কিছু বড় গুনাহ থাকে, যা তওবা ছাড়া মাফ হয় না। আবার কিছু গুনাহ এমন, যা আল্লাহ তাআলা তওবা-ইস্তিগফার ছাড়া বান্দার নেক আমলের মাধ্যমে মাফ করে দেন।
গুনাহ মাফের ফজিলতপূর্ণ ১০টি আমল –
প্রতিদিন ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পাঠ- একবার নবীজি তার প্রিয় সাহাবাদের বলেন, ‘তোমরা কি প্রতিদিন এক হাজার নেকি লাভ এবং এক হাজার গুনাহ মাফ হওয়ার আমল জানতে চাও?’ তখন এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! কোন আমল করলে এক হাজার গুনাহ মাফ এবং এক হাজার নেকি লাভ করা যাবে? তখন নবী (সা.) বলেন, ‘১০০ বার সুবহানাল্লাহ বললে এক হাজার নেকি লেখা হবে অথবা (কোনো কোনো বর্ণনা মতে) এক হাজার গুনাহ মোচন হবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৮)
নবীর ভালোবাসা- আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য রাসুল (সা.)-এর পথ অনুসরণ করা আবশ্যক। আর এই অনুসরণের মাধ্যমেই আল্লাহ ও তার নবীর ভালোবাসা পাওয়ার পাশাপাশি গুনাহ মাফের সুযোগ পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার (নবীর) অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন।’ (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
নবীর ওপর দরুদ পাঠ করা- আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করবেন। তার ১০টি গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।’ (নাসায়ি, হাদিস: ১২৯৭)
ফজর ও মাগরিব নামাজের পর নির্দিষ্ট দোয়া- এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিব নামাজের পর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদির’ ১০ বার পড়বে, এর বিনিময়ে তার আমলনামায় চারজন গোলাম আজাদ করার সওয়াব লেখা হবে, ১০ নেকি লেখা হবে, ১০ গুনাহ মাফ হবে, ১০ মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং এ কলেমা গুলো সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য শয়তান থেকে হেফাজতের কারণ হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৫১৮)
উত্তমরূপে অজু করা- আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম অজু করে তখন তার চেহারা ধোয়ার সময় পানির ফোঁটার সঙ্গে চোখের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। যখন হাত ধোয়া হয়, হাতের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। যখন পা ধোয়া হয়, পানির ফোঁটার সঙ্গে পায়ের দ্বারা কৃত গুনাহগুলো ধুয়ে যায়। এভাবে বান্দা গুনাহ থেকে একেবারে পাক-সাফ হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৪৪)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা- যে ব্যক্তি যথাসময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে তার গুনাহ মাফের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিস শরিফে চমৎকার একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবাদের সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমাদের কী মনে হয়? কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে?’ সাহাবারা জবাবে বলেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবী (সা.) তখন বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) পাপসমূহ মিটিয়ে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৬৭)
জুমার নামাজ আদায় করা- আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করল ও জুমায় এলো, এরপর মনোযোগসহ খুতবা শুনল ও চুপ থাকল। আল্লাহ তাআলা তার গত জুমা ও এই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দেবেন; আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহও মাফ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)
নামাজের জন্য মসজিদে গমন- জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়লে প্রতি কদমের বিনিময়ে গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতের নামাজ ঘরের বা বাজারের নামাজ অপেক্ষা ২৫ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ বান্দা যখন উত্তমরূপে অজু করে এবং একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তো প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গুনাহ মিটিয়ে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৭)
ফাতিহা শেষে আমিন বলা- বুখারির বর্ণনায় এসেছে, নবী (সা.) বলেছেন, ‘নামাজে ইমাম সাহেব যখন সুরা ফাতিহা শেষ করে তখন তোমরাও আমিন বলো। কেননা তখন ফেরেশতারাও আমিন বলে। ইমামও আমিন বলে। আর যার আমিন বলা ফেরেশতাদের আমিন বলার সঙ্গে মিলবে, তার আগের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৭১৮৭)
রুকু থেকে উঠে ‘রব্বানা লাকাল হামদ’ বলা- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইমাম যখন রুকু থেকে উঠে বলে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ তখন তোমরা বলো ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ’। কারণ যার তাহমিদ ফেরেশতাদের সঙ্গে মিলবে, তার আগের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস: ৭৯৬)

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
