কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ : বের হচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য


কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার পর্যটক গৃহবধূ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। শুক্রবার বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক রুহুল আমিন। এদিকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ধর্ষণে জড়িত তিন যুবককে র্যাব শনাক্ত করলেও গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তবে গ্রেফতার অভিযান চলছে বলে জানায় পুলিশ।
বুধবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার বেড়াতে এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পর্যটক গৃহবধূর। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিন যুবক। জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে ওই দিন রাত দেড়টার দিকে তাকে উদ্ধার করে র্যাব। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে
ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস কক্ষে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে (৩৩) আটক ও স্বামী-সন্তানকে উদ্ধার করে র্যাব। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে জড়িত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর দিন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই নারীর স্বামী কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা আশিকুল ইসলাম আশিক, ইসরাফিল হুদা জয়, মেহেদি হাসান বাবু নামে তিন যুবক ও হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিনজনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটি ট্যুরিস্ট পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
র্যাব ও পুলিশের তথ্যানুযায়ী অভিযুক্ত আশিক ও জয় চিহ্নিত ছিনতাইকারী। আশিকের বিরুদ্ধে ১৬টি আর জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। আশিক একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূল হোতা আশিক। তার নেতৃত্বে রয়েছে ৩০ জনের একটি অপরাধী চক্র। তারা বিভক্ত হয়ে কখনো দলবদ্ধভাবে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায়। একজন ধরা পড়লে আরেকজন এগিয়ে গিয়ে রক্ষা করে। চুরি-ছিনতাইয়ের মামলায় কয়েক মাস আগে আশিক গ্রেফতার হয়। সম্প্রতি জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তাকে গ্রেফতার করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, ধর্ষণের শিকার ওই নারী গত দুই মাসে তিনবার কক্সবাজার এসেছেন বলে দাবি করেন। তার সঙ্গে অভিযুক্তদের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, ধর্ষণের ঘটনায় এক অভিযুক্ত ওই নারীর পূর্বপরিচিত। ধর্ষণের শিকার নারীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর জুরাইনে থাকার কথা বললেও ওই দম্পতি তাদের সন্তানসহ তিন মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে থাকছিলেন। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন। ওই নারী পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। ধর্ষণের শিকার নারীর অভিযোগ- ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। সেখান থেকে বিকালে যান সৈকতের লাবণী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যান। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেন তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিনজন। এরপর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে আরেক দফা ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা। পরে ওই হোটেলের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন ওই নারী।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
